সময়ের কাজ অসময়ে, উন্নয়নের নামে মানুষের ভোগান্তি
Published: 29th, June 2025 GMT
‘বেটারা প্রতি বছরই খালি বৃষ্টির দিনে রাস্তার কাম (কাজ) করে। বৃষ্টি অইলে হাঁটু পর্যন্ত কাদা হয়। আর আমরা ঘর থাইকা বাহির হবার পারি না। গরু-ছাগলও বন্দি থাকে ঘরে। মেলা কইছি শুকনাকালে কাম করবার নিগা (জন্য), ক্যারা হুনে (শোনে) কার কথা! কাম কইরা থুইয়া তো তারা যায় গা। আমরা ক্যামনে রাস্তা দিয়া চলি তা তো দেহে না।’ কথাগুলো বলছিলেন বগা গ্রামের হাসনা বেগম।
সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দ টিআর, কাবিখা ও কাবিটার কাজ গত মার্চ মাসে অনুমোদন পেলেও এখনও শেষ হয়নি অনেক কাঁচা রাস্তার কাজ। শুষ্ক মৌসুমের কাজ হচ্ছে বর্ষায়। ফলে উন্নয়নের নামে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। এমন চিত্র টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নে রাস্তা পুনর্নির্মাণে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৯ হাজার ২০৮ টাকা ৫১ পয়সা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে চাল বরাদ্দ হয়েছে ১৪১ টন। চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৩৫ হাজার টাকায়। ১৪১ টন চালের মূল্য দাঁড়ায় ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। একই প্রকল্পে চালের সমপরিমাণ গম বরাদ্দ পাওয়া গেছে। প্রতি টন গমের দর ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। ১৪১ টন গমের বিক্রি মূল্য ৩৭ লাখ ৩৬ হাজর ৫০০ টাকা। টিআর বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। উপজেলায় কাবিটা, কাবিখা ও টিআর মিলে মোট বরাদ্দ এসেছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার ৭০৮ টাকা ৫১ পয়সা। প্রকল্প দেওয়া হয়েছে ২০০টি, যার অধিকাংশই কাঁচা রাস্তা পুনর্নির্মাণের।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে, মার্চ মাসে অনুমোদন হয়েছে প্রকল্পগুলো। প্রকল্পের কাজ সরকার থেকে ১৫ জুন শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পরে সময় বাড়ানো হয়েছে। কাবিটা ও টিআর প্রকল্পগুলোর মেয়াদ ২২ জুন এবং কাবিখার মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
গত বর্ষা মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো পুনর্নির্মাণে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষের ভোগান্তি লাঘব হয়। কিন্তু হয়েছে উল্টো। সাগরদিঘী ইউনিয়নের কামালপুর দক্ষিণপাড়া বিয়ানী মার্কেট থেকে টুইনচালা জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণে বরাদ্দ ২ লাখ টাকা। সরেজমিন মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তার কাছে যেতেই দূর থেকে এক যুবক হাঁক ছাড়লেন– ‘ভাই, ওই রাস্তায় যাইয়েন না।’ তাঁর কাছে গিয়ে বারণের কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ওই রাস্তায় নতুন মাটি ফালাইছে। হাইটা যাওয়ারই উপায় নাই, আন্নে (আপনি) মোটরসাইকেল নিয়া কিবায় যাবাইন?’ আবুল কালাম নামে এই যুবক বলেন, ‘সরকার গরমের দিনের ওয়াজ শীতের দিনে করে। আর আমাগো ভোগান্তি বাড়ে। একটা লোক অসুস্থ হলে তারে আর ডাক্তারের কাছে নিবার উপায় নাই।’
দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের চৈথট্ট বটতলা থেকে আমতলা পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণে ব্যয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী, কাবিটা প্রকল্পের কাজ করবেন শ্রমিকরা। কিন্তু মাটি কাটার কাজ করেছে ভেকু। প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য নাহিদ হাসান ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কথা স্বীকার করেন। বৃষ্টিতে রাস্তায় কাদা হয়ে মানুষ যে ভোগান্তি পোহাচ্ছে, এই কথাও স্বীকার করেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই রাস্তা দিয়ে খুব কষ্টে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছিলেন রসুলপুর গ্রামের আরশেদ আলী। তাঁর ভাষ্য, প্রতি বছরই বর্ষাকালে এই রাস্তায় মাটি কাটে। বৃষ্টিতে যেখানকার মাটি সেখানে ধুয়ে যায়।
সংগ্রামপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং ফলের চাষ হয় পাহাড়ে। রাস্তায় নতুন মাটি ফেলার কারণে বৃষ্টি হলে সবজি ও ফলের ট্রাক চলাচল করতে পারে না। সবজি ক্ষেতেই পচে যায়।
১৪টি ইউনিয়ন পরিষদেই কোনো চেয়ারম্যান নেই। প্রশাসক হিসেবে এসব পরিষদের দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তারা। ধলাপাড়া ও সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন সারোয়ার রেজভীর ভাষ্য, এই দুটি ইউনিয়ন পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। মাটি লাল বর্ণের। সামান্য বৃষ্টিতে মাটি পিচ্ছিল হয়ে যায়। এ ধরনের রাস্তায় আলগা মাটি ফেলা হলে কাদার সৃষ্টি হয়। চলাচলে অসুবিধা হয়। শুষ্ক মৌসুমে কাজ করলে সুফল পাবে মানুষ, উন্নয়ন হবে ত্বরান্বিত।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হকের দাবি, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে তালিকা পাওয়ার পর রাস্তা পরিমাপ করতে সময় লেগেছে। ১৪টি ইউনিয়ন, এক দিন করে হলেও ১৪ দিন সময় লাগে। শুষ্ক মৌসুমের কাজ বর্ষা মৌসুমে গড়াল কেন? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনুমোদন পেলেও আমরা ওই সময় কিছু কিছু জায়গায় কাজ করতে পারিনি, কারণ মাঠে ধান ছিল। যে জায়গা শুকনো ছিল সেইখানে কাজ করা হয়েছে। আবার কোথাও আমাদের করা ডিজাইন মোতাবেক মাটি ফেলার সত্যতা সরেজমিন পাইনি। প্রকল্পের সভাপতিরা তাদের নিজেদের মতো করে মাটির কাজ করেন। কোথাও এক ফুট কোথাও ছয় ইঞ্চি আবার কোথাও দুই ফুট মাটি ফেলা হয়। ওই রাস্তাগুলো পুনরায় করতে বলায় দেরি হয়েছে।’
ইউএনও আবু সাঈদ বলেন, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বিশেষ করে মাটির কাজের বরাদ্দ অবশ্যই শুষ্ক মৌসুমে হওয়া উচিত। টেকসই উন্নয়নের জন্য বছরের শুরু এবং শেষের দিকে এ ধরনের প্রকল্প দেওয়া হলে শতভাগ কাজ করা সম্ভব ও ফলপ্রসূ হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক প রকল প র ওই র স ত বর দ দ ক জ কর উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আ’লীগের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদে শহরে মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ
আওয়ামী লীগের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদ ও মানবাধিকার অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি।
এসময়ে বিক্ষোভ মিছিল থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শ্লোগান দেয়, “ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই” খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই, শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকল্পিত করে তোলে পুরো শহর।
সোমবার ( ১৭ নভেম্বর) সকাল এগারোটায় শহরের মিশন পাড়া হোসিয়ারি সমিতির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দুই নম্বর নগরভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে বিএনপির মিছিলকে সফল করতে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন সদর থানা, বন্দর থানা, বন্দর উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড বিএনপি ও যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিকদল, মহিলাদল, ওলামাদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার- ফেস্টুনে সু-সজ্জিত হয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মিশন পাড়া হোসিয়ারি সমিতির সামনে এসে জড়ো হয়।
এছাড়াও মানবাধিকার অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার ফাঁসিকে শহরে যাতে করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কোন অগ্নিসংযোগ বা কোন নাশকতা করতে না পারে তার জন্য শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান করেন।
এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এড. আবুল কালাম , নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ রেজা রিপন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এড. রফিক আহমেদ, ডা. মজিবুর রহমান, মাসুদ রানা, এড. এইচএম আনোয়ার প্রধান, বরকত উল্লাহ, ফারুক হোসেন, বন্দর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা, মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন,বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন, শেখ সেলিম, নাজমুল হক, চঞ্চল মাহমুদ,সাইফুল ইসলাম বাবু, হিরা সরদার, ইকবাল হোসেন, সোহেল খান বাবু, মহানগর মহিলাদলের সভানেত্রী দিলারা মাসুদ ময়না, গোগনগর বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়াজী, আলীরটেক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আঃ রহমান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমেদ, ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহসিন মিয়া, মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক শাহেন শাহ্ মিঠু, বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রাজু আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাজাদা আলম রতন, মহানগর ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ শিবলীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।