বিএনপির ভূমিকার কারণে সংস্কারের দায়িত্ব পালনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক।

শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের জাতীয় শ্রমিক কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মামুনুল হক বলেন, ‘‘নির্বাচন ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন হওয়া দরকার ছিল যাতে দুর্বৃত্তায়ন, পেশি শক্তি, কালো টাকা ও সন্ত্রাসের আধিপত্য বন্ধ হয়। কিন্তু পাঁচ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সেই অভিপ্রায় দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাঙ্ক্ষিত মান তো দূরের কথা, ন্যূনতম সংস্কারের প্রত্যাশাও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতায় বিএনপিরও বড় ভূমিকা রয়েছে।’’

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘‘ঘোষণাপত্রে বঙ্গভঙ্গ, ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর— কোথাও উল্লেখ নেই। অথচ এগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের ভিত্তি। শাপলা চত্বর ছাড়া চব্বিশের বিপ্লবের পাটাতন তৈরি হতো না। এ ছাড়া ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডকেও ঘোষণায় স্থান দিতে হবে।’’

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘‘দায়িত্ব নিয়েছেন যখন, নির্বাচনী লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি ছাড়া আপনার মুক্তির উপায় নেই। শাপলার রক্তকে স্বীকৃতি, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও জাতীয় ষড়যন্ত্রকে ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করে সেটিকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে।’’

উচ্চকক্ষে পিআর নির্বাচন প্রসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নিলেও, দেশের বর্তমান সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের দ্বিমতের কারণে এটি কার্যকর হবে না। পিআর পদ্ধতি না থাকলে উচ্চকক্ষ কেবল ‘বেকার পুনর্বাসনের উচ্চকক্ষ হবে, যা আমরা চাই না।’’

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে মামুনুল হক বলেন, ‘‘আপনারা যদি প্রকৃত অর্থবহ উচ্চকক্ষ না গড়ে, বেকার পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে কেবল এমপি বাড়িয়ে রাষ্ট্রের উপর বোঝা চাপিয়ে দেন, তবে তা মেহনতি মানুষের জন্য দুর্বিষহ হবে।’’

ফ্যাসিবাদের বিচার প্রসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, ‘‘খুনীদের বিচার নিশ্চিত করতে কিছু মামলা হয়েছে, কিন্তু একটি মামলাতেও রায় হয়নি। উল্টো ফ্যাসিবাদের আমলে নির্যাতিত মানুষ এখনো মামলার ঘানি টানছে। শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের মামলা আজও আমাদের নামে রয়েছে। আইনের নামে বেআইনি শাসন আমরা মেনে নেব না। পৃথিবীর প্রতিটি বিপ্লব ও আন্দোলনে শ্রমিক জনতার অভূতপূর্ব অবদান রয়েছে। চব্বিশের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র জনতা, কিন্তু রাজপথ দখল ও ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে রক্ত ও জীবন দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম স্টেকহোল্ডার ছিলেন বাংলাদেশের শ্রমিক জনতা। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের নিরলস ও সংগ্রামী ভূমিকার জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন আমরা করতে পারিনি। এটি বাংলাদেশের ব্যর্থতা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা।’’

তিনি বাংলাদেশের শ্রমিক জনতাকে অভিনন্দন জানিয়ে এই ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। 

কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মুফতি শরাফত হোসাইনের সভাপতিত্বে কনভেনশন উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। সদস্য সচিব মাওলানা আবু সাঈদ নোমান ও উচ্চতর পরিষদ সদস্য আজিজুর রহমান হেলালের যৌথ পরিচালনায়  কনভেনশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, এডভোকেট মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী (সাবেক সংসদ সদস্য), মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা তফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা আবুল হাসনাত জালালী, মাওলানা মুহাম্মদ ফয়সাল, মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ হাদী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূইয়া, ছাত্র মজলিসের সভাপতি পরিষদ সদস্য মাহদি হাসান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ, নির্বাহী সদস্য মাওলানা মামুনুর রশীদ, মাওলানা আমজাদ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা সানাউল্লাহ আমীনি প্রমুখ।

আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা জাহিদুজ্জামান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট আতিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি মাওলানা মুর্শিদুল আলম সিদ্দিকী, খেলাফত শ্রমিক মজলিসের উচ্চতর পরিষদ সদস্য শরিফুজ্জামান জসিম প্রমুখ।

 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মজল স র সদস য ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাসহ ৮ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বাতামোড়াল পুঞ্জি সীমান্ত দিয়ে ৪ বাংলাদেশি ও ৪ রোহিঙ্গা নাগরিককে ঠেলে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে সীমান্ত এলাকায় ঘোরাঘুরির সময় তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়নের (৫২ বিজিবি) অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল হক চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিজিবি জানায়, আটককৃতদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, তিনজন নারী ও দুই শিশু রয়েছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিতের পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বড়লেখা থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তরে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আরো পড়ুন:

অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা, ১১ নারী আটক

নওগাঁয় ১৮ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ

গত কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে লোকজনকে ঠেলে দিচ্ছে বিএসএফ। এ নিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছে বাংলাদেশ।

ঢাকা/আজিজ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ