রিকশাচালকদের জন্য প্রশিক্ষক তৈরিতে ব্যয় ৫৪ লাখ টাকা
Published: 28th, June 2025 GMT
ব্যাটারিচালিত রিকশা (ই-রিকশা) চালকদের শৃঙ্খলায় আনতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রথম ধাপে ৩০০ জন প্রশিক্ষক (মাস্টার ট্রেইনার) তৈরি করা হবে। এজন্য ডিএনসিসি থেকে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
আজ শনিবার এ রিকশাচালকদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর করপোরেশনের অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে। পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদে প্রশাসকের উপস্থিতিতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু রিকশাচালকদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ আর সংঘর্ষে সেই অভিযান এগোয়নি। পরে সরকার ও রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ব্যাটারিচালিত রিকশার শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেয়।
২০২১ সালে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের অর্থায়নে ই-রিকশা তৈরিতে তাগিদ দেয় সরকার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের একটি দল এরই মধ্যে হাইড্রোলিক ব্রেক, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ই-রিকশা তৈরি করেছে।
সূত্র জানায়, এখন সড়কে যে রকম ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে, সেগুলো ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হবে। নতুন মডেলের রিকশা বানানোর জন্য চালকদের এক বছর সময় দেওয়া হবে। এ জন্য তাদের বাংলাদেশ ব্যাংক ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) ঋণ দেবে।
এরই অংশ হিসেবে নগরীতে বুয়েটের ব্যাটারি রিকশা নামানোর আগেই চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে সরকার। এর আগে প্রশিক্ষক তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য ৩০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য ১০০ জন। ২০০ জন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তালিকা থেকে। এর মধ্যে ১৭৫ জন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থী। বাকি ২৫ জন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির ট্রেইনার। আজ শনিবার প্রথম পর্যায়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পাঁচটি এলাকায় ২০০ জনের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। প্রতিটি দলে ২০ জন অংশ নিবেন। কাল রোববার ও সোমবার প্রশিক্ষণ চলবে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একক উৎস থেকে ব্র্যাক রোড সেফটি প্রোগ্রামকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রোগ্রামের ২৩ জন প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ দিবেন।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান সমকালকে বলেন, তিন দিনের প্রশিক্ষণে মাস্টার ট্রেইনারদের মূলত তারা ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন, সেগুলোই শেখানো হবে। এ-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষকদের জন্য একটি উপস্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে তারা ওইসব বিষয়ে নিজেরা প্রশিক্ষণ নেবেন। পরে রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। পাশাপাশি একজন প্রশিক্ষকের যেসব দক্ষতা ও গুণ থাকা লাগে, সেগুলোও শেখানো হবে।
তিন দিন প্রশিক্ষণের সূচি নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিন উপস্থাপনার বিষয়গুলো প্রশিক্ষকদের শেখানো হবে। দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে তৃতীয় দিন প্রায় দুপুর পর্যন্ত প্রশিক্ষক হিসেবে রিকশাচালকদের তারা যেভাবে শেখাবেন, এগুলো চর্চা করানো হবে। যাতে সবার সামনে কথা বলার দক্ষতা ও অভ্যাস তৈরি হয়। শেষদিন দুপুরের পর বুয়েটের নকশা করা ব্যাটারিচালিত রিকশার কারিগরি বিষয়ের ওপর তৈরি করা উপস্থাপনা শেখানো হবে। যাতে একজন চালক ওই রিকশা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং রিকশাটি সঠিকভাবে চালাতে পারেন।
প্রশিক্ষকদের যোগ্যতার বিষয়ে তিনি বলেন, তিন দিনের প্রশিক্ষণটা অনেক কম সময়ের। এর মধ্যে মাস্টার ট্রেইনাররা হয়তো যথেষ্ট যোগ্য হতে পারবেন না। তবে একজন প্রশিক্ষকের ন্যূনতম কিছু যোগ্যতা লাগে। সে অনুযায়ী যাতে প্রশিক্ষণ দিতে পারে, সে জন্য ন্যূনতম স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়ন করছেন কিংবা স্নাতক শেষ করেছেন– এমন শিক্ষার্থীদের নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির প্রশিক্ষকরাও এতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
রিকশার সর্বোচ্চ গতির বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে একটি খসড়া প্রবিধান করা হয়েছে। এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে সেই নীতিমালা অনুযায়ী, ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার গতিতে রিকশা চালানো যাবে। কিছু সড়কে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতি ১৫-২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এটা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
তবে চালকরা যেহেতু অলিগলিতে রিকশা চালাবেন, তাই নজরদারির মধ্যে আনা সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে জরুরি হচ্ছে, চালকদের আত্মোপলব্ধি তৈরি করা। অর্থ উপার্জনকারী হিসেবে তারা যাতে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবেন, পাশাপাশি যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, অন্য চালকের ভুলেও দুর্ঘটনা হয়, গতি থামানোর জন্য যে সময় প্রয়োজন, মোড় নেওয়া, ডানে-বামে যাওয়া।
ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রশিক্ষণের সময়ে দৈনিক ভাতা বাবদ প্রত্যেক প্রশিক্ষককে এক হাজার টাকা দেওয়া হবে। এর সঙ্গে প্রশিক্ষণ চলাকালে খাবার ও নাশতা থাকবে। কর বাদে প্রশিক্ষকেরা তিন দিনে আড়াই হাজার টাকা পাবেন।
প্রশিক্ষণে কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ, জানতে চাইলে ডিএনসিসির পরিবহন ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে ব্র্যাককে সিলেকশন করে দেওয়া হয়েছে। তারপর তাদের কোটেশন অনুযায়ী নিয়োগ করা হয়েছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম স ট র ট র ইন র চ লকদ র প ড এনস স র জন য সরক র উপস থ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে