ব্লাড ক্যানসারে মারা যান বিবেকের প্রেমিকা, সেই স্মৃতিতে অভিনেতার উদ্যোগ
Published: 29th, October 2025 GMT
ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবি হতে চলেছে নীতেশ তিওয়ারি পরিচালিত মহাকাব্যিক সিনেমা ‘রামায়ণ’। এই ছবির বিশাল আয়োজন, তারকাশিল্পীদের পারিশ্রমিক অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে যাবে। পৌরাণিক মহাকাব্য অবলম্বনে নির্মিত এ ছবিতে রাম-সীতারূপে পর্দায় আসবেন রণবীর কাপুর ও সাই পল্লবী। আর রাবণের ভূমিকায় দেখা যাবে কন্নড় সুপারস্টার যশকে। ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা বিবেক ওবেরয়। সম্প্রতি তাঁর কারণেই এই ছবির এক মানবিক দিক আলোচনায় এসেছে—এ ছবির সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিবেক। তাঁর এই মহৎ উদ্যোগ প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
বিবেক ওবেরয়। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকঢোল পিটিয়ে দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টি নামাতে পারল না বিজেপি সরকার
সাত মন তেল পুড়ল, কিন্তু রাধা নাচল না। ঢাকঢোল পিটিয়ে, ধুমধাম ও বিপুল খরচ করে অনেক আশা জাগিয়ে মেঘের মধ্যে রাসায়নিক ছড়িয়ে বৃষ্টি ঝরানোর চেষ্টা চালানো হলেও সব বিফলে গেল। বৃষ্টিস্নাত হলো না রাজধানী দিল্লি।
অথচ এ জন্য দিল্লির বিজেপি সরকার খরচ করল ৩ কোটি ২১ লাখ রুপি। কানপুর আইআইটি বলছে, বৃষ্টি হয়তো হয়নি, কিন্তু অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য তারা সংগ্রহ করতে পেরেছে।
কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরিয়ে রাজধানীর তীব্র দূষণের মাত্রা কমাতে ব্যর্থ হওয়ার পর সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে সাময়িক উপশমের পথে না হেঁটে সরকার বরং দূষণের উৎসে নজর দিক। যেসব কারণে প্রতিবছর হেমন্তের শুরু থেকে পুরো শীত মৌসুম দিল্লি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে, সেই কারণগুলো বন্ধ করা হোক। এভাবে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জলে ফেলার দরকার নেই।
দীপাবলির সময় বাজি পোড়ানো বন্ধ করতে পারেনি দিল্লির কোনো সরকারই। তবু আগের আম আদমি পার্টি (এএপি) সরকারের একটা চেষ্টা ছিল। চেষ্টা ছিল পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদেরও। নানাভাবে চেষ্টা হয়েছিল মামলা করে বাজি পোড়ানো বন্ধের। সেই প্রচেষ্টা জন্ম দিয়েছিল দূষণহীন বাজির। তৈরি হয়েছিল ‘গ্রিন ক্র্যাকার’। যদিও তার আড়ালে দেদার বিক্রি হয়ে এসেছে দূষণকারী বাজিও। ফলে দূষণ সৃষ্টি হয়েছে যথারীতি।
দিল্লিতে ক্ষমতাসীন হয়ে বিজেপি সরকার সেই প্রচেষ্টাতেও জল ঢেলেছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বাজি পোড়ানোর সঙ্গে সনাতন ধর্মকে জুড়ে প্রচার শুরু করে দেয়, যারা বাজি বন্ধের উদ্যোক্তা, তারা সনাতন ধর্মবিরোধী। সেই প্রচার প্রভাব ফেলেছিল কি না অন্য কথা, দেখা গেল সুপ্রিম কোর্টও পুরোপুরি বাজি নিষিদ্ধ করতে পারলেন না। ফলে প্রতিবছরের মতো এবারও দিল্লির আকাশ-বাতাস দীপাবলির পর ঢেকে গেল গভীর ধোঁয়ার আস্তরণে। দূষণ হয়ে দাঁড়াল মাত্রাছাড়া।
এই দূষণ থেকে নিস্তার পেতেই কৃত্রিম বৃষ্টির আয়োজন। এই উদ্যোগ আম আদমি সরকারও নেওয়ার কথা ভেবেছিল, কিন্তু রূপায়ণ করতে পারেনি। বিজেপি তা করে ফেলল। রাজ্য সরকার তিন কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করে এই প্রকল্পে। দায়িত্ব দেওয়া হয় কানপুর আইআইটিকে।
গতকাল মঙ্গলবার কানপুর আইআইটি দুই দফায় কয়েকবার সেসনা বিমান নিয়ে উড়ে বেড়ায় দিল্লির আকাশে। মেঘের ভেতর জলকণা সৃষ্টি করতে উড়োজাহাজ থেকে মেঘের মধ্যে ঢালা হয় ড্রাই আইস, সিলভার আয়োডাইড, আয়োডাইজড লবণ ও রক সল্টের রাসায়নিক মিশ্রণ। সেই জলকণা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে রাজধানীর আকাশ থেকে।
গতকাল সেই কাজেই নেমেছিল কানপুর আইআইটি। অথচ দিনভর প্রতীক্ষাই সার হলো। দিল্লিতে বৃষ্টির ছিটোফোঁটাও দেখা পাওয়া গেল না। দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তর প্রদেশের নয়ডায় বৃষ্টি হয় শান্তিজল ছিটানোর মতো। পরিমাণ ০ দশমিক ১ মিলিলিটার।
আইআইটির বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এই ‘ক্লাউড সিডিং’, যা কিনা কৃত্রিম বৃষ্টির প্রক্রিয়া, তা শেষ হওয়ার ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে বৃষ্টি হবে। কখনো কখনো ২ ঘণ্টা পরও হতে পারে। তবে বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতির জন্য বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি থাকা দরকার।
তবে সারা দিন প্রতীক্ষার পরও বৃষ্টির দেখা কেন মিলল না, তার ব্যাখ্যায় কানপুর আইআইটির পরিচালক মনীন্দ্র আগরওয়াল এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, গতকাল দিল্লির বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। অর্থাৎ খুবই সামান্য, তাই বৃষ্টি হয়নি।
মনীন্দ্র বলেন, আজও ওই প্রক্রিয়া চালানো হবে। তাঁদের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ তা বলা যাবে না। তাঁরা এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, তাঁদের পরীক্ষা একেবারেই যে ব্যর্থ, তা নয়। বৃষ্টি হয়নি ঠিকই, কিন্তু ১৫টি নিরীক্ষণ কেন্দ্রে দেখা গেছে, বাতাসে মিশে থাকা সুক্ষ্ম ধূলিকণা, যাকে পিএম ২ দশমিক ৫ বলা হয়, তার পরিমাণ ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
মনীন্দ্র আগরওয়াল ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, দিল্লি দূষণের মোকাবিলার উত্তর কৃত্রিম বৃষ্টি হতে পারে না। এই ব্যবস্থা নিতান্তই সাময়িক। দিল্লিতে যে হারে দূষণ বেড়ে চলেছে, তা কমানোর একমাত্র উপায় দূষণের উৎস বন্ধ করা। একই কথা বলেছেন বিভিন্ন পরিবেশবিদ। ঘটনা হলো, কী করা দরকার, তা সবার জানা হলেও কেউই তা করতে পারছে না।
উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের খেতগুলোতে ফসলের গোড়া জ্বালানো বন্ধ করা যাচ্ছে না। দীপাবলিসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিয়ে বাড়ি ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের সময় দেদার বাজি পোড়ানো বন্ধ করা যাচ্ছে না। নির্মাণকাজ থেকে ওড়া ধুলাবালু বাতাসে যাতে না ছড়ায়, সেই ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কলকারখানার বর্জ্য যমুনায় ফেলা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
চীন পৃথিবীর প্রথম দেশ, যেখানে ‘ক্লাউড সিডিং’ সফল হয়েছে। বেইজিংসহ শুষ্ক অঞ্চলগুলোতে তারা এই পদ্ধতিতে বৃষ্টি ঘটাচ্ছে। চীন ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবেও এই পদ্ধতিতে বৃষ্টি ঝরানো হয়েছে।
পাকিস্তানও লাহোরের মতো দূষণযুক্ত শহরে এই পদ্ধতিতে কিছুটা সাফল্য পেয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিতে ভুলছেন না, এটা সাময়িক উপায়। বড়জোর দুই–তিন দিন এর রেশ থাকে। তারপর যে অবস্থা ছিল, তেমনই হয়ে যায়। তা ছাড়া এই ব্যবস্থা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ।
আরও পড়ুন দিল্লির আকাশে কৃত্রিম মেঘ, অপেক্ষা বৃষ্টির২১ ঘণ্টা আগে