প্রায় ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করে রূপপুর রেলস্টেশন ও ঈশ্বরদী-রূপপুর রেলপথ নির্মাণ করেছে রেলওয়ে। প্রতিদিন এখান থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ইপিজেডে ভারী যন্ত্রপাতিসহ মালপত্র আনা-নেওয়া হবে এমনটা ধরে নিয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়। গত আড়াই বছরে স্টেশনটি থেকে দু’একটি মালবাহী বগি আর মোটর ট্রলি ছাড়া কিছুই চলেনি।
উদ্বোধনের দেড় বছর পেরিয়েছে, এক ছটাক পণ্য এখনও পরিবহন হয়নি এই রেলপথে। স্টেশনটি ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ওয়াগন ইয়ার্ড’ হিসেবে। রেলপথ ব্যবহার হচ্ছে স্থানীয়দের খড় বা গোবর শুকানোর কাজে। এখনও প্রকল্পের মালপত্র ও ভারী যন্ত্রাংশ নদী ও সড়কপথে আনা হচ্ছে রূপপুর প্রকল্পে।
রূপপুর প্রকল্প ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণ করে রেল কর্তৃপক্ষ। ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন থেকে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন হয়ে রূপপুর পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার রেলপথ ও রূপপুর রেলস্টেশনে ১৩টি লেভেল ক্রসিং, ৭টি বক্স কালভার্ট ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কম্পিউটারবেইজড কালার লাইট সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়।
উদ্দেশ্য ছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালপত্র ও ভারী যন্ত্রপাতি আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে এই রেলপথ। পাশাপাশি ঈশ্বরদী ইপিজেডের মালপত্রও এই স্টেশন থেকে পরিবহন করা হবে।
পাকশীর পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে আধুনিক এ স্টেশনটির অবস্থান। স্টেশন চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। প্ল্যাটফর্ম এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে ময়লা জমে আছে। টিকিট কাউন্টার, মালপত্র বুকিং কক্ষ, অতিথিশালা, ভিআইপি কক্ষ, প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার, স্টেশনমাস্টার, সহকারী স্টেশনমাস্টারসহ সব কক্ষই তালাবদ্ধ।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক সদস্য বলেন, রূপপুরের মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্য স্টেশন থেকে যে রাস্তা রয়েছে, সেটি হার্ডিঞ্জ সেতুর নিচ দিয়ে। এই দিক দিয়ে মালপত্র আনা-নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। শুনেছি এজন্যই নাকি লোড-আনলোড করা হচ্ছে না।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন বলেন, রেলপথে পাকশী বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনে মোটর ট্রলি চালানো হয়ে থাকে। স্টেশন ইয়ার্ডে রেলের নতুন কিছু ওয়াগন ও কোচ রাখা হয়েছে। স্থান সংকুলান ও নিরাপত্তার অভাবে বর্তমানে রূপপুর স্টেশনে এসব কোচ এনে রাখা হয়েছে। নতুন রেলপথ দিয়ে রূপপুর প্রকল্পের জন্য কোনো মালপত্র এখনও আনা-নেওয়া হয়নি জানান এ কর্মর্কতা।
বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ বীরবল মণ্ডল বলেন, রূপপুর প্রকল্পের জন্য এ রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। তারাই এটি ব্যবহার করবে। এখন হয়তো ব্যবহার হচ্ছে না, ভবিষ্যতে রূপপুর প্রকল্পের কাজে অনেক বেশি ব্যবহার হতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর র ম লপত র প রকল প র র পপ র র স ট শনট ব যবহ র র জন য র লপথ র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
যুগোপযোগী করা হচ্ছে মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম, আগামী বছরই চালু
মাধ্যমিক স্তরের চলমান শিক্ষাক্রম আরও যুগোপযোগী করে আগামী বছর থেকে নতুনভাবে চালু করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন এ শিক্ষাক্রমে অভিজ্ঞতালব্ধ, জ্ঞাননির্ভর ও বাস্তবসম্মত পাঠদান হবে। মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথমে এটি চালু হবে। পরে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কার্যক্রম এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ২৫ জুন এ নিয়ে এনসিটিবিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হবে– এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বা কোন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে, তা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন কারিকুলাম তৈরি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান। চলতি মাসে কারিকুলাম বিষয়ে কর্মশালা হওয়ার কথা ছিল। সেটি পিছিয়ে আগামী জুলাইয়ে করা হবে বলেও জানান এনসিটিবি কর্মকর্তারা।
এনসিটিবির সচিব সাহতাব উদ্দিন সমকালকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম যাচাই-বাছাই করে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকেই। প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও পরে ক্রম অনুসারে অন্য শ্রেণিতে তা চালু করা হবে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাতবার শিক্ষাক্রম বা শিক্ষাপদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে সরকার। প্রথম পাঁচবার শিক্ষাক্রমের মূল থিম ঠিক রেখে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পরিবর্তন করা হয়েছিল। তবে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে বড়সড়ো পরিবর্তন আনা হয়। সে বারের শিক্ষাক্রমটি ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’ নামে পরিচিত। এ পদ্ধতি প্রণয়নের ৯ বছরের মাথায় ২০২১ সালে আবারও নতুন একটি শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুমোদন করা হয়।
সেই রূপরেখা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তখন বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের মুখস্থনির্ভরতা কমিয়ে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শিখনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এ শিক্ষাক্রম। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে হাতে-কলমে শেখানো হবে।
অভিভাবকরা সেই শিক্ষাক্রম স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করতে পারেননি। তাদের অভিযোগ ছিল, এমন শিক্ষাক্রমের কারণে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শিক্ষাক্রম বাতিলে টানা আন্দোলনও হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতন হলে একই মাসের শেষ দিকে বাতিল করা হয় সেই শিক্ষাক্রম। ফিরিয়ে আনা হয় ২০১২ সালে প্রণীত আলোচিত সৃজনশীল শিক্ষাক্রম।
এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালের শিক্ষাক্রম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কিছু বিষয় ছিল, যা ছিল সময়োপযোগী। নতুন যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হবে, সেখানে ২০২৩ ও ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয় থাকবে। ২০২৭ সালে চালু হওয়া শিক্ষাক্রম কেমন হবে, তা নির্ভর করবে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত রাজনৈতিক সরকারের প্রত্যাশার ওপর।