স্টিভ জবস, জেফ বেজোস ও ল্যারি এলিসন কি দত্তক সন্তান ছিলেন
Published: 20th, September 2025 GMT
বিশ্বের সফল উদ্যোক্তাদের আমরা সাধারণত চিনি তাঁদের ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টি, উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি আর নিরলস পরিশ্রমের কারণে। তবে তাঁদের অনেকের জীবনের অজানা অধ্যায় অনেকেরই অগোচরে রয়ে গেছে। প্রযুক্তিজগতের তিন মহিরুহ অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন শৈশবে সবাই দত্তক সন্তান ছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকে বেড়ে উঠেছেন ভিন্ন পরিবারে। অবশ্য সেসব পরিবার থেকে তাঁরা ভালোবাসা পেয়েছেন। পেয়েছেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও। শৈশবের সেই অভিজ্ঞতা তাঁদের গড়ে তুলেছে দৃঢ়চেতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও সৃজনশীল মানুষ হিসেবে। দেখে নেওয়া যাক প্রযুক্তিজগতের এই তিন মহিরুহের জীবনের অজানা অধ্যায় সম্পর্কে।
স্টিভ জবসস্টিভ জবসের জন্ম সিরীয় শিক্ষার্থী আবদুলফাত্তাহ জন্দালি ও মার্কিন তরুণী জোয়ান শিবলের ঘরে। জোয়ানের পরিবার সম্পর্কটিতে আপত্তি জানানোয় তিনি সন্তানকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে যে দম্পতি নবজাতককে নিতে রাজি হয়েছিলেন, ছেলেসন্তান জেনে পিছিয়ে আসেন। পরে কর্মজীবী দম্পতি পল ও ক্লারা জবস তাঁকে দত্তক নেন। দত্তক মা–বাবার প্রতি জবসের টান ছিল গভীর। তিনি তাঁদেরকেই নিজের প্রকৃত মা–বাবা মনে করতেন। জৈবিক মা–বাবা প্রসঙ্গে তিনি বলতেন, ‘তাঁরা কেবল আমার শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর উৎস।’ পল-ক্লারার স্নেহ ও উৎসাহে ছোটবেলা থেকেই জবসের ভেতরে জন্ম নেয় কৌতূহল, সৃজনশীলতা আর নতুন কিছু করার তাগিদ। সেগুলোই পরবর্তী সময়ে তাঁকে অ্যাপল ও পিক্সারে উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে দেয়।
জেফ বেজোসজেফ বেজোসের জন্মনাম ছিল জেফরি প্রেস্টন জর্গেনসেন। তাঁর মা জ্যাকলিন কিশোরী বয়সে মা হয়েছিলেন। জেফের বয়স যখন মাত্র ১৭ মাস, তখন জ্যাকলিন স্বামীকে তালাক দেন। জেফের যখন চার বছর বয়স তখন তাঁর মা জ্যাকলিন বিয়ে করেন কিউবা থেকে আসা অভিবাসী মিগেল ‘মাইক’ বেজোসকে। মাইকই জেফকে দত্তক নেন এবং তখন থেকেই তাঁর পদবি হয়ে যায় বেজোস। মাইক ছিলেন শৃঙ্খলাবদ্ধ ও পরিশ্রমী মানুষ। তাঁর কাছ থেকেই ছোট জেফ শিখেছিলেন শেখার আনন্দ, অধ্যবসায়ের গুরুত্ব আর জীবনের নৈতিকতা। বেজোস পরে স্বীকার করেছেন, মাইক তাঁর জীবনের প্রধান অনুপ্রেরণা ছিলেন। সেখান থেকেই জন্ম নেয় বিজ্ঞানের প্রতি কৌতূহল, প্রযুক্তির প্রতি ভালোবাসা ও ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টি। দত্তক হয়ে পাওয়া এই পরিবারই তাঁকে পরিণত করে অ্যামাজনের স্বপ্নদ্রষ্টা উদ্যোক্তায়।
ল্যারি এলিসনল্যারি এলিসনের জন্ম নিউইয়র্কে। ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর গর্ভে। জন্মের পরপরই তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। তখন তাঁর মা তাঁকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে খালা লিলিয়ান ও খালু লুইস এলিসন তাঁকে শিকাগোতে নিজেদের কাছে নিয়ে আসেন। শৈশব থেকেই এলিসন জানতেন, তিনি দত্তক সন্তান। তবে ১২ বছর বয়সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেন। লিলিয়ান ছিলেন স্নেহশীল, আর লুইস ছিলেন কঠোর স্বভাবের। দক্ষিণ শিকাগোর সাধারণ জীবনযাপন তাঁকে বানায় আত্মনির্ভর ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। প্রতিকূল শৈশবই তাঁকে শক্ত করে তোলে। সেই দৃঢ়তা নিয়েই তিনি পরে ওরাকলের মাধ্যমে গড়ে তোলেন প্রযুক্তিজগতের এক বিশাল সাম্রাজ্য। অনেক বছর পরে ৪৮ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার জৈবিক মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। নিজের সাফল্যকে তিনি তাই প্রায়ই দেখেন ‘স্বনির্মিত মানুষের জয়’ হিসেবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ট ভ জবস বছর বয়স র জ বন র পর ব র সন ত ন র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যান্টার্কটিকায় সাগরের তলদেশে মাছের ভিন্ন আবাসস্থলের খোঁজ
অ্যান্টার্কটিকার পশ্চিম ওয়েডেল সাগরে ১ হাজারের বেশি মাছের আবাসস্থল খুঁজে পেয়েছে একটি ডুবো রোবট। সমুদ্রের তলদেশে থাকা আবাসস্থলটি বিক্ষিপ্ত অবস্থার বদলে সুস্পষ্ট নকশায় সজ্জিত। অ্যান্টার্কটিকার লারসেন সি আইস শেলফ বা বরফের স্তর থেকে বিশাল আইসবার্গ ভেঙে যাওয়ার পর উন্মোচিত হওয়া আবাসস্থলটি বহু দশক ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা সুসংগঠিত প্রজননক্ষেত্রের দিকে ইঙ্গিত করছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা ২৭ ঘণ্টার সমুদ্র তলদেশের ভিডিও বিশ্লেষণ করে মাছের আবাসস্থলের মানচিত্র তৈরি করেছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এসেক্সের বিজ্ঞানী রাসেল বি কনেলি বলেন, এই অভিযানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে ছয়টি স্বতন্ত্র জ্যামিতিক বাসার নকশার খোঁজ। রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকেলের মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিক মাছের বাসার খোঁজ পাওয়া গেছে। রোবটের চোখে বক্ররেখা, রেখা, গুচ্ছ, ডিম্বাকৃতি, ইউ আকৃতি ও বিচ্ছিন্ন এককভাবে গোষ্ঠীভুক্ত বাসার অবস্থার চিত্র ধারণ করা হয়েছে। অ্যান্টার্কটিকার সাগরে এমন বাসার বিন্যাস মাছের সেলফিশ হার্ড বা স্বার্থপরভাবে গোষ্ঠীবদ্ধ থাকার তত্ত্বের সঙ্গে খাপ খায়। এই ধারণা অনুসারে শিকারি প্রাণীর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে প্রাণীরা তাদের প্রতিবেশী প্রাণীদের নিজেদের ও শিকারিদের মাঝে রাখে।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে এ৬৭ আইসবার্গ লারসেন সি থেকে ভেঙে যায়। তখন বরফ ঢাকা এলাকায় গবেষণা শুরু হয়। বরফের খণ্ডটি প্রায় ২২৪০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে ছিল। বরফখণ্ড ভেসে যাওয়ার পরে সমুদ্রের তলদেশের বাসস্থানের তথ্য জানা যায়। ২০১৯ সালের ওয়েডেল সাগর অভিযানের সময় প্রকৌশলীরা এসএ আগুলহাস ২ জাহাজ থেকে রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকেল পরিচালনা করে। রোবটে একটি ক্যামেরা ও লেজার আছে। রোবটের মাধ্যমে দেখা যায়, খোঁজ পাওয়া বাসা আসলে ইয়েলোফিন নোটি প্রজাতির। এই ছোট মাছ মেরু অঞ্চলের পানিতে পাওয়া যায়।
কমিশন ফর দ্য কনজারভেশন অব অ্যান্টার্কটিক মেরিন লিভিং রিসোর্সেস ওয়েডেল সি এমপিএ বা মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া ঘোষণা করার পরিকল্পনা করেছে। পুরো গবেষণার ফলাফল ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেরিন সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: আর্থ