৫০ বছরের পুরোনো বাজারটি পদ্মার ভাঙনের কবলে, দিশাহারা ব্যবসায়ীরা
Published: 11th, August 2025 GMT
শরীয়তপুরের জাজিরায় ২৫ বছর ধরে চায়ের দোকান চালাচ্ছেন জাহাঙ্গীর ফকির (৫০)। পদ্মার ভাঙনে সেটি বিলীন হওয়ায় তিনি এখন দিশাহারা। শুধু জাহাঙ্গীর নন, তাঁর মতো আরও অন্তত ৩৪ জনের দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জীবিকার একমাত্র সম্বল হারিয়ে দিশাহারা তাঁরা; পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না।
পদ্মা নদীর এমন আগ্রাসী ভাঙনে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৫০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার নদীতে বিলীন হওয়ার পর পুরো বাজারটি নদীভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাটে গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের অন্যতম বড় বাজার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে জানান, গত ৫০ বছরে পদ্মার ভাঙনের কারণে বাজারটি ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে সরে এসেছে। এরই মধ্যে জাজিরার নাওডোবা এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু। এ ছাড়া নাওডোবা এলাকায় সেনানিবাস, পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া, সেতুর টোল প্লাজা, থানা-ফায়ার সার্ভিসসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণকাজের শুরু থেকেই আশপাশের এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেয়। তখন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর ভাটির দিকে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্প এলাকায় রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। ওই বাঁধের পাশেই মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার। গত বছর নভেম্বরে ওই বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়ে। দফায় দফায় ভাঙনে বাঁধের এক কিলোমিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাটের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর ফকির বলেন, তিন প্রজন্ম ধরে পদ্মা নদীর ভাঙন মোকাবিলা করে টিকে আছেন। এখন তাঁর ভিটে-মাটি কিছুই নেই। দোকানটিই একমাত্র অবলম্বন ছিল; সেটিও গ্রাস করেছে পদ্মা। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় যাবেন, তা ভাবতেও পারছেন না।
যেখানে আগে লঞ্চঘাট ছিল, সেখানে চা ও নাশতার দোকান চালান আবদুল আলীম দেওয়ান। তাঁর দোকানটির খুব কাছে চলে এসেছে পদ্মা নদী। তিনি বলেন, এলাকায় যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৫টি দোকান ও স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে কয়েক হাজার মানুষ তাঁদের জীবিকার সঙ্গে সহায়-সম্বলও হারাবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান জানান, ওই বাঁধ সংস্কারের জন্য কাজ শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, জাজিরায় পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যেসব ব্যবসায়ী ও বাসিন্দা নিজেদের সহায়-সম্বল হারিয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর ভাঙনের কবল থেকে হাটবাজার ও স্থাপনা রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর কাজ করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ত ত র ম দবর ঘ ট ব যবস য় এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সন্তানকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যাচেষ্টা
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১০ দিন বয়সী সন্তানকে বর্ণি বাওড়ের পানিতে ফেলে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন মা রিয়া বিশ্বাস।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাতে উপজেলার বর্নি ইউনিয়নের বর্ণি বাওরের মধ্যপাড়া খেয়াঘাট এলাকায় ঘটানাটি ঘটে।
আরো পড়ুন:
খুলনায় গলাকেটে বাবাকে হত্যার অভিযোগ ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে
শরীয়তপুরে জমি নিয়ে বিরোধে শিশু তায়েবা খুন: এসপি
রিয়া বিশ্বাস টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর উত্তরপাড়ার হরিচাদ বিশ্বাসের স্ত্রী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
টুঙ্গিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর জানান, হরিচাদ বিশ্বাসের স্ত্রী রিয়া বিশ্বাস কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। গতকাল সন্ধ্যার পর তিনি তার ১০ দিন বয়সী কন্যাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। বর্নি মধ্যপাড়া খেয়াঘাট এলাকায় বর্ণি বাওড়ে নিজের সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করতে পানিতে ঝাঁপ দেন রিয়া। এসময় এলাকার কয়েকজন লোক তাকে পানিতে ভাসতে দেখে নৌকা নিয়ে উদ্ধার করেন। তাদের কাছে মেয়েকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বলে জানান রিয়া।
তিনি আরো জানান, পুলিশে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাওড় থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে। শিশুটির মাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
ঢাকা/বাদল/মাসুদ