পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ নতুন করে তদন্ত করছে দুদক
Published: 1st, July 2025 GMT
এক যুগের বেশি সময় আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছিল, তা নতুন করে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়মের যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ‘গায়ের জোরেই’ মামলাটি থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে যে বিভ্রান্তি ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল, সেসবের যথেষ্ট উপাদান থাকলেও শেষ পর্যন্ত আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। তাঁরা মনে করছেন, মামলাটি অনেকটা ‘গায়ের জোরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে’। এ কারণে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি–লাভালিনকে পরামর্শক নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে এ প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছিল বিশ্বব্যাংক। এরপর একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর এ বিষয়ে বনানী থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় মোট সাতজনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মো.
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সওজের (সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস।
প্রায় দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালে এ মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আসামিরা সবাই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান।
নতুন তদন্তে কেউ দায়ী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান। তিনি আজ সাংবাদিকদের বলেছেন, আগে যাঁদের আসামি করা হয়েছিল, প্রয়োজনে তাঁদের আবারও ডাকা হতে পারে। তদন্তে নতুন কোনো নাম এলে সেটিও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি, আগের চূড়ান্ত প্রতিবেদন যথাযথ ছিল না। এখন তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।’
এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বড় প্রকল্প করতে গেলে একই জিনিস অনেকবার ব্যবহার করার সুযোগ থাকে। সে ক্ষেত্রে যে জিনিস একবার ক্রয় করলে বারবার ব্যবহার করতে পারি, সেটা একাধিকবার ক্রয় দেখানো সমীচীন নয়। এ রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা যখন যৌথ মূল্যায়ন করি, কনসালট্যান্টের তাদের যেসব সিভি মূল্যায়ন করার কথা ছিল, সেগুলো সেভাবে করিনি। এখানে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। মূল্যায়নের বিভিন্ন জায়গায় পিপিএ (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট), পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) আমরা অ্যাভয়েড (উপেক্ষা) করেছি।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘কনসালট্যান্টের সিভি মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও সঠিকভাবে মানা হয়নি। মূল্যায়ন কার্যক্রমে কমিটির যেসব সাক্ষাৎ ও তথ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, তা–ও করা হয়নি। এতে স্পষ্ট অনিয়মের প্রমাণ মেলে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ প রকল প ক প রক নত ন ক তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
কৃষি অফিসারের প্রচেষ্টায় রক্ষা পেল শত শত বিঘা জমির ধান
নাটোরের নলডাঙ্গায় ভারি বৃষ্টিতে উপজেলার ধামনপাড়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। হঠাৎ জমিতে পানি জমে শত শত বিঘা ধানসহ বিভিন্ন আবাদ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় উপজেলা কৃষি অফিসারের উদ্যোগ ও দ্রুত পদক্ষেপে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করায় রক্ষা পেয়েছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ফসল বাঁচাতে উপজেলা কৃষি অফিসার মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে জরুরি ভিত্তিতে পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করেন। খালে পাইপ বসিয়ে জমির অতিরিক্ত পানি দ্রুত নামানোর ব্যবস্থা করেন। ফলে জমিতে থাকা ধানসহ বিভিন্ন আবাদ পানিতে পচে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পায়। এতে কৃষকের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।
স্থানীয় কৃষক আলামিন বলেন, “আমরা কৃষি অফিসারকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাঠে ছুটে আসেন এবং গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন অফিসে ফোন দেন। পরের দিনই বিএমডিএ আমাদের পানি নিষ্কাশনের পাইপ সরবরাহ করেন।”
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় দুইদিনে ২২৫ জনের মৃত্যু
পঞ্চগড়ে রাতভর বর্ষণে স্লুইসগেটের সংযোগ সড়কে ধস
স্থানীয় কৃষকরা জানান, যদি কৃষি অফিসার সময়মতো উদ্যোগ না নিতেন, তাহলে তাদের পুরো মৌসুমের ফসল পানিতে তলিয়ে যেত। এ উদ্যোগে তারা নতুনভাবে আশার আলো দেখছেন।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. কিশোয়ার হোসেন বলেন, “কৃষকদের ধান বাঁচাতে আমরা জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছি। ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বিএমডিএতে কৃষকদের পাঠিয়ে পাইপ আনিয়েছি। কারণ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাই ছিল একমাত্র উপায়। কৃষকরা এখন স্বস্তিতে আছেন—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।”
নলডাঙ্গা উপজেলায় এ বছর প্রায় ৩৫৫৬ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে।
ঢাকা/আরিফুল/মেহেদী