সুন্দরবনে দস্যুতা ফিরে আসা শুধু জীবিকার জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল লোকদের জন্য হুমকি নয়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের ত্রাতা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়া মহাপ্রাণ বনটির প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের জন্যও অশনিসংকেত। ডাঙার মহাজন কোম্পানি ও বনের ডাকাতদের যৌথ চক্র এক বছরের মধ্যে যেভাবে বন ও বনজীবীদের অশেষ দুর্দশার কারণ হয়ে উঠেছে, তা আমাদের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা ও ভঙ্গুরতার মূর্ত প্রতীক।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তার সুযোগে সুন্দরবনে দস্যুতার প্রত্যাবর্তন হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩২টি বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সুন্দরবন ডাকাতমুক্ত হয়েছিল। ফলে অপহরণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজি, মাছ লুট, জোর করে শ্রম দিতে বাধ্য করার মতো অপরাধের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষেরা। বর্তমানে ছোট–বড় অন্তত ১৪টি বাহিনী আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সুন্দরবনের নদীতে তাদের ভাসমান আস্তানা গড়ে উঠেছে। জেলে, মৌয়াল, কাঁকড়া সংগ্রহকারীসহ বনজীবীরা তাদের হাতে অসহায়ভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। চাঁদা আর মুক্তিপণ দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে অসংখ্য পরিবার।

সুন্দরবনে কার্যত এখন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ শূন্যের কোঠায়। কেননা বনদস্যুদের কাছে যে ধরনের অস্ত্র রয়েছে, তাদের প্রতিরোধ করার মতো সক্ষমতা বনরক্ষীদের নেই। কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর টহল ও নজরদারিও অপ্রতুল। ফলে সুন্দরবনে এখন বনদস্যুদের সমান্তরাল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর লোকালয় থেকে এ কাজে তাদের সহায়তা করছেন ‘মহাজন কোম্পানি’ হিসেবে পরিচিত মহাজনেরা। তাঁরাই নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ডাকাতদের সঙ্গে বনজীবীদের বন্দোবস্ত করে দেন। আবার তাঁরাই দর-কষাকষি করে জিম্মি বনজীবীদের মুক্তিপণের টাকা পাঠান। কিন্তু এই ‘উপকারে’ বনজীবীরা ঋণের ফাঁদে আটকা পড়ছেন। এর মধ্য দিয়ে সুন্দরবনে একধরনের আধুনিক দাসতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করি।

দস্যু ও ‘মহাজন কোম্পানির’ যে সমান্তরাল প্রশাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তাতে সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এবার অবৈধ জাল ব্যবহার করে ও নির্বিচার বিষ ছিটিয়ে মাছ শিকার কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে নদী-খালে মাছ, কাঁকড়া আগের মতো মিলছে না। জলজ প্রাণী দেদার মারা পড়ায় সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানে স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। আবার বিষে মারা যাওয়া মাছ, কাঁকড়া খেয়ে নাগরিকেরাও স্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। বনদস্যুরা অবাধ হরিণ নিধন করেও সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

বনদস্যুমুক্ত সুন্দরবন আবারও ডাকাতদের অভয়াশ্রমে পরিণত হওয়া যারপরনাই উদ্বেগজনক। আত্মসমর্পণকারী ডাকাতদের একটা অংশ আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অর্থ হচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের পুনর্বাসন করা যায়নি। তারা যেন দস্যুবৃত্তিতে ফিরে না আসতে পারে, তার জন্য যে প্রশাসনিক ও সমাজভিত্তিক নজরদারি দরকার ছিল, সেটাও যে নেই, তারও প্রমাণ এ ঘটনা। ফলে শুধু ঘটা করে আত্মসমর্পণ করানোই যে যথেষ্ট নয়, এই শিক্ষাটাও নেওয়া প্রয়োজন।

সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এবং বনের ওপর নির্ভরশীল লোকদের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত করতে বনদস্যু মুক্ত করার বিকল্প নেই। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বনরক্ষীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন ডাকাতদের হাতে। সুন্দরবনের বনদস্যু ও মহাজনদের বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর অভিযান চালানো প্রয়োজন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র বনদস য র জন য বনজ ব

এছাড়াও পড়ুন:

পূজায় থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা: র‌্যাব 

শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব-১।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় র‌্যাব-১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) পারভেজ রানা জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়। ভক্তরা ঘর-বাড়ি, পূজামণ্ডপ ও মন্দির সাজানোর কাজ শুরু করেন এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। উৎসবকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উৎসব শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও আশপাশের এলাকায় বিশেষ তৎপরতা চালানো হচ্ছে। মহালয়ার দিন থেকেই পূজার প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় র‌্যাব-১ বাড়তি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পূজামণ্ডপ কেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ টহল চালানো হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

টেকনাফে মানব পাচারকারী চক্রের আস্তানা থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধার

বগুড়ায় ৫ মণ ওজনের কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার

তিনি জানান, শহর ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট, যেখানে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি মণ্ডপ এলাকায় সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। দুর্গাপূজার সময় যাতে কেউ নাশকতা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সব ধরনের সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। পূজা উদযাপনকে ঘিরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন ও পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে র‌্যাব।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লোকালয়ের প্লাস্টিক বর্জ্য সুন্দরবনে, যায় মাছের পেটেও
  • দুর্গাপূজা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটর করা হচ্ছে: র‍্যাব মহাপরিচালক
  • পূজায় থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা: র‌্যাব 
  • সিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভের মামলায় ছাত্রদল ও যুবদলের চার নেতা কারাগারে
  • সুন্দরবন এলাকার উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় দাবি
  • দুর্গাপূজায় ৮০ হাজার ভলেন্টিয়ার থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা