শরীয়তপুরের জাজিরায় ২৫ বছর ধরে চায়ের দোকান চালাচ্ছেন জাহাঙ্গীর ফকির (৫০)। পদ্মার ভাঙনে সেটি বিলীন হওয়ায় তিনি এখন দিশাহারা। শুধু জাহাঙ্গীর নন, তাঁর মতো আরও অন্তত ৩৪ জনের দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জীবিকার একমাত্র সম্বল হারিয়ে দিশাহারা তাঁরা; পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না।

পদ্মা নদীর এমন আগ্রাসী ভাঙনে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৫০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার নদীতে বিলীন হওয়ার পর পুরো বাজারটি নদীভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাটে গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের অন্যতম বড় বাজার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে জানান, গত ৫০ বছরে পদ্মার ভাঙনের কারণে বাজারটি ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে সরে এসেছে। এরই মধ্যে জাজিরার নাওডোবা এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু। এ ছাড়া নাওডোবা এলাকায় সেনানিবাস, পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া, সেতুর টোল প্লাজা, থানা-ফায়ার সার্ভিসসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণকাজের শুরু থেকেই আশপাশের এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেয়। তখন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর ভাটির দিকে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্প এলাকায় রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। ওই বাঁধের পাশেই মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার। গত বছর নভেম্বরে ওই বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়ে। দফায় দফায় ভাঙনে বাঁধের এক কিলোমিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাটের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর ফকির বলেন, তিন প্রজন্ম ধরে পদ্মা নদীর ভাঙন মোকাবিলা করে টিকে আছেন। এখন তাঁর ভিটে-মাটি কিছুই নেই। দোকানটিই একমাত্র অবলম্বন ছিল; সেটিও গ্রাস করেছে পদ্মা। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় যাবেন, তা ভাবতেও পারছেন না।

যেখানে আগে লঞ্চঘাট ছিল, সেখানে চা ও নাশতার দোকান চালান আবদুল আলীম দেওয়ান। তাঁর দোকানটির খুব কাছে চলে এসেছে পদ্মা নদী। তিনি বলেন, এলাকায় যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৫টি দোকান ও স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে কয়েক হাজার মানুষ তাঁদের জীবিকার সঙ্গে সহায়-সম্বলও হারাবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান জানান, ওই বাঁধ সংস্কারের জন্য কাজ শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, জাজিরায় পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যেসব ব্যবসায়ী ও বাসিন্দা নিজেদের সহায়-সম্বল হারিয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর ভাঙনের কবল থেকে হাটবাজার ও স্থাপনা রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর কাজ করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ত ত র ম দবর ঘ ট ব যবস য় এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে বিভিন্ন ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার ৪   

বন্দরে বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত ৪ পলাতক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো বন্দর থানার  রুপালী গেইট এলাকার মৃত আক্তার হোসেনের ছেলে জিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী  শফিক (৩৮)।

একই থানার আলীসারদী এলাকার জসিম মিয়ার ছেলে সিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী জাকির হোসেন (৪৫)।

গোকুল দাসের বাগ এলাকার মুল্লুক চাঁনের ছেলে আলী নুর হোসেন (৪৮) ও চৌরাপাড়া এলাকার জামান মিয়ার ছেলে দিপ্ত (৩৮)।

গ্রেপ্তারকৃতদের সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে উল্লেখিত ওয়ারেন্টে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (১০ আগস্ট)  রাতে বন্দর থানার বিভিন্ন এলাকায় ওয়ারেন্ট তামিল অভিযান চালিয়ে এদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।  
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ