হাতে লোকজ পুতুল ও কাঠের খেলনা নিয়ে ঈদমেলা থেকে বাড়ি ফিরছে কিশোর-কিশোরী—শিল্পী মুর্তজা বশীরের আঁকা এই চিত্র যেন আবহমান গ্রামীণ বাংলার মনন ও সংস্কৃতির আদর্শ কথা। এ ছাড়া ১৯৫২ সালে আঁকা ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলিবিদ্ধ শহীদের ছবি, কিংবা কাইয়ুম চৌধুরীর মুক্তিযোদ্ধার মুখাবয়ব শুধুই শিল্পকর্ম নয়, বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের রক্তাক্ত ইতিহাসগাথা। বলছি, গ্যালারি কায়ার ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদর্শিত চিত্রপ্রদর্শনী সম্পর্কে।
শিল্পী মুর্তজা বশীরের ‘ঈদমেলা থেকে ফেরা’.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ুঝুঁকি মোকাবিলার উদ্যোগেও পাশে আছে ইস্টার্ন ব্যাংক
বিশ্ব এখন জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয় ও সামাজিক বৈষম্যের মতো বড় সমস্যা মোকাবিলা করছে। এ কারণে টেকসই অর্থায়ন এখন শুধু একটি ধারণা নয়, বরং আর্থিক খাতের জন্য একটি বাস্তব ও জরুরি ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে ইস্টার্ন ব্যাংক গড়ে তুলেছে একটি দায়িত্বশীল ও কার্যকর টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
এই অর্জন ইবিএলের জন্য শুধু গর্বের বিষয় নয়, বরং এটি পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনের প্রতি ব্যাংকটির দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রমাণ। ইবিএল বিশ্বাস করে, টেকসই উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন মুনাফার পাশাপাশি পরিবেশ ও সমাজের দায়িত্বও সমানভাবে পালন করা হয়। এই বিশ্বাসকে ভিত্তি করে ইবিএল ধারাবাহিকভাবে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
জলবায়ুঝুঁকি ব্যবস্থাপনাইস্টার্ন ব্যাংক বাংলাদেশে প্রথম ব্যাংক হিসেবে বার্ষিক প্রতিবেদনে টেকসই ও জলবায়ুবিষয়ক তথ্য প্রকাশ করেছে। এর আওতায় ব্যাংকটি নিজস্ব কার্বন নির্গমন (স্কোপ–১ ও ২) ছাড়াও যেসব খাতে অর্থায়ন করেছে, সেগুলোর কার্বন নির্গমনের (স্কোপ–৩) তথ্যও পরিমাপ করছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদার হয়ে ইবিএল কার্বন ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। জলবায়ুঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে অর্থায়নের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। বিশেষ করে, জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক (ডিইজি) ও জয়েন্ট ইমপ্যাক্ট মডেল ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ব্যাংকটি তাদের অর্থায়ন পোর্টফোলিও থেকে সৃষ্ট কার্বন নির্গমন পরিমাপ করছে এবং তা কমানোর উপযোগী কৌশল গ্রহণ করছে। পাশাপাশি আইএফসির সঙ্গে অংশীদার হয়ে জলবায়ুঝুঁকি চিহ্নিত ও তা ব্যবস্থাপনার কাজও বাস্তবায়ন করছে। এ ছাড়া ডিএইচএলের গো গ্রিন প্লাস পরিষেবা ব্যবহারের মাধ্যমে ইস্টার্ন ব্যাংক বাণিজ্য নথি পরিবহনে টেকসই এভিয়েশন ফুয়েল ব্যবহার করছে। এর ফলে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কার্বন নির্গমন কমানো সম্ভব হয়েছে। পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিংয়ের পথে এটি ইবিএলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
মূল ব্যাংকিংয়ে টেকসই ও স্মার্ট কার্যক্রমইস্টার্ন ব্যাংক তার প্রধান কার্যালয়কে একটি পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন হেড অফিস’ হিসেবে গড়ে তুলেছে। এতে রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা, ১৬ কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সুবিধা ও প্লাস্টিকমুক্ত কর্মপরিবেশ রয়েছে।
অফিস পরিচালনায় ইস্টার্ন ব্যাংক ‘স্মার্ট এনার্জি’ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এর আওতায় মোশন সেন্সর লাইট, সূর্যালোকের সর্বোচ্চ ব্যবহার, বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী এসি এবং হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঋণপত্র (এলসি) প্রক্রিয়া, ই-লার্নিং ও ই-সার্টিফিকেশন ব্যবহারের মাধ্যমে কাগজের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতায় অগ্রণী পদক্ষেপইস্টার্ন ব্যাংক কেবল অনুদানভিত্তিক করপোরেট সামাজিক দায়িত্বে (সিএসআর) সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজ উন্নয়নের কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রকল্প নিতে চায়। যেমন ‘ইবিএল ক্লাইমেট অ্যাকশন অ্যাওয়ার্ডস’–এর মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এমন পাঁচটি অনন্য উদ্যোগকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া স্কুল ও কলেজে বৃক্ষরোপণ, বিভিন্ন অঞ্চলে চারা গাছ বিতরণ এবং ভাসানচরে ‘ফরেস্ট ফর দ্য ফিউচার’ প্রকল্পের মাধ্যমে ইবিএল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। একই সঙ্গে আইসিডিডিআরবির সঙ্গে যৌথভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সার্কুলার ইকোনমি নিয়ে কাজ করছে ব্যাংকটি। ইবিএলের টেকসই কার্যক্রম কেবল নীতিগত প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এটি আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, পণ্য ও সেবায় বাস্তবভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তখনই সত্যিকারে সফল হয়, যখন তা বর্তমানকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেয়। এই বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে একটি টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইবিএল এগিয়ে যাচ্ছে।
তানভীর হাসান
পরিবেশ ও সামাজিক ঝুঁকি বিশেষজ্ঞ, সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ, ইস্টার্ন ব্যাংক