মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন মন্তব্য করায় এক কিশোরকে (১৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সম্প্রতি ওই কিশোরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল শনিবার রাতে কুলাউড়া পৌর শহরের ভাঙারিপট্টি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার কিশোর স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা একটি সাজসজ্জা প্রতিষ্ঠানের কর্মী; মা বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। ভাঙারিপট্টি এলাকায় তাঁরা ভাড়া থাকেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়।

ছড়িয়ে পড়া ৪৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কিশোর একটি কক্ষে চেয়ারে বসে আছে। সামনে টেবিল রাখা। পেছনের দেয়ালে বিএনপি নেতা প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ছবিসংবলিত একটি ব্যানার টানানো। ভিডিওতে সে বলে, ‘একমাত্র শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের একজন গর্বিত নারী। ইনশা আল্লাহ তিনি একদিন না একদিন ফিরে আসবেন। ইনশা আল্লাহ আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসবে। জয় বাংলা, জয় বাংলা। আমি শেখ হাসিনার লোক। গর্ব করে বলতে পারি আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। ইনশা আল্লাহ আবার দেখা হবে রাজপথে, ধন্যবাদ।’

পুলিশ জানায়, ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ায় গতকাল রাত ১০টার দিকে বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই স্কুলছাত্রকে আটক করা হয়। পরে ২০২৪ সালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে কুলাউড়া থানায় করা একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার প্রতিবেদনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ফ্যাসিস্টের পক্ষে ওই স্কুলছাত্র সক্রিয় ছিল এবং তার বয়স ১৯ বছর উল্লেখ করা হয়েছিল।

কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর না বুঝে এ কাজ করেছে বলে দাবি করেছে। তার মা যে বাসায় কাজ করেন ওই বাসার মালিকের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভিডিওটি ধারণ করা হয়। তাকে মৌলভীবাজারের আদালতে পাঠানো হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রায় প্রত্যাখ্যান আওয়ামী লীগের

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে দুই নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভিডিও বার্তায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, “আজ যে রায় ঘোষণা করেছে এ রায় বাংলার জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। বাংলার জনগণ এ রায় মানে না, মানবে না।”

আরো পড়ুন:

রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বললেন শেখ হাসিনা

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ‘অতীতের প্রতিশোধ নয়’: প্রধান কৌঁসুলি

তিনি বলেন, “অবৈধ আদালত যে মামলার রায় দিয়েছে সেটি ১৪ অগাস্ট শুরু করে ১৭ নভেম্বর মামলা শেষ করেছে। ৮৪ জন সাক্ষীকে সামনে রেখে ৫৪ জনকে হাজির করে ২০ দিনে মামলা শেষ করেছে। এই দুই মাসের মধ্যে মাত্র ২০ দিন আদালত চলেছে।”

“এর প্রধান বিচারক গত এক মাস অনুপস্থিত ছিলেন। তারপরেও প্রতিশোধের লক্ষ্য নিয়ে মানুষের প্রিয় নেত্রীর বিরুদ্ধে যে রায় দিয়েছে।”

জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, “অচিরেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব”।

এর আগে সোমবার (১৭ নভেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ২ নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মামলার অন্য আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু হয়। দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় ঘোষণা হলো আজ।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ