সাবেক সচিব সাত্তারের বক্তব্য ‘বিএনপির নয়’
Published: 11th, August 2025 GMT
নাম উল্লেখ না করে কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সাবেক সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটা আবদুস সাত্তারের নিজস্ব বক্তব্য।
মির্জা ফখরুলকে উদ্ধৃত করে শনিবার গভীর রাতে করা বাসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সততার ওপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন তিনি (মির্জা ফখরুল)।
আবদুস সাত্তারের বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি বলতে চাই, হুইচ ইজ নট আওয়ার্স। এটার সঙ্গে আমাদের (বিএনপি) কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা প্রধান উপদেষ্টাসহ এই অন্তর্বর্তী সরকারের সব উপদেষ্টাকে অত্যন্ত সম্মান করি এবং তাঁদের ওপর আস্থা, তাঁদের ইনটিগ্রিটির (সততা) ওপর আমরা আস্থা রাখি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ওই বক্তব্যের দায় সম্পূর্ণভাবে ওনার (আবদুস সাত্তার) নিজের। দলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’
উল্লেখ্য, আবদুস সাত্তার বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছে দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। তিনি আওয়ামী লীগের আমলে যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসরে যান। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর তাঁকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে সচিব করা হয়।
আওয়ামী লীগের পতনের পর আবদুস সাত্তার অফিসার্স ক্লাবের (সরকারি কর্মকর্তাদের ক্লাব) সাধারণ সম্পাদক হন। তিনি বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি পদেও রয়েছেন। মূলত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।
কয়েকজন উপদেষ্টার দুর্নীতি নিয়ে আবদুস সাত্তার বক্তব্য দেন গত শুক্রবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এক সেমিনারে। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আমলা সেখানে বক্তব্য দেন। দর্শক সারিতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের বহু কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ওই বক্তব্যের দায় সম্পূর্ণভাবে ওনার (আবদুস সাত্তার) নিজের। দলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।মির্জা ফখরুল, বিএনপির মহাসচিবসেমিনারে নাম উল্লেখ না করে কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র অভিযোগ করেন আবদুস সাত্তার। অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধেই সরকারের বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ থাকা অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে সরকারের নানা পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া হয়।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে শনিবার একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে এসেছে; যেখানে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এ বি এম আবদুস সাত্তার নাম উল্লেখ না করে কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। আমরা এই অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। প্রমাণ উপস্থাপন বা ব্যক্তিদের শনাক্ত না করে ঢালাওভাবে অভিযোগ করা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং জন আস্থার জন্য ক্ষতিকর।’
শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যতক্ষণ না এমন প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে, আমরা সকল অংশীজনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে জনপরিসরের আলোচনা অনুমান নয়, বরং তথ্যের ভিত্তিতে হওয়া সমীচীন।’বিবৃতিতে আবদুস সাত্তারের কাছে সব প্রমাণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের প্রশাসন স্বচ্ছতা, সততা এবং জবাবদিহির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদি আবদুস সাত্তারের কাছে কোনো অসদাচরণের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থাকে, আমরা তাঁকে যথাযথ আইনগত ও তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তা দ্রুত জমা দেওয়ার আহ্বান জানাই।’
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আবদুস সাত্তার গতকাল রোববার পর্যন্ত কোনো প্রমাণ জমা দেননি। পাশাপাশি এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়াও জানাননি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে গতকাল আবদুস সাত্তারকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়, ফোন করা হয়। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবে গিয়ে পাওয়া যায় তাঁকে। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কাছে তথ্য-প্রমাণ আছে। তিনি তা জমা দেবেন। প্রমাণ কবে জমা দেবেন, কী প্রমাণ আছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যতক্ষণ না এমন প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে, আমরা সকল অংশীজনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে জনপরিসরের আলোচনা অনুমান নয়, বরং তথ্যের ভিত্তিতে হওয়া সমীচীন।’
শনিবার বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশনও একটি বিবৃতি দেয়। সেখানে বলা হয়, শুক্রবার অনুষ্ঠিত সেমিনারের মূল প্রবন্ধ ও বিষয়বস্তুর বাইরে গিয়ে দু-একটি গণমাধ্যম উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য নয়।
বিষয়টি নিয়ে শনিবার রাতে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি তখন প্রথম আলোকে বলেন, আবদুস সাত্তার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি একান্তই তাঁর নিজের বক্তব্য।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশন গতকাল আরেকটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়, আবদুস সাত্তার উপদেষ্টাদের নিয়ে যে মতামত দিয়েছেন, তা একান্তই তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ বক্তব্যকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা পূর্ণ আস্থার সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব কার্যক্রম বাস্তবায়নে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ স স ত ত র র কজন উপদ ষ ট র ন উপদ ষ ট র কর মকর ত ব এনপ র সরক র র মন ত র উল ল খ উপস থ ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় আল–জাজিরার পাঁচ সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় সিপিজের উদ্বেগ
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আল–জাজিরার সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। গতকাল রোববার সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন সিপিজের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
গতকাল গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আল–জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ, মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোয়ামেন আলিওয়া নিহত হয়েছেন। আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে তাঁদের সংবাদকর্মীদের ব্যবহৃত একটি তাঁবুতে এই হামলা চালানো হয়।
সিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় কাজ করা আল–জাজিরার প্রতিবেদকদের মধ্যে আল-শরিফ সবচেয়ে পরিচিত মুখ ছিলেন। ইসরায়েল আগে কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে কয়েকজন সাংবাদিককে হামাসের সদস্য বলে অভিহিত করেছিল, তাঁদেরই একজন ছিলেন শরিফ।সিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের একটি প্রবণতা হলো, তারা সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করে, কিন্তু তার পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখায় না। শরিফের মৃত্যুর খবর দেওয়ার সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তিনি হামাসের একটি সেলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ ও সেনাদের বিরুদ্ধে রকেট হামলা চালানোর কাজে সহযোগিতা করছিলেন।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক সারা কুদাহ বলেন, ইসরায়েল কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখানো ছাড়াই সাংবাদিকদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করছে। আর এতে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সারা আরও বলেন, সাংবাদিকেরা বেসামরিক নাগরিক। তাঁদের কখনোই হামলার নিশানা করা উচিত নয়। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
সাংবাদিকেরা বেসামরিক নাগরিক। তাঁদের কখনোই হামলার নিশানা করা উচিত নয়। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।সারা কুদাহ, সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালকসিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় কাজ করা আল–জাজিরার প্রতিবেদকদের মধ্যে আল-শরিফ সবচেয়ে পরিচিত মুখ ছিলেন। ইসরায়েল আগে কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে কয়েকজন সাংবাদিককে হামাসের সদস্য বলে অভিহিত করেছিল, তাঁদেরই একজন ছিলেন শরিফ। খুব সম্প্রতি শরিফ গাজার মানুষের অনাহারে থাকা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ঢুকতে না দেওয়ায় তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা অনাহারে ভুগছেন।
গত ২৪ জুলাই এক ভিডিওতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদরায়ি অভিযোগ করেন, আল-শরিফ ২০১৩ সাল থেকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসামের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, যুদ্ধ চলাকালে শরিফ ‘সবচেয়ে অপরাধমূলক আক্রমণাত্মক চ্যানেল’-এর জন্য কাজ করছেন।
জুলাইয়ে আল-শরিফ সিপিজেকে বলেছিলেন, আদরায়ির এ প্রচার শুধু গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি বা সুনাম নষ্ট করাই নয়, এটি বাস্তব জীবনের জন্য একটি হুমকি।
আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার আগে কী লিখে গেছেন সাংবাদিক শরীফ১ ঘণ্টা আগেআল–শরিফ তখন আরও বলেন, ‘আমি এসব কিছু করছি, কারণ আমার প্রতিবেদন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদারদের অন্যায় কাজগুলো তুলে ধরছে, যা তাদের জন্য ক্ষতির। তারা আমাকে সন্ত্রাসী বলছে, কারণ দখলদারেরা আমাকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করতে চাইছে।’
সিপিজে বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান যুদ্ধে মোট ১৮৬ জন সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৭৮ জনই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক। তাঁরা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন।