স্থানীয় বাসিন্দারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন
Published: 13th, August 2025 GMT
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর মৃত্যুর চেয়ে নির্মম বাস্তবতা আর কী হতে পারে। নদী বাঁচানোর দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের থাকলেও তারা তা কতটা যথাযথ পালন করছে বা করতে পারছে, নদীগুলোর করুণ পরিণতিতেই তা স্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় জনগণকেই নদী সুরক্ষার কাজে হাত দিতে বাধ্য হতে হলো। প্রায় ২০ বছর ধরে মৃতপ্রায় একটি নদীতে তাঁরা পানির প্রবাহ ফিরিয়ে এনেছেন। এটি নিঃসন্দেহে দারুণ একটি দৃষ্টান্ত।
ভুলুয়া নদী লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলা এবং নোয়াখালীর সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা অংশে নদী রয়েছে ৪০ কিলোমিটার। নদীটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ২০টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে। এই নদী মরে যাওয়ায় পানিনিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে, ফলে গত বছর এই এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা ও বন্যা হয়েছিল। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ ডুবে গিয়ে মানুষের জীবন ও জীবিকায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বক্তব্য থেকে জানা যায়, ভুলুয়া নদীর ভরাট হয়ে যাওয়ার মূল কারণ মেঘনার পলি এবং সেই সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ দখল ও স্থাপনা। পাউবো একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা করেছে, যা অনুমোদিত হলে খননকাজ শুরু হবে। কিন্তু এই অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হতে হতে নদীটি হয়তো পুরোপুরি মৃতপ্রায় হয়ে যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় ব্যক্তিদের উপলব্ধি হয় যে নদীটি বাঁচলেই তবে তাঁদের জীবন বাঁচবে। তাই তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য এই কাজে নেমে পড়েন। নিজেরাই চাঁদা তুলে নদীখননের কাজ শুরু করেন। দিনমজুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষ নিজেদের সাধ্যমতো ১০০, ৫০০ বা ১০০০ টাকা দিয়ে এই মহতী কাজে অংশ নেন। যখন সরকারি দপ্তরগুলো প্রকল্পের প্রস্তাব আর অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রতায় আটকে থাকে, তখন সাধারণ মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।
পাউবোর উচিত হবে দ্রুত প্রশাসনিক ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে এই খননকাজকে আরও গতিশীল ও টেকসই করা। দ্বিতীয়ত, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী দখলমুক্ত না হলে যেকোনো খননকাজই অর্থহীন হবে। তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে পলি জমার সমস্যা ও অবৈধ দখল ঠেকানো যায়, এমন পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভুলুয়া নদীর এ ঘটনা প্রমাণ করে যে সদিচ্ছা থাকলে নদী সুরক্ষা করা সম্ভব। ভুলুয়াপারের মানুষ স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর প্রতি এমন বার্তাই দিলেন। আমরা আশা করব, নদী রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা নদীর প্রতি আরও যত্নবান হবেন। আর আমরাও লক্ষ্মীপুরের মানুষের মতো সচেতন হব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লক ষ ম প র
এছাড়াও পড়ুন:
স্থানীয় বাসিন্দারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীর মৃত্যুর চেয়ে নির্মম বাস্তবতা আর কী হতে পারে। নদী বাঁচানোর দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের থাকলেও তারা তা কতটা যথাযথ পালন করছে বা করতে পারছে, নদীগুলোর করুণ পরিণতিতেই তা স্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় জনগণকেই নদী সুরক্ষার কাজে হাত দিতে বাধ্য হতে হলো। প্রায় ২০ বছর ধরে মৃতপ্রায় একটি নদীতে তাঁরা পানির প্রবাহ ফিরিয়ে এনেছেন। এটি নিঃসন্দেহে দারুণ একটি দৃষ্টান্ত।
ভুলুয়া নদী লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলা এবং নোয়াখালীর সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা অংশে নদী রয়েছে ৪০ কিলোমিটার। নদীটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ২০টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে। এই নদী মরে যাওয়ায় পানিনিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে, ফলে গত বছর এই এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা ও বন্যা হয়েছিল। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ ডুবে গিয়ে মানুষের জীবন ও জীবিকায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বক্তব্য থেকে জানা যায়, ভুলুয়া নদীর ভরাট হয়ে যাওয়ার মূল কারণ মেঘনার পলি এবং সেই সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ দখল ও স্থাপনা। পাউবো একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা করেছে, যা অনুমোদিত হলে খননকাজ শুরু হবে। কিন্তু এই অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হতে হতে নদীটি হয়তো পুরোপুরি মৃতপ্রায় হয়ে যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় ব্যক্তিদের উপলব্ধি হয় যে নদীটি বাঁচলেই তবে তাঁদের জীবন বাঁচবে। তাই তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য এই কাজে নেমে পড়েন। নিজেরাই চাঁদা তুলে নদীখননের কাজ শুরু করেন। দিনমজুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষ নিজেদের সাধ্যমতো ১০০, ৫০০ বা ১০০০ টাকা দিয়ে এই মহতী কাজে অংশ নেন। যখন সরকারি দপ্তরগুলো প্রকল্পের প্রস্তাব আর অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রতায় আটকে থাকে, তখন সাধারণ মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।
পাউবোর উচিত হবে দ্রুত প্রশাসনিক ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে এই খননকাজকে আরও গতিশীল ও টেকসই করা। দ্বিতীয়ত, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী দখলমুক্ত না হলে যেকোনো খননকাজই অর্থহীন হবে। তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে পলি জমার সমস্যা ও অবৈধ দখল ঠেকানো যায়, এমন পদক্ষেপ নিতে হবে।
ভুলুয়া নদীর এ ঘটনা প্রমাণ করে যে সদিচ্ছা থাকলে নদী সুরক্ষা করা সম্ভব। ভুলুয়াপারের মানুষ স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর প্রতি এমন বার্তাই দিলেন। আমরা আশা করব, নদী রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা নদীর প্রতি আরও যত্নবান হবেন। আর আমরাও লক্ষ্মীপুরের মানুষের মতো সচেতন হব।