এবার মেলা বন্ধের দাবিতে ইমাম পরিষদের স্মারকলিপি
Published: 30th, June 2025 GMT
খুলনা নগরীর শিববাড়ি মোড়ের জিয়া হল প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন বন্ধের জন্য খুলনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ইমাম পরিষদ। আজ সোমবার সকালে ইমাম পরিষদের নেতারা এই স্মারকলিপি দেন।
এর আগে রোববার আয়োজনের অনুমতির দাবিতে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চার ঘণ্টা অবস্থান করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ ও এনসিপি নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার জিয়া হলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে জুলাই উদযাপনের জন্য মাসব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। আবেদনে সেখানে একটি জুলাই মঞ্চ, জুলাই কর্নার, জুলাই প্রদর্শনী, বইয়ের দোকান, কিছু দেশীয় কুটির শিল্প, সংস্কৃতি ও দেশীয় খাবারের দোকান থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রদর্শনী ও দোকান স্থাপনের কথা বলা হলেও সেখানে মেলার আয়োজন চলছে। মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক রাসেল মিয়া এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। অতীতে জিয়া হল প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন থেকে ১৫-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করতেন মূল আয়োজকরা। মেলার আয়োজন সম্পর্কে জানতে পেরে সোমবার ইমাম পরিষদের নেতারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন।
স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, খুলনা শহরের অত্যন্ত ব্যস্ত স্থান বাবরি চত্বরে (শিববাড়ি মোড়) ও পরিত্যক্ত জিয়া হল এলাকায় মাসব্যাপী মেলার আয়োজনের চেষ্টা চলছে। অতীতে আমরা দেখেছি যেখানেই মেলার আয়োজন করা হয়েছে সেখানেই নগ্নতা ও অনৈতিকতা থাকে। লটারি, জুয়াসহ অনেক অসামাজিক ও অনৈসলামিক কাজ চলে থাকে। ফলে সমাজে ও রাষ্ট্রে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের কোনো মেলার অনুমতি না দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইমাম পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ এএফএম নাজমুস সউদ, মাওলানা নাসির উদ্দিন কাসেমী, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা মুশফিকুর রহমান, মাওলানা আনোয়ারুল আজম, মোল্লা মিরাজুল হক, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা হেকমত উল্লাহ মাদানী, ডক্টর মুফতি আব্দুর রহিম, মুফতি জিহাদুল ইসলাম প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ম রকল প স ম রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
শত বছর পেরিয়ে ‘শান্তির মিষ্টি’
বহু বছর আগে ইছামতী নদীর তীরে গড়ে ওঠে বান্দুরা বাজার। ব্রিটিশ আমলেই এটি ব্যবসাসমৃদ্ধ ‘গঞ্জ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। সেখানেই নন্দ কুমার ঘোষ প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিক্রমপুর অনন্তদেব মিষ্টান্ন ভান্ডার’। পরে নাম বদলে হয় ‘শান্তি মিষ্টান্ন ভান্ডার’। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ঘোষ পরিবার ধরে রেখেছে এ ব্যবসা। এলাকার মানুষের কাছে একনামে পরিচিত ‘শান্তির মিষ্টি’ হিসেবে।
সম্প্রতি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী দোকানটির কর্মীরা বেশ কর্মব্যস্ত। লাকড়ির চুলায় তৈরি হচ্ছে রসগোল্লা। পাশে দুধ জ্বাল দিচ্ছেন কারিগরেরা। দোকানের ক্যাশে বসে আছেন প্রবীণ সহদেব ঘোষ, হাসিমুখে ক্রেতাদের সামলাচ্ছেন। তাঁর দোকান-বাসা একই ছাদের নিচে।
প্রায় ৭০ বছর আগে সহদেব ঘোষ তাঁর বাবা মোহন লাল ঘোষের হাত ধরে এ ব্যবসায় নামেন। এখন বয়স ৯০ বছর। এ বয়সেও দোকানের দেখভাল করেন। সহদেব ঘোষ বললেন, এই ব্যবসাই তাঁর জীবনের অবলম্বন। তাঁর সন্তানেরা ইউরোপ-আমেরিকায় থাকলেও ছোট ছেলে সুধীর ঘোষ তাঁর সঙ্গেই থেকে দোকান চালান। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান তাঁরা।
কারিগর সিদ্দিকুর রহমান ১২ বছর ধরে কাজ করছেন এখানে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু খাঁটি দুধের ছানা ব্যবহার করি। কোনো পানি বা ভেজালের সুযোগ নেই।’ দোকানের বিক্রয়কর্মী শ্যামল বলেন, ‘প্রতিদিন এত ক্রেতা আসে যে সামলানোই মুশকিল। তবে এই ভিড়েই আনন্দ লাগে!’
সহদেব ঘোষের ছোট ভাই মধু ঘোষ জানান, তাঁদের পরিবার প্রায় ১৩০ বছর ধরে এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত পুরো বান্দুরা বাজারে একটাই মিষ্টির দোকান ছিল—এই শান্তি মিষ্টান্ন ভান্ডার। এখন প্রতিদিন ২০০-৩০০ কেজি মিষ্টি বিক্রি হয়, মৌসুমভেদে তা বাড়ে বা কমে। অনেকে ফোনে অর্ডারও দেন। তাঁদের দোকানে মিষ্টির দাম শুরু ২৮০ টাকা থেকে। সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা দামের মিষ্টি পাওয়া যায়। দেড় টাকা কেজি দরে মিষ্টি বিক্রি করে দোকানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে জানান মধু ঘোষ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ব্রিটিশ আমলে বান্দুরা ছিল নদীবন্দর ও ধানের আড়তের জন্য খ্যাত। খ্রিষ্টানপল্লির কারণে ব্যবসাও জমজমাট ছিল। সেই সময় থেকে শান্তি মিষ্টান্ন ভান্ডার স্থানীয়দের আস্থা অর্জন করে।
রসগোল্লা, মালাইচপ, চমচম, দই, রসমালাইসহ নানা ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায় এই দোকানে