ময়মনসিংহের কোন সড়কে দুর্ঘটনা বেশি, কেন
Published: 25th, July 2025 GMT
ময়মনসিংহে গত সাড়ে তিন বছরে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ৭৭২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন অন্তত ৯৫৬ জন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিংয়ের প্রবণতা, থ্রি-হুইলারের অবাধ চলাচল, রাস্তার বাঁক এসব দুর্ঘটনার বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত জেলার সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ৮০৩টি দুর্ঘটনায় ৭৭২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১৪৬টি দুর্ঘটনায় ১৫১ জন নিহত ও ২১০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
চলতি বছরের ছয় মাসের দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়কে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল ও ভালুকা অংশে দুর্ঘটনা ঘটে ৭০টি। ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়কের ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলা অংশে দুর্ঘটনা ঘটে ৪৭টি।
সম্প্রতি ফুলপুর-তারাকান্দা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় সাইনবোর্ড দিয়ে রেখেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। পুরো রাস্তার বিভিন্ন অংশে মারাত্মক বাঁক আছে। তারাকান্দা উপজেলার কাকনি ইউনিয়নের বাগুন্দা এলাকাতেও বাঁক দেখা যায়। এ এলাকাটি দুর্ঘটনার ‘হটস্পট’ বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিমের। তবে চার লেনের ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেপরোয়া গতি, উল্টো পথে গাড়ি চলা ও ওভারটেকিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
দুর্ঘটনা কমাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে জানিয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম বলেন, শম্ভুগঞ্জ থেকে হালুয়াঘাট পর্যন্ত সড়কটি খুবই আঁকাবাঁকা এবং সেখানে চালকেরা নিয়ম মানছেন না। চালকেরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। সড়কে সতর্কবাণী থাকলেও সেগুলো মানছেন না, যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ময়মনসিংহের সভাপতি আবদুল কাদির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষেধ থাকলেও সড়কে বেপরোয়া গতিতে এসব গাড়ি চলে। যানবাহন কম, লোকাল সার্ভিস না থাকায় মানুষ বিকল্প হিসেবে থ্রি-হুইলার ব্যবহার করেন। অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং, বাঁক থাকা, নিয়ম না মানার কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল রোধে প্রশাসন সড়কে নজরদারি বাড়াবে, এমনটাই আশা তাঁদের।
ময়মনসিংহ নগরের শম্ভুগঞ্জ থেকে ফুলপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়ক ৩৪ ফুট প্রস্থের এবং ফুলপুর থেকে হালুয়াঘাট পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়কটি ১৮ ফুট প্রস্থের। সড়কটি দিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ফুলপুর, তারাকান্দা, ধোবাউড়া ও শেরপুরের যানবাহন চলাচল করে। সড়কটি ভালো হওয়ার কারণে যানবাহনের চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। এ কারণে দুর্ঘটনায় হতাহত বেশি হচ্ছে বলে জানান সড়ক ও জনপথ বিভাগের ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী কেবিএম সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে গতিসীমা নির্ধারণ করে দিলেও চালকেরা সেগুলো মানে না। সড়কটি ভালো হওয়ায় চালকেরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন। দুর্ঘটনা কীভাবে কমানো যায়, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।
সড়ক দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে অংশ নেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো.
বেপরোয়া গতিতে চলা যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে জানিয়ে বিআরটিএ ময়মনসিংহের মোটরযান পরিদর্শক জহির উদ্দিন বলেন, চালকদের অসতর্কতা ও বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কে থ্রি–হুইলার গাড়িগুলোকে সতর্ক হয়ে চলাচল করা উচিত। সবাই সচেতন হলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব, নাহলে সম্ভব নয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন য় দ র ঘটন র ব পর য় চ লক র হ সড়ক সড়ক ও বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
দিনে ঢাকায় মিছিল, রাতে বাড়িতে ফিরতেই নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
রাজধানীর উত্তরায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ জেলা শাখার ব্যানারে মিছিলে অংশ নেওয়ার পর রাতে বাড়িতে ফিরতেই তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নূর হামীম রুশো (২০), ছাত্রলীগ কর্মী আলিফ জাহান ওরফে পার্থ (২০), মো. মারুফ মিয়া (২৫)। তাঁরা সবাই ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা।
আজ শনিবার বিকেলে গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারে ঢাকায় মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, বিশেষ অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা রাজধানীর উত্তরার মিছিলে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।