কাশ্মীরে কেন ‘রাজকীয়’ রেলপথ বানালেন মোদি
Published: 29th, June 2025 GMT
৫ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে একটি নতুন রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
এ উপলক্ষে ভারতের বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব দৃশ্য প্রচারিত হয়েছে, তাতে দেখা যায়, ভারতের জাতীয় পতাকা উঁচু করে ধরে মোদি রেলসেতুর ওপর দিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছেন। যেন তিনি একজন বিজয়ী সেনাপতি।
এই রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ভারতীয় প্রকৌশলীরা ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ উঁচু সেতু’ সেতু নির্মাণ করেছেন। জম্মুর চেনাব নদীর তলদেশ থেকে ৩৫৯ মিটার উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি। একই সঙ্গে তাঁরা ভারতের কেব্লনির্ভর রেলসেতু নির্মাণ করেছেন। আঞ্জি খাদ সেতুটি নদীর তলদেশ থেকে ৩৩১ মিটার উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছে।
নতুন রেলপথ এবং চেনাব ও আঞ্জি নদীর ওপর নির্মিত সেতু দুটি উদ্বোধনের সময় মোদি বলেন, ‘এটা প্রমাণ করে, ভারতের উন্নয়নের স্বপ্ন যত বড়, আমাদের সংকল্পও তত দৃঢ়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই রেলপথ যেকোনো ঋতুতেই যোগাযোগ নিশ্চিত করবে’ এবং ‘আধ্যাত্মিক পর্যটনের প্রসার হবে এবং জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি করবে’।
আরও পড়ুনভারত বলছে মোদিই ভারত নয়০৯ জুন ২০২৫এই পথে চালু হওয়া ‘বন্দে ভারত’ নামে ট্রেনটি ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের উত্তর প্রান্তকে জম্মুর কাটরার সঙ্গে যুক্ত করেছে। এটিকে ‘জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণের নতুন অধ্যায়’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
কিন্তু মোদির ইঙ্গিত থেকেই স্পষ্ট—এই ট্রেন কাশ্মীরিদের জন্য নয়।
এর পরিবর্তে এই রেলপথ ভারতীয়দের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য করা হয়েছে। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের পরিবহন, অঞ্চলটিকে ভারতীয় পর্যটকে ভরে ফেলা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য সৈন্য ও রসদ সরাসরি পরিবহনের ব্যবস্থা হবে এই রেলপথ দিয়ে।
জুনের মাঝামাঝি সময়ে প্রচারিত চ্যানেল ৪-এর নতুন তথ্যচিত্র ‘ভারত কি ধীরে ধীরে কাশ্মীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ শক্ত করছে?’-তে দেখা যাচ্ছে, জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে।
যেখানে বিশ্বের দীর্ঘতম সময় ধরে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা ঘটে, যেখানে সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন করতে পারেন না, সেখানে কানেকটিভি উন্নয়নের গল্প বলে ভারতীয় রাষ্ট্র ও তাদের তোষামোদকারী সংবাদমাধ্যম যে প্রচার চালায়, সেটা চরমভাবে হাস্যকর।ধারণা করা হয়, বর্তমানে সেখানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ সেনা রয়েছে। সংখ্যাটি ভারতের মোট সেনাবাহিনীর প্রায় অর্ধেক।
কাশ্মীর নিয়ে ভারতের আকাঙ্ক্ষা এতটাই স্পষ্ট যে নতুন চালু হওয়া ট্রেনটিও গেরুয়া রঙে রাঙানো হয়েছে। এটি হিন্দু জাতীয়তাবাদ ও ভারতের শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রং।
সাধারণত ভারতের ট্রেনগুলো নীল, লাল বা সবুজ রঙের হয়ে থাকে।
এভাবেই ভারতের শাসকেরা ঔপনিবেশিক দৃষ্টান্ত থেকে ধার নিয়ে সেতু ও রেলপথকে অধিকৃত ভূখণ্ডে প্রভাব বিস্তার এবং একই সঙ্গে যোগাযোগের শক্তির ও সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা পূরণের উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে।
ইতিহাসে এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। মেক্সিকোকে আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের সময় স্পেন সেখানে সড়ক, ভবনসহ ইউরোপীয় ধাঁচের অবকাঠামো নির্মাণ করেছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা বাণিজ্য বিস্তার এবং সেনা চলাচলের ক্ষেত্রে সেতু ও রেলপথ ব্যবহারে ছিল অগ্রবর্তী।
আরও পড়ুনপাকিস্তানে হামলা করে ভারতের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হলো২৯ মে ২০২৫এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জর্ডান ও ইসরায়েলের সংযোগকারী কিং হুসেইন বা অ্যালেনবি সেতুটিও (এখন যেটি পশ্চিম তীরে প্রবেশের বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়) ব্রিটিশরা নির্মাণ করেছিল সৈন্য চলাচলের জন্য।
চোখধাঁধানো প্রদর্শনীর বাইরেও কাশ্মীরের রেল প্রকল্পে আরও কিছু দিক আছে, যেগুলো উদ্ভট। প্রকল্পটি নির্মাণের সময়েই কাশ্মীরের কৃষকেরা বারবার অভিযোগ করেছেন, প্রকল্পটি চালু হলে তাদের কৃষিজমি ও বসতবাড়ির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রেললাইন নির্মাণের জন্য কৃষিজমি ধ্বংস করা হয়েছে এবং পরিবারগুলোকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এটা নিশ্চিত যে কাশ্মীরিরা এই ট্রেন ব্যবহার করে চলাচল করবেন। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে যে ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ব্রিটিশদের ট্রেনে ভ্রমণ করেছিলেন। যদিও তিনি ভারতে ব্রিটিশ রেলব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারণের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।
আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়ংকর অস্ত্র ২৮ মে ২০২৫গান্ধী তাঁর বই হিন্দ স্বরাজ-এ লেখেন, ‘ভারতবর্ষে যদি রেললাইন না থাকত, তাহলে ইংরেজরা এতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারত না। রেলপথ মানুষের খারাপ প্রবৃত্তিকে আরও খারাপ করে। খারাপ লোকেরা তাদের মন্দ কাজগুলো আরও দ্রুততার সঙ্গে করতে পারে।’
যা–ই হোক কাশ্মীরে রেলপথ চালু হওয়ার পর সেই পথ দিয়ে যে নির্বিঘ্নে চলাচল করা যাবে, সেটা নিশ্চিত নয়।
শ্রীনগর থেকে দিল্লি যেতে যাত্রীদের জম্মুতে নেমে বাড়তি নিরাপত্তাতল্লাশির মুখে পড়তে হবে। এটি ‘নিরবচ্ছিন্ন সংযোগের’ প্রতিশ্রুতিকে নাকচ করে দেয়।
যেখানে বিশ্বের দীর্ঘতম সময় ধরে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা ঘটে, যেখানে সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন করতে পারেন না, সেখানে কানেকটিভি উন্নয়নের গল্প বলে ভারতীয় রাষ্ট্র ও তাদের তোষামোদকারী সংবাদমাধ্যম যে প্রচার চালায়, সেটা চরমভাবে হাস্যকর। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের চেয়েও যে দেশটাতে এখন বৈষম্য এমন দেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে, এমন ধারণা যাঁরা বিশ্বাস করেন, সেটার থেকেও এটা হাস্যকর।
আরও পড়ুনমোদি–শাহ জুটির যুদ্ধ উন্মাদনা ভারতকে যেভাবে বদলে দেবে০৮ মে ২০২৫এই রেল প্রকল্প শুধু একটি প্রকৌশল কৃতি নয়, এটি একটি সাম্রাজ্য তৈরির পদক্ষেপও। আর সাম্রাজ্য তৈরির এই অংশটিই গল্পের মূল অংশ।
আজাদ এসা মিডল ইস্ট আইয়ের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর ছ প রকল প র জন য কর ছ ল র ওপর ব যবহ র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
চুক্তি সই করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পগবা
কোনো ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের দিনে ফুটবলাদের বেশ হাসিখুশিই দেখা যায়। চুক্তি সইয়ের মুহূর্তে পরিবার বা প্রিয়জন পাশে থাকলে খুশির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু পল পগবা ব্যতিক্রম এক দৃশ্যের জন্ম দিলেন।
ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ–এর ক্লাব এএস মোনাকো গত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পগবার চুক্তি সইয়ের ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওর আবহসংগীতে বাজছে বেদনাবিধুর এক গান। কারণ, পগবা যে চুক্তি সইয়ের সময় অঝোরে কেঁদেছেন!
আরও পড়ুন‘নিষিদ্ধ’ ইরান কি বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবে২৭ মার্চ ২০২৫ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী এই মিডফিল্ডারের দুচোখ বেয়ে পানি পড়েছে টেবিলেও। কিছুক্ষণ হাত দিয়ে মুখও ঢেকে ছিলেন। তা দেখে পাশে থাকা দুই ব্যক্তি পিঠ চাপড়ে তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করে গেছেন। খুব সম্ভবত তাঁদের একজন পগবার আপন কেউ, অন্যজন এএস মোনাকোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
ভিডিওর ক্যাপশনে এএস মোনাকো লিখেছে, ‘পল পগবার জন্য এটি এক আবেগঘন মুহূর্ত।’
পগবা কেন এভাবে কান্নায় ভেঙে পড়লেন, তা অনেকেই হয়তো উপলব্ধি করতে পারছেন। ৩২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার আবার পেশাদার ফুটবলে ফিরতে পারবেন, তা কয়জন ভেবেছিলেন!
ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সব ধরনের ফুটবল থেক সাময়িক নিষিদ্ধ হন পল পগবা। সে সময় তিনি খেলতেন ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে। তদন্ত শেষে নিষিদ্ধ দ্রব্য সেবনের সত্যতা মেলায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে ৪ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।
পল পগবার সঙ্গে ২ বছরের চুক্তি করেছে এএস মোনাকো