মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ পাস হতে সিনেটের চূড়ান্ত ভোটের অপেক্ষায় রয়েছে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাইয়ের আগে বিলটি পাস করার সময়সীমা নির্ধারণ করলেও পরে পিছিয়ে এসেছেন। ফলে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আশা এখনও টিকে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। 

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তিটি আসন্ন। ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ইতোমধ্যে বলেই দিয়েছেন, দিল্লি বিগ, বিউটিফুল বিলকে স্বাগত জানাবে। ট্রাম্প এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। 

বিবিসি জানায়, দুই দেশের মধ্যে কৃষিপণ্য, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও ভারতীয় ইস্পাতের ওপর শুল্ক নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। দিল্লি খামার ও দুগ্ধজাত পণ্যের সুরক্ষায় জোর দিচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তর বাজার খোলার জন্য ভারতকে চাপ দিচ্ছে। দু’পক্ষ আশাবাদী হলেও চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়েছে। ট্রাম্প চাচ্ছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভুট্টা কিনুক। 

দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের পরিচালক সাবেক ভারতীয় বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য চুক্তি হবে কিনা, তা আগামী সাত দিনের মধ্যে নির্ধারিত হয়ে যাবে। 

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে ভারতের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী রিচার্ড রসো প্রাথমিক চুক্তির ক্ষেত্রে দুটি চ্যালেঞ্জ দেখছেন। এক.

মৌলিক কৃষিপণ্যের জন্য ভারতীয় বাজারে মার্কিন প্রবেশাধিকারের ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে ভারতকে মৌলিক কৃষি খাতকে রক্ষা করতে হবে। দুই. ভারতের অশুল্ক বাধা একটি বড় সমস্যা। এর ফলে বাণিজ্য চুক্তি অর্থপূর্ণভাবে পরিচালনা করা কঠিন হতে পারে। রসো মনে করেন, যদি ভারত মৌলিক কৃষিতে প্রবেশাধিকার না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কোনো চুক্তি নাও করতে পারে। 

বিল পাসের সময়সীমা উন্মুক্ত : ট্রাম্প 

বিগ, বিউটিফুল বিলের সময়সীমা বিলম্বিত করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প উন্মুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিলটি চূড়ান্তভাবে পাস করার জন্য আগামী শুক্রবারের সময়সীমা মেনে চলা তাঁর পছন্দ। তবে এই সময়ের মধ্যে তা করা কঠিন হবে। ৪ জুলাই বিলটি পাস করা সম্ভব না হলে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যেতে পারে। 

বিলের কাটছাঁট নিয়ে সিএনএনের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কর্তন পছন্দ করি না, কিছু কিছু বিষয় কর্তন করা হয়েছে, যা ভালো। আমার মনে হয়, আমরা ভালো করছি। আমাদের কিছু জটিল বিষয় দেখতে হবে। আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত আমরা এটি করতে পারব। 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়া খুব বড় শক্তি, যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের চুক্তি করা উচিত: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করা। কারণ, রাশিয়া খুব বড় একটি শক্তি। তারা (ইউক্রেন) তা নয়।’

আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন। শোনা যাচ্ছে, যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে বৈঠকে পুতিন ইউক্রেনের আরও ভূমি দাবি করেছেন।

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্প আর পুতিনের বৈঠকটি হয়। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেন। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে জানান, যদি কিয়েভের পক্ষ থেকে দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে রাশিয়া বেশির ভাগ জায়গায় যুদ্ধ থামাবে—এমন শর্ত দিয়েছেন পুতিন।

আরও পড়ুনট্রাম্প–পুতিন বৈঠক নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউক্রেনীয়রা, কিন্তু কেন১১ ঘণ্টা আগে

এ বিষয়ে জানাশোনা আছে—এমন একটি সূত্র এ কথা নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত দোনেৎস্ক অনেক আগে থেকে পুতিনের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু।

জেলেনস্কি এমন চাওয়া প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানায় ওই সূত্র। এরই মধ্যে ইউক্রেনের এক–পঞ্চমাংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দোনেৎস্কের তিন ভাগ এলাকাও তার নিয়ন্ত্রণে। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে রুশ বাহিনী।

ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা এর আগে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চেয়েছিল, সেটা ছাড়াই একটি শান্তিচুক্তি সইয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুনট্রাম্প–পুতিন বৈঠক কি যুদ্ধ থামাতে পারবে, ইতিহাস কী বলছে১৭ ঘণ্টা আগে

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, সবার পক্ষ থেকে এটা নির্ধারণ করা হয়েছে যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সর্বোত্তম উপায় সরাসরি শান্তিচুক্তিতে যাওয়া। এটা যুদ্ধ বন্ধ করবে। তবে এ চুক্তি নিছকই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নয়, যা প্রায়ই টেকে না।

এদিকে জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সদিচ্ছা না থাকাটা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করার একটি মূল উপাদান হত্যা বন্ধ করা।’ জেলেনস্কি জানান, আগামীকাল সোমবার তিনি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্প–জেলেনস্কির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে দুই নেতার তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। সেদিন জেলেনস্কির সঙ্গে তর্কে জড়ান যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও।

এবার ট্রাম্প অবশ্য আশা প্রকাশ করেছেন, পুতিন আর জেলেনস্কিকে নিয়ে একসঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন তিনি।

আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিনের সংবাদ সম্মেলনে ‘সংবাদ সামান্যই’১৬ আগস্ট ২০২৫

যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা। তারা ইউক্রেনের পাশে থাকার ও রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, আগামীকাল হোয়াইট হাউসের বৈঠকে জেলেনস্কির পাশাপাশি ইউরোপীয় নেতারাও থাকবেন।

তবে ইউরোপের কোন কোন নেতা হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ পেয়েছেন, সে বিষয়ে কারও পক্ষ থেকে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপে গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ এটা। উভয় পক্ষে ১০ লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইউক্রেনের হাজারো বেসামরিক মানুষ রয়েছেন।

আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ভূখণ্ড হারানোর ভয়—ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক নিয়ে হতাশ ইউক্রেনীয়রা১৫ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ