জলবায়ু বিশৃঙ্খলা এবং বিশ্বজুড়ে সংঘাতের মধ্যেও উন্নয়নের ইঞ্জিনকে পুনঃসচল করতে সাহায্য বৃদ্ধি করতে দাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল সোমবার স্পেনের সেভিয়ায় চতুর্থ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থায়নবিষয়ক এক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

জাতিসংঘ মহাসচিব এমন এক সময়ে এই আহ্বান জানালেন, যখন মার্কিন নেতৃত্বাধীন সংস্থাগুলো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ সহায়তা বা অনুদান উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে। অনুদান কমে যাওয়া বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে বিপন্ন করে তুলছে।

গত ৩০ জুন থেকে সেভিয়ায় শুরু হওয়া এই সম্মেলন চলবে ৩ জুলাই পর্যন্ত। এতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও চার সহস্রাধিক ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। এই সম্মেলনের লক্ষ্য অনুদান সাহায্যের অভাবে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচন, স্বার্থ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন-সংশ্লিষ্ট সংকটে পড়া নানা প্রকল্পে নতুন গতি আনা।

আন্তোনিও গুতেরেস তাঁর ভাষণে জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই অর্জনের দিক থেকে পিছিয়ে আছে। এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিবছর ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। গুতেরেস বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর বিভিন্ন দেশে প্রকল্পগুলোয় ইউএসএইডের বাজেট কমানোর কথা। পাশাপাশি জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সও সহায়তা খাতে কাটছাঁট করে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

অর্থ সংকটের ফলে শিশুরা টিকা পাচ্ছে না, মেয়েরা স্কুল ছাড়ছে, পরিবারগুলো না খেয়ে আছে। অসমতা, জলবায়ু বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা সংঘাতে কাঁপতে থাকা এই পৃথিবীতে টেকসই অগ্রগতি ততক্ষণ সম্ভব হয়, যতক্ষণ না পথ পরিবর্তন এবং উন্নয়নের ইঞ্জিন মেরামত না হয়। আর এর জন্য সহযোগিতার গতি বাড়াতে হবে– বলেন তিনি।

দাতব্য সংস্থা অক্সফাম বলেছে, ১৯৬০ সালের পর থেকে এবারই বিভিন্ন প্রকল্পে সবচেয়ে বড় অর্থ সহায়তা হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ প্রতিদিন তিন ডলারেরও কমে জীবন চালায়, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি উপসাহারান আফ্রিকায় পড়ছে। খবর এএফপির।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-চীন সম্পর্কের আসলে কতটা উন্নতি হতে পারে

দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীন এখন ধীরে এবং সতর্কভাবে সম্পর্ক জোরদার করার পথে হাঁটছে। একদিকে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট আবার চালু করার আলোচনা, অন্যদিকে উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সফরের ধারাবাহিকতা—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত নীতির প্রেক্ষাপটে সবই ঘটছে।

দুই দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এমন কয়েকটি সূত্র জানায়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আগামী সপ্তাহে নয়াদিল্লি সফরে যাবেন। সেখানে তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে হিমালয় সীমান্ত বিরোধ নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। ২০২০ সালে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর এটি হবে দ্বিতীয় বৈঠক।

চলতি মাসের শেষ দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীন সফরে যাচ্ছেন। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করবেন। সাত বছরের মধ্যে এটি হবে তাঁর প্রথম চীন সফর। চীনে তিনি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।

গত বছরের অক্টোবরে সীমান্ত টহল চুক্তির পর সম্পর্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বশেষ এসব ঘটনা ঘটছে। পাঁচ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির কারণে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আকাশপথে যোগাযোগ বেশ ব্যাহত হচ্ছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিগত কয়েক সপ্তাহে ভারত-চীনের সম্পর্কে বেশ উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনার মধ্যে এই সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। ওয়াশিংটনের কৌশলগত অংশীদারদের মধ্যে এটি অন্যতম সর্বোচ্চ হার।

অন্যদিকে এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন নিজেদের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ আরও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে। ফলে চীনের পণ্যের ওপর সম্ভাব্য তিন অঙ্কের শুল্ক এড়ানো গেছে।

চীন ও ভারত ইতিমধ্যে ২০২০ সাল থেকে স্থগিত থাকা সরাসরি ফ্লাইট আবার চালু করতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাধা কমানোর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে হিমালয়ের তিনটি সীমান্তপথে বাণিজ্য আবার চালুর বিষয়ও রয়েছে।

গত অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে ১২ হাজার ৭০৭ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের তুলনায় সীমান্ত বাণিজ্যের পরিমাণ বেশ কম। এরপরও সীমান্তপথ খুলে দেওয়াকে আবার চালু হওয়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নির্ধারিত সব বাণিজ্যপথের মাধ্যমে সীমান্ত বাণিজ্য আবার চালুর বিষয়ে আমরা চীনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন

চীন রয়টার্সকে জানায়, তারা সীমান্ত বাণিজ্য আবার চালু করতে প্রস্তুত। দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সীমান্ত বাণিজ্য ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ রেখেছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, সরাসরি ফ্লাইট যত দ্রুত সম্ভব আবার চালুর জন্য বেইজিং নয়াদিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সঠিক সময়সীমা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

ইতিমধ্যে ভারতের সরকারি চিন্তন প্রতিষ্ঠান চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য বিনিয়োগের কঠোর নিয়ম শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছে, যা অতিরিক্ত যাচাইয়ের শর্ত তৈরি করেছিল। এটিকে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততায় সম্ভাব্য পরিবর্তনের আরেকটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের সরকারি চিন্তক প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দিয়েছে, চীনা কোম্পানির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যাচাইয়ের নিয়ম কিছুটা যেন শিথিল করা হয়। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে সম্ভাব্য পরিবর্তনের আরেকটি ইঙ্গিত হিসেবে একে দেখা যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ