Prothomalo:
2025-07-31@06:25:32 GMT

ডাউন সিনড্রোম শিশুর যত্ন

Published: 27th, July 2025 GMT

ডাউন সিনড্রোম বা ‘ট্রাইসোমি ২১’ একটি বংশানুগতিক সমস্যা। শরীরে ক্রোমোজোমের বিশেষ ত্রুটির জন্য এটি হয়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিটি দেহকোষে ২১তম ক্রোমোজোমে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোমের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

মাঝারি বা গুরুতর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের তিন ভাগের এক ভাগ ও জন্মগত ব্যাধির প্রায় ৮ শতাংশের কারণ ডাউন সিনড্রোম। ব্রিটিশ চিকিৎসক জন ল্যাংডন ডাউন ১৮৬৬ সালে এই রোগ প্রথম শনাক্ত করেন। এ কারণেই রোগটির এমন নাম।

গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার; অর্থাৎ প্রতিদিন ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত প্রায় ১৫টি শিশু জন্ম নেয়। তবে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ভপাত ঘটে।

চেনার উপায়

মাথার আকৃতি ছোট ও পেছনের অংশ চ্যাপটা। মুখমণ্ডল ও নাক চাপা।

চোখের ভুরু ধনুকের মতো ওপরে টানা ও চোখের ভেতরে দাগ।

কান ও মুখগহ্বর ছোট। জিবের আকৃতি বড় ও কান স্বাভাবিকের চেয়ে একটু নিচুতে।

হাত–পা ছোট। পুরো হাতের তালুতে একটিমাত্র স্পষ্ট রেখা থাকে।

পায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় আঙুলের মাঝখানে বেশি ফাঁক থাকে।

মাংসপেশি নরম ও তুলতুলে হয়।

জটিলতা

হৃদ্‌যন্ত্রের ত্রুটি, শ্রবণপ্রতিবন্ধী, পাকস্থলীর সমস্যা, সিলিয়াক ডিজিজ ও চোখে ছানি হয়ে থাকে। হরমোনজনিত সমস্যা, যেমন থাইরয়েড গ্রন্থি অকেজো হয়। বিলম্বে শিশুর বিকাশ, যেমন দেরিতে বসা–হাঁটা, কথা বলা, খর্বাকৃতি প্রভৃতি সমস্যা। মৃদু থেকে গুরুতর মাত্রার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়।

শনাক্তের উপায় ও চিকিৎসা

ডাউন সিনড্রোম শিশু জন্মের আগে ও জন্মের পর দুভাবে শনাক্ত করা যায়। গর্ভাবস্থায় মায়ের পেট থেকে কোষ নিয়ে, রক্ত পরীক্ষা, আলট্রাসাউন্ড প্রভৃতি স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে জানা যায় গর্ভস্থ শিশুটি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত কি না। জন্মের পর কেরিওটাইপ, সিবিসি ও থাইরয়েড হরমোন–ঘাটতি, শ্রবণশক্তি, হার্টের জন্মত্রুটি নির্ণয়ের মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা যায়।

ডাউন সিনড্রোম সম্পূর্ণ নিরাময় না হলেও ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ হয়। নিয়মিত ওজন ও উচ্চতা মেপে দৈহিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিস, সিলিয়্যাক ডিজিজের মতো সমস্যায় নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। স্পিচথেরাপি, অকুপেশনালথেরাপি ও বিদ্যালয়ে বিশেষ শিখনপদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। হার্ট ও থাইরয়েডের মতো সমস্যা থাকলে যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে। বয়স ৩৫ বছরের বেশি এমন যেসব নারী মা হতে চান বা যে মায়ের এক সন্তান ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত, পরবর্তী সন্তান গ্রহণের আগে Ñচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি অন্য কোনো জটিল রোগে না ভোগেন, তাহলে আয়ুষ্কাল প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাঁদের অনেকে বিয়ে করে স্বাভাবিক পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন।

ডা.

প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না

অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।

এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।

ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।

এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।

তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।

দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।

আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।

কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।

এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।

আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।

মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।

‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ