বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্লাড ক্যানসারের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না
Published: 24th, September 2025 GMT
‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই সিএমএল ডায়াগনোসিস হয়। রোগী হয়তো অন্য কোনো একটা সমস্যার কারণে ডাক্তারের কাছে গেলেন, ওখানে একটা রক্তের পরীক্ষায় ধরা পড়ল তাঁর সিএমএল, যা অনেক ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স স্টেজে ধরা পড়ে। রোগীরা বোঝেনই না, তাঁর সিএমএল হয়েছে। সেই অর্থে আপনি এটাকে নীরব ঘাতক বলতে পারেন।’
কথাগুলো বলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের রক্তরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা.
নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় আলোচনায় অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. এ যুবায়ের খান। তিনি বাংলাদেশে সিএমএল বা ব্লাড ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা ও প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন। পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
শুরুতেই উপস্থাপক জানান, সিএমএল একটি অত্যন্ত জটিল ব্লাড ক্যানসার। বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট ক্যানসারের মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ক্যানসারে নতুনভাবে আক্রান্ত হবেন, যার অর্ধেকেই হবে ব্লাড ক্যানসার।
উপস্থাপক অতিথির কাছে ‘ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া বা সিএমএল’ সম্পর্কে জানতে চান। উত্তরে ডা. এ যুবায়ের খান বলেন, ‘সাধারণত ব্লাড ক্যানসার অনেক রকমের হয়ে থাকে, তারই একটি রূপ হচ্ছে সিএমএল। তবে ব্লাড ক্যানসার ঠিক কী কারণে হয়, তার আসল কারণ আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খুঁজে পাই না। অন্তত এটুকু আমরা জানি যে সিএমএলসহ বেশির ভাগ ব্লাড ক্যানসারই আমাদের ক্রোমোজোমাল অ্যাবনরমালিটিসের কারণে হয়ে থাকে। অর্থাৎ আমাদের দেহের জীবনরহস্যের মূল উপাদান ক্রোমোজোমের মধ্যে যদি কোনো ভুল থাকে বা ক্রোমোজোমাল বা জেনেটিক এরর থাকে, সে জন্যই সব ধরনের ব্লাড ক্যানসার হয়ে থাকে। ঠিক তেমনিভাবে সিএমএল যে ক্রোমোজোমাল অ্যাবনরমালিটিসের জন্য হয়, সেটি হচ্ছে ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজোম। নরমালি আমাদের শরীরে যে ক্রোমোজোমগুলো থাকে, এর মধ্যে ৮ নম্বর ও ২১ নম্বর ক্রোমোজোম—এই দুটোর মধ্যে একটা ফিউশন জিন উৎপাদন করে। সেটি হচ্ছে ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজোম।’
সিএমএলের প্রাথমিক উপসর্গগুলো কী? এ প্রসঙ্গে ডা. এ যুবায়ের খান বলেন, ‘আমাদের রক্তের সাধারণত ডবলিউবিসি কাউন্ট থাকে ১০ থেকে ১১ হাজারের মধ্যেই, যা সিএমএলের ক্ষেত্রে এর ডবলিউবিসি পরিমাণ ১০ গুণ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে ২ লাখ থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত হয়ে যায়। ফলে রোগীর পানি পান কম হবে। ঘাম বেশি হবে। অবসন্নতা অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেবে। ক্ষুধামান্দ্য হবে, খাওয়াদাওয়ায় পেট অল্পতেই ভরে যায়। শরীরের স্প্লিহা বিশাল আকার ধারণ করে। শরীর দুর্বল ইত্যাদি সমস্যা হয়। তাই কেউ যদি এমন লক্ষণগুলো দেখেন, কালক্ষেপণ না করে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।’
সিএমএল শনাক্তের জন্য বিদ্যমান টেস্ট সম্পর্কে ডা. এ যুবায়ের খান বলেন, ‘মাত্র দুটি পরীক্ষা করেই আমরা সিএমএল শনাক্ত করতে পারি। একটি হচ্ছে নরমাল সিবিসি, অন্যটি পিবিএফ। আরেকটা স্পেসিফিক টেস্ট হলো পিসিআর। এসব পরীক্ষা আমাদের দেশেই রয়েছে।’
সিএমএল সাধারণত কোন স্টেজে ধরা পড়ে এবং এর সঙ্গে চিকিৎসাব্যবস্থাগুলো কতটা নির্ভরশীল? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. এ যুবায়ের খান বলেন, ‘সিএমএল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স স্টেজে ধরা পড়ে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে সে ক্ষেত্রে টার্গেটেড থেরাপি ও ওষুধের মাধ্যমেই আমরা খুব সহজে চিকিৎসা করতে পারি। আর অ্যাডভান্স স্টেজে বা সিএমএল ব্লাস্ট ক্রাইসিস হলে স্পেসিফিক কেমোথেরাপি দিয়ে রোগীর বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন না করা পর্যন্ত ভালো হওয়ার সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশে ব্লাড ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, রোগ নির্ণয়, ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা-সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. এ যুবায়ের খানউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এ য ব য় র খ ন বল ন স এমএল আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্লাড ক্যানসারের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না
‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই সিএমএল ডায়াগনোসিস হয়। রোগী হয়তো অন্য কোনো একটা সমস্যার কারণে ডাক্তারের কাছে গেলেন, ওখানে একটা রক্তের পরীক্ষায় ধরা পড়ল তাঁর সিএমএল, যা অনেক ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স স্টেজে ধরা পড়ে। রোগীরা বোঝেনই না, তাঁর সিএমএল হয়েছে। সেই অর্থে আপনি এটাকে নীরব ঘাতক বলতে পারেন।’
কথাগুলো বলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের রক্তরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. এ যুবায়ের খান। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ছিল ‘বিশ্ব সিএমএল দিবস’। এ উপলক্ষে এসকেএফ অনকোলজির আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা।
নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় আলোচনায় অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. এ যুবায়ের খান। তিনি বাংলাদেশে সিএমএল বা ব্লাড ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা ও প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন। পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
শুরুতেই উপস্থাপক জানান, সিএমএল একটি অত্যন্ত জটিল ব্লাড ক্যানসার। বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট ক্যানসারের মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ক্যানসারে নতুনভাবে আক্রান্ত হবেন, যার অর্ধেকেই হবে ব্লাড ক্যানসার।
উপস্থাপক অতিথির কাছে ‘ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া বা সিএমএল’ সম্পর্কে জানতে চান। উত্তরে ডা. এ যুবায়ের খান বলেন, ‘সাধারণত ব্লাড ক্যানসার অনেক রকমের হয়ে থাকে, তারই একটি রূপ হচ্ছে সিএমএল। তবে ব্লাড ক্যানসার ঠিক কী কারণে হয়, তার আসল কারণ আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খুঁজে পাই না। অন্তত এটুকু আমরা জানি যে সিএমএলসহ বেশির ভাগ ব্লাড ক্যানসারই আমাদের ক্রোমোজোমাল অ্যাবনরমালিটিসের কারণে হয়ে থাকে। অর্থাৎ আমাদের দেহের জীবনরহস্যের মূল উপাদান ক্রোমোজোমের মধ্যে যদি কোনো ভুল থাকে বা ক্রোমোজোমাল বা জেনেটিক এরর থাকে, সে জন্যই সব ধরনের ব্লাড ক্যানসার হয়ে থাকে। ঠিক তেমনিভাবে সিএমএল যে ক্রোমোজোমাল অ্যাবনরমালিটিসের জন্য হয়, সেটি হচ্ছে ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজোম। নরমালি আমাদের শরীরে যে ক্রোমোজোমগুলো থাকে, এর মধ্যে ৮ নম্বর ও ২১ নম্বর ক্রোমোজোম—এই দুটোর মধ্যে একটা ফিউশন জিন উৎপাদন করে। সেটি হচ্ছে ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজোম।’
সিএমএলের প্রাথমিক উপসর্গগুলো কী? এ প্রসঙ্গে ডা. এ যুবায়ের খান বলেন, ‘আমাদের রক্তের সাধারণত ডবলিউবিসি কাউন্ট থাকে ১০ থেকে ১১ হাজারের মধ্যেই, যা সিএমএলের ক্ষেত্রে এর ডবলিউবিসি পরিমাণ ১০ গুণ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে ২ লাখ থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত হয়ে যায়। ফলে রোগীর পানি পান কম হবে। ঘাম বেশি হবে। অবসন্নতা অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেবে। ক্ষুধামান্দ্য হবে, খাওয়াদাওয়ায় পেট অল্পতেই ভরে যায়। শরীরের স্প্লিহা বিশাল আকার ধারণ করে। শরীর দুর্বল ইত্যাদি সমস্যা হয়। তাই কেউ যদি এমন লক্ষণগুলো দেখেন, কালক্ষেপণ না করে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।’
সিএমএল শনাক্তের জন্য বিদ্যমান টেস্ট সম্পর্কে ডা. এ যুবায়ের খান বলেন, ‘মাত্র দুটি পরীক্ষা করেই আমরা সিএমএল শনাক্ত করতে পারি। একটি হচ্ছে নরমাল সিবিসি, অন্যটি পিবিএফ। আরেকটা স্পেসিফিক টেস্ট হলো পিসিআর। এসব পরীক্ষা আমাদের দেশেই রয়েছে।’
সিএমএল সাধারণত কোন স্টেজে ধরা পড়ে এবং এর সঙ্গে চিকিৎসাব্যবস্থাগুলো কতটা নির্ভরশীল? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. এ যুবায়ের খান বলেন, ‘সিএমএল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স স্টেজে ধরা পড়ে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে সে ক্ষেত্রে টার্গেটেড থেরাপি ও ওষুধের মাধ্যমেই আমরা খুব সহজে চিকিৎসা করতে পারি। আর অ্যাডভান্স স্টেজে বা সিএমএল ব্লাস্ট ক্রাইসিস হলে স্পেসিফিক কেমোথেরাপি দিয়ে রোগীর বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন না করা পর্যন্ত ভালো হওয়ার সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশে ব্লাড ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, রোগ নির্ণয়, ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা-সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. এ যুবায়ের খান