ভারতের বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের মিছিল করে নির্বাচন কমিশন ভবন অভিযান করতে দিল না দিল্লি পুলিশ। সংসদ ভবন চত্বর থেকে বেরোতেই রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রসহ তাঁদের গ্রেপ্তার করা হলো। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে সংসদ মার্গে দেখা গেল সেই অভিনব দৃশ্য। পরে অবশ্য আটক সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আগে থেকেই ঠিক ছিল, বেলা সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনে জড়ো হবেন বিরোধী দলের সব সংসদ সদস্য। বেলা ১১টায় সংসদের অধিবেশন শুরু হলে বিহারে ভোটার তালিকার নিবিড় পর্যালোচনার (এসআইআর) বিরুদ্ধে তাঁরা আলোচনার দাবি জানাতে থাকেন।

লোকসভার দুই কক্ষে স্পিকার ও ডেপুটি চেয়ারম্যান দাবি মানতে অস্বীকার করেন। বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে তাঁরা বাধ্য হন বেলা দুইটা পর্যন্ত সভার কাজ মুলতবি করে দিতে। তারপরই বিরোধীরা একজোট হয়ে শুরু করে ইসি অভিযান।

বিভিন্ন ভাষায় লেখা এসআইআরবিরোধী পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে মল্লিকার্জুন খাড়গে, শারদ পাওয়ার, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র, অখিলেশ যাদব, মহুয়া মৈত্র, শতাব্দী রায়, ডেরেক ওব্রায়ান, টি আর বালু, তিরুচা শিবা, মনোজ ঝাসহ সব দলের দুই শতাধিক সদস্য অভিযান শুরু করেন।

সংসদ ভবন থেকে বেরোনোর পর সংসদ মার্গে কিছুটা এগোতেই দিল্লি পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। অভিযান রুখতে রাস্তায় ব্যারিকেড রাখা হয়েছিল। সেই ব্যারিকেড ডিঙিয়ে সংসদ সদস্যরা এগোতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।

পুলিশের বাধার প্রতিবাদে প্রিয়াঙ্কাসহ নারী সদস্যরা রাস্তায় বসে পড়েন। শারদ পাওয়ার, মল্লিকার্জুন খাড়গের দিকে কেউ কেউ চেয়ার এগিয়ে দেন। রাহুলসহ অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র, মিতালি বাগ অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাহুল, অখিলেশ ও অন্যরা তাঁদের পরিচর্যায় এগিয়ে যান। তাঁদের গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

সেখানে অবস্থান নেওয়া অন্যদের আটক করে অপেক্ষমাণ বাসে তোলা হয়। ‘ইন্ডিয়া’ জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেও আম আদমি পার্টির (এএপি) সদস্যরাও এই অভিযানে শামিল হয়েছিলেন।

পুলিশের দাবি, ইসি দপ্তর অভিযানের আগাম অনুমতি বিরোধী সংসদ সদস্যরা নেননি। বিরোধী সংসদ সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের হেনস্তা করেছে। কারও কারও ওপর বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়েছে।

রাহুল গান্ধী বলেন, এটা সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরির লড়াই। গণতন্ত্র না বাঁচলে সংবিধানও বাঁচানো যাবে না। গণতন্ত্র বাঁচাতে গেলে ইসির পক্ষপাত বন্ধ করতে হবে।

সাম্প্রতিককালে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারের প্রশংসা করে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের বিরাগভাজন হয়েছেন কেরালার কংগ্রেসদলীয় সংসদ সদস্য শশী থারুর। দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়লেও এই অভিযানে তিনিও শামিল হন।

ইসির বিরুদ্ধে রাহুল যেসব অভিযোগ করেছেন, শশী আগেই তা সমর্থন করেছিলেন। আজ সোমবারও তিনি বলেন, রাহুল যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, প্রতিটিই গুরুত্বপূর্ণ ও যথাযথ। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া জরুরি। ইসি তা এড়াতে পারে না, বরং উত্তর না দিলেও মানুষের মনে ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন জাগবে।

আজ বিরোধীদের অভিযান চলাকালেই ইসি জানায়, বেলা ১১টার দিকে ৩০ জন সংসদ সদস্যকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে সময় সংসদ মার্গে বিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি চলছিল।

মল্লিকার্জুন খাড়গে ‘এক্স’ মারফত বলেন, তাঁরা ইসিতে স্মারকলিপি জমা দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দিল্লি পুলিশ তাঁদের সেই গণতান্ত্রিক অধিকারও হরণ করে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দেশ যেন এক মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে: হাফিজ উদ্দিন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘দেশে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। কখনো সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা, কখনো সাধারণ মানুষকে হত্যা—দেশ যেন এক মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে।’

শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকোয়েট হলে ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল খুলনা মহানগর ও জেলা শাখা এ সভার আয়োজন করে।

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একমাত্র একজন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছাড়া কেউ গণ-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি। এদের অনেকেই শেখ হাসিনার দোসর ছিল। যে কারণে শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী একই আছে। মাঝখান থেকে সুযোগ নিয়েছে একটি রাজনৈতিক দল—যারা একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। তারা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কীভাবে জানি না, তাদের প্রতিনিধি বসিয়ে দিয়েছে এবং তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে যেসব সুযোগ পাওয়া যায়, সেটি দিব্যি ব্যবহার করছে। আর আমরা বিএনপির কর্মীরা শুধু যুদ্ধ করে গেলাম, জীবন দিয়ে গেলাম, কতবার জেলে গিয়েছি তার হিসাব নাই।’

মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একাত্তরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বারা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিল। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যই থাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যও সেটিই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবে—এ কথা তারা তখন চিন্তাই করেনি। স্বাধীনতার পর তারা কল্পকাহিনি শুরু করল যে অনেক আগে থেকেই তারা স্বাধীনতার জন্য লড়ছিল। বাংলাদেশের ছাত্র, জনতা, যুবক, শ্রমিকদের বীরত্বের কাহিনি আওয়ামী লীগের আমলে জনগণকে জানতে দেওয়া হয়নি।’

একাত্তরের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের এ জাতি চিনল না—এটা দুঃখের বিষয়। অধিকাংশ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন লুঙ্গি পরা, খালি পায়ে, মাথায় গামছা বেঁধে খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতার পর দেখলাম ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী মহানগরের ছেলেরা সব মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় রাজনৈতিক দলগুলো আলোতে আসার সুযোগ দেয়নি।’

জামায়াতের পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাওয়া নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা নির্বাচন চায় না। তারা তো অলরেডি ক্ষমতা ভোগ করছে। নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। তারা বলে পিআর সিস্টেমে নির্বাচন। এই দেশের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে ভোট দিয়ে আসছে একজন প্রতিনিধিকে—এলাকার মানুষের আপদ-বিপদে যাঁকে পাওয়া যায়। যিনি কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, এমন মানুষকেই ভোট দেয়। কিন্তু তারা মনে করে আগামী দিনে তো আমরা ক্ষমতায় যেতে পারব না, বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। সুতরাং বিএনপি যাতে ক্ষমতায় যেতে না পারে, এ জন্যই তারা পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায়। বাংলাদেশের জনগণ পিআর সিস্টেম বোঝে না, তারা পছন্দের ব্যক্তিকে দেখতে চায় তাদের প্রতিনিধি হিসেবে।’

আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান এবং খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল আলম। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের খুলনা মহানগরের সভাপতি শেখ আলমগীর হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশ যেন এক মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে: হাফিজ উদ্দিন
  • ৭১ এর মতো ২৪ সালেও বুক পেতে দিয়েছেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী: হা
  • সংস্কারের ৯৯ শতাংশই বিএনপি আগে উপস্থাপন করেছে: তারেক রহমান
  • গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে