খেলাপি কারখানা কিনে চালুর উদ্যোগ আকিজ বশির গ্রুপের
Published: 11th, August 2025 GMT
চার প্রকৌশলী মিলে ২০১৬ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে গড়ে তোলেন বিদ্যুতের তার ও কেবলস উৎপাদন কারখানা। নাম দেওয়া হয় এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড কেব্লস লিমিটেড। তখন প্রকল্পটির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে ন্যাশনাল ব্যাংকের নেতৃত্বে চার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থায়ন করে।
তবে ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি ও সময়মতো চলতি মূলধন না পাওয়ায় প্রকল্পটি ব্যবসায়িক উৎপাদনই শুরু করতে পারেনি। উৎপাদন শুরুর আগেই শতকোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে। আর তাতে বিপাকে পড়ে প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করা ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।
এখন পুরো ঋণ ও দায়দেনা পরিশোধ করে প্রকল্পটি কিনে নিচ্ছে আকিজ বশির গ্রুপ। এ জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চার অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান, আকিজ বশির গ্রুপ ও এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড কেব্লস। কারখানাটি কিনে নিতে আকিজ বশির গ্রুপ প্রায় ১১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ইতিমধ্যে এমিনেন্সকে অর্থায়নকারী চার প্রতিষ্ঠানকে ঋণের একটা অংশ পরিশোধ করে দিয়েছে আকিজ বশির গ্রুপ। আগামী অক্টোবরের মধ্যে পুরো ঋণ শোধ করে কারখানাটির মালিকানা বুঝে নেবে তারা। এর মাধ্যমে আকিজ বশির গ্রুপ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পণ্য উৎপাদনে বড় পরিসরে যাত্রা শুরুর পরিকল্পনা করছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্প কিনে আকিজ বশির গ্রুপ নিজেরা লাভবান হয়েছে। পাশাপাশি তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংকগুলোও তাতে উপকৃত হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে দেওয়া পুরো অর্থ ফেরত পেতে যাচ্ছে। ব্যাংক দুটির কর্মকর্তারা বলছেন, এতে আমানতকারীদের উপকার হবে। ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও বলেন, দেশে একটা নতুন প্রকল্প প্রস্তুত করতেই কয়েক বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু এমিনেন্স কিনে নেওয়ার ফলে আকিজ বশির গ্রুপ এখন চাইলেই কয়েক মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু করতে পারবে।
এ বিষয়ে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঋণের একটা অংশ পেয়ে গেছি। পুরো টাকা কয়েক দিনের মধ্যে পেয়ে যাব। এটা খুবই ভালো হয়েছে। এভাবে বড় শিল্প গ্রুপগুলো এগিয়ে এলে কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে থাকবে না।’
প্রকল্পের অবস্থা
অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোদারচালা এলাকায় এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যারস অ্যান্ড কেবলস লিমিটেড বৈদ্যুতিক তার ও কেবল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে। উচ্চমানের অ্যালুমিনিয়াম ও কপার বৈদ্যুতিক কেবল, উচ্চ ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক কেবল এবং খোলা কপার কেবল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়, যার বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৬৭ হাজার ১৫০ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ১১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের নেতৃত্বে রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স সিন্ডিকেট করে ৬৯ কোটি টাকা অর্থায়ন করে। বাকি টাকার জোগান দেন উদ্যোক্তারা।
প্রকল্পটি যখন পরিকল্পনা করা হয়, তখন ডলারের দাম ছিল ৮০ টাকা। ২০২১ সালে ডলারের দাম বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। এর মধ্যে করোনার প্রকোপ শুরু হলে নির্মাণ ব্যয় আরও বেড়ে যায়। ফলে অবকাঠামো সম্পন্ন করতে আরও ৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হয় প্রতিষ্ঠানটির। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৭৮ লাখ ডলারের যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলে, যা পরে ফোর্সড ঋণে পরিণত হয়। এর মধ্যে ২০২২ সালে ডলারের বিনিময় হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ফলে ৬৯ কোটি টাকা ঋণ বেড়ে হয় ১১৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি চলতি মূলধন না পাওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদনও শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এখন কারখানাটি কিনে নিয়ে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে আকিজ বশির গ্রুপ।
আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো.
আকিজ বশির যেভাবে কিনছে
এক বছরের বেশি সময় ধরে এমিনেন্সের উদ্যোক্তারা প্রকল্পটি বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। আকিজ বশির গ্রুপও এই ব্যবসায় আসতে পুরোনো প্রকল্প খুঁজছিল। এর মধ্যে তারা একাধিক তার ও কেব্লস উৎপাদন কারখানা কেনার জন্য আলোচনা করে। শেষমেশ এমিনেন্সের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হয়। দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছালে ৬ আগস্ট এ নিয়ে চুক্তিও হয়। এই চুক্তির ফলে আকিজ বশির গ্রুপ এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের পাশাপাশি এমিনেন্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা, তাদের সরবরাহকারীদের বিলসহ আরও কিছু দায়দেনা শোধ করবে।
অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ ৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও এক্সিম ব্যাংকের ঋণ ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে ঋণের কিছু অর্থ পেয়ে গেছে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
এক্সিম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদা খানম বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। ৬০ দিনের মধ্যে ঋণের বাকি টাকা পেয়ে যাব। এটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ইন য ন স এক স ম ব য কর মকর ত এম ন ন স প রকল প শ ধ কর ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়াও সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে ‘স্বীকৃতি দেবে’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার মতো অস্ট্রেলিয়াও সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।
আলবানিজের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছ থেকে কয়েকটি প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নিরস্ত্রীকরণ, সাধারণ নির্বাচন আয়োজন এবং ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারকে অব্যাহতভাবে স্বীকৃতি দেওয়া।
সোমবার (১১ আগস্ট) ঘোষণা করা এই পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, “দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার চক্র ভাঙা এবং গাজায় সংঘাত, ভোগান্তি ও অনাহারের অবসান ঘটানোর জন্য মানবতার সর্বোত্তম আশা।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’
‘আমরা মরে যাচ্ছি’, গণঅনাহারে বৈশ্বিক নীরবতায় গাজার ধিক্কার
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে থাকা ইসরায়েল বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা’।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, শনিবার (৯ আগস্ট) থেকে গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যা নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৭ জনে।
প্রসঙ্গত, গাজা যুদ্ধের প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনি ‘গণহত্যা’ ও ‘গাজায় দুর্ক্ষিভ’ শব্দ ব্যবহার করে না ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-বিবিসি। এর জন্য মানবাধিকারকর্মীদের কঠোর সমালোচনার মুখে রয়েছে ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত সাংবাদমাধ্যমটি।
ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এর আগে বলেছে, রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়া তাদের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের জন্য ক্রমবর্ধমান সমর্থনকে তুলে ধরে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ জানান, তার সরকার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ভবিষ্যতের কোনো রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, গত দুই সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড ও জাপানের সঙ্গে আলোচনার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “এখানে একটি সুযোগের মুহূর্ত এসেছে এবং অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে এটি কাজে লাগাবে।”
গত রবিবার ফিলিস্তিনের পক্ষে হাজার হাজার মানুষ সিডনি হারবার ব্রিজে পদযাত্রা করে। এই কর্মসূচির জন্য আদালতের রায় নিতে হয় আয়োজকদের।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা এই পথে হাঁটবে না। তারা মনে করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হামাসকে পুরস্কৃত করা।
রবিবার (১০ আগস্ট) মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স পুনরায় বলেন, কার্যকর সরকার না থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনাকারী দেশগুলোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “ইউরোপীয় দেশগুলো এবং অস্ট্রেলিয়ার এভাবে সেই গর্তে ঝাঁপিয়ে পড়া হতাশাজনক এবং আমার মনে হয়, এটা আসলে লজ্জাজনক।”
“তারা জানে, যদি মেলবোর্নের পাশেই বা সিডনির পাশেই এমন ভয়াবহ হামলা হতো, তবে তারা কী করত। আমি মনে করি, আপনারা অন্তত আমরা যা করছি, তা-ই করতেন।”
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েল তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন। যদিও নেতানিয়াহুর দাবি, এটিই যুদ্ধ শেষ করার ‘সেরা উপায়’।
গত বছর স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তাদের আশা ছিল, এটি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি উৎসাহিত করবে।
বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের মর্যাদা একটি ‘স্থায়ী পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসেবে। এই মর্যাদায় জাতিসংঘের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া যায় কিন্তু ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যায় না।
ঢাকা/রাসেল