দেশের শিক্ষিত যুব নারী ও পুরুষদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছে সরকার। বর্তমানে এ নিয়ে দেশের ৪৮টি জেলায় প্রশিক্ষণ চলছে। সরকার চাচ্ছে আরও ১৬টি জেলায় একই ধরনের প্রশিক্ষণ দিতে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চলমান ‘দেশের ৪৮ জেলায় শিক্ষিত কর্মপ্রত্যাশী যুবদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ শীর্ষক প্রকল্পটি সংশোধন করে এর মেয়াদ এক বছর, অর্থাৎ ২০২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩০০ কোটি টাকা। এটি শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।

সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা বা ডিপিপি সংশোধনের জন্য গত ১১ মার্চ প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) একটি বৈঠক হয়। এরপর ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কমিটির (পিআইসি) বৈঠক।

উভয় বৈঠকের পরে ২২ মে পিএসসির আরেক বৈঠকে প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বৈঠকে প্রকল্প পরিচালক জানান, মাঠপর্যায়ে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছেন। সে জন্য প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে উপস্থিত সবাই এটিকে সারা দেশে চালু করার পক্ষে মত দেন।

সংশোধন করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

পিএসসির বৈঠকে আরও জানানো হয়, যাঁরা ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই আয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছেন। প্রকল্পের সফলতা এবং মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যাপক চাহিদা ও জনপ্রিয়তা থাকায় পিআইসির বৈঠকে এটিকে সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মো.

সাইফুজ্জামান ২৪ মে যুব ও ক্রীড়াসচিব মো. মাহবুব-উল-আলমকে পাঠানো এক চিঠিতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি আরও জানান, মেয়াদ বৃদ্ধি পেলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭৫ কোটি টাকা।

যুব ও ক্রীড়াসচিব মো. মাহবুব-উল-আলম ২৭ জুলাই তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে ৪৮ জেলার বাইরে থাকা বাকি ১৬ জেলায়ও অনেকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। শিগগির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’

উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিয়ে চলমান প্রকল্পের ৩০০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের আওতায় ৪৮ জেলায় মোট ২৮ হাজার ৮০০ যুব নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা তাদের। এখনো বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ চলছে। দৈনিক নগদ ভাতা দেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে তিন বেলায় ৩০০ টাকার খাবার দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে ১৬টি জেলায় ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও পেয়েছিল ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড। এর মেয়াদ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হয়। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যাঁরা এ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের ৬৪ শতাংশই অর্থ উপার্জন করছেন আর ২১ শতাংশ চাকরি করছেন।

জানা গেছে, প্রশিক্ষণ দিতে প্রতিটি জেলায় ২৫টি কম্পিউটার ও হাইস্পিড ইন্টারনেট-সংবলিত দুটি ল্যাব স্থাপন করেছে ই-লার্নিং। প্রতিটি ল্যাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ২৫ জন প্রশিক্ষণার্থী। আগ্রহীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক, বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর।

যোগাযোগ করলে ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৬ জেলা এখন প্রশিক্ষণের বাইরে। এসব জেলার জেলা প্রশাসকদের অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তাঁরা বলেছেন যে প্রশিক্ষণের বাইরে থাকায় তাঁদের জেলা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আমাদের বক্তব্য হল, এটা তো সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র সরক র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বরগুনায় গণ-অভ্যুত্থানের শোভাযাত্রা শেষে বাসচাপায় ইসলামী আন্দোলনের নেতা নিহত

বরগুনার আমতলীতে গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূতির শোভাযাত্রা শেষে বাড়ি ফেরার পথে রেজাউল করিম (৪০) নামের এক ব্যক্তি বাসচাপায় নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরেক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ঘটখালী গ্যাসপাম্প–সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

রেজাউল করিম উপজেলার ডালাচারা এলাকার বাসিন্দা ও আমতলী বন্দর হোসাইনিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। দুর্ঘটনার পর দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর মরদেহ নিয়ে বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের ঘটখালী এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। পরে বাস আটকের খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূতি উপলক্ষে গতকাল শোভাযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন করেন ইসলামী আন্দোলনের আমতলী শাখার নেতা-কর্মীরা। সন্ধ্যার আগে কর্মসূচি শেষ হয়। সেখান থেকে রেজাউল মোটরসাইকেলে আবদুল হক নামের এক ব্যক্তিকে নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয় বিপরীত দিক থেকে আসা কুয়াকাটাগামী ছন্দা পরিবহনের একটি বাস। এতে ঘটনাস্থলেই রেজাউল নিহত হন। সেই সঙ্গে আবদুল হক আহত হন। খবর পেয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কটির প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই বাস ও এর কর্মীদের মহিপুর থানায় আটকের খবর পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন তাঁরা।

ইসলামী আন্দোলনের আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী বলেন, ‘ঘাতক বাসচালকের কঠোর শাস্তি দাবি করছি আমরা।’

এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ