উত্তর প্রদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)–এর মিছিল ঘিরে মামলা, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক
Published: 24th, September 2025 GMT
‘আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি’ বলা বা লেখা অপরাধ কি না, তা নিয়ে ভারতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসির পর এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ।
আজ বুধবার শ্রীনগরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানসিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরাই শুধু এ ক্ষেত্রে আপত্তি জানাতে পারে।
ওমর আবদুল্লাহ বলেন, হিন্দু ভাই–বোনেরা আরাধ্য দেব–দেবীর ছবি নিয়ে মিছিল করতে পারেন। তাঁদের নামে জয়ধ্বনি দিতে পারেন। শিখ ভাই–বোনেরাও তাঁদের ধর্মীয় গুরুদের ছবি নিয়ে মিছিল করতে পারেন। অন্যায়ের কিছুই তো নেই।
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একইভাবে মুসলিমরাও যদি ধর্মীয় মিছিলে ‘আমি মুহাম্মদ (সা.
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই তিনটি শব্দে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুধু তারাই দেখাতে পারে, যারা মানসিকভাবে দেউলিয়া কিংবা অসুস্থ। “আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি” লেখাতে কেউ কেন আপত্তি করবে, সে জন্য কাউকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে—এটা আমি বুঝতে পারছি না।’
বিতর্কটির সূত্রপাত ৪ সেপ্টেম্বর, ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ বা হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জন্মদিনের দিন। সেদিন উত্তর প্রদেশের কানপুরে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ‘আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি’ লেখা পোস্টার নিয়ে মিছিল করেছিলেন। ওই লেখা–সংবলিত ব্যানারও টাঙানো হয়েছিল।
সেই পোস্টার ও ব্যানার ঘিরে কোনো কোনো মহল থেকে আপত্তি জানানো হয়। পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। উপপুলিশ কমিশনার দীনেশ ত্রিপাঠি গণমাধ্যমকে জানান, ধর্মীয় শোভাযাত্রায় নতুন রীতি যুক্ত করা নিয়মবিরুদ্ধ। পুলিশ তাতেই আপত্তি জানিয়েছে। যদিও কোনো কোনো স্থানে হিন্দু–মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনার কথাও শোনা গিয়েছিল।
৯ সেপ্টেম্বর কানপুর পুলিশ ধর্মীয় শোভাযাত্রায় প্রচলিত রীতির বদলে নতুন রীতি এনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ এনে অজ্ঞাত ১৫ জনসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
পুলিশের মামলা নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় ১৫ সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদের এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি’ লেখার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। অপরাধও নয়। পোস্টে তিনি কানপুর পুলিশকে ট্যাগ করেন ও তাঁদের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন।
ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে ‘আমি মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবাসি’ লেখা ব্যানার নিয়ে মিছিল করার অভিযোগে কানপুরে ২৪ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে পুলিশ। ওই ঘটনার প্রতিবাদে একই লেখা ব্যানার নিয়ে রাজ্যের লক্ষ্ণৌতে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, লক্ষ্ণৌতেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র স প ট ম বর ম ছ ল কর ম হ ম মদ আপত ত
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের চেকে তোলা টাকা থেকে ৮৩ লাখ উদ্ধার
বিদেশে পলাতক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে ইস্যু করা ১১টি চেক ব্যবহার করে চারটি ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার বিকেলে নগরের কালুরঘাট এলাকায় সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরামিট পিএলসি কার্যালয়ের ড্রয়ার ও ভল্ট থেকে এই টাকা জব্দ করা হয়। এর আগে দুদক আরামিটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে। তিনিই ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা তুলেছিলেন সম্প্রতি। দুদক বলছে, টাকাগুলো নগদ করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারের জন্য রাখা হয়েছিল।
দুদকের আইনজীবী মোকাররম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সই করা চেকগুলোর আসল কপিসহ (মুড়ি) জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের মালিকের অনুপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিকেলে ব্যাংক থেকে তোলা ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জব্দ করেছে দুদক।
দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, আটক জাহাঙ্গীর টাকাগুলোর বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি। টাকাগুলো নগদ করে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে আসছেন। আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দুদক সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখা থেকে ১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ, সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৬ লাখ এবং মেঘনা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তোলা হয়। এর আগে অর্থ পাচার মামলায় দুদকের হাতে গ্রেপ্তার আরামিটের দুই কর্মকর্তার আইনি লড়াইয়ের খরচ বহনের জন্য এ টাকা তোলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই দুই কর্মকর্তা হলেন আরামিট পিএলসির দুই এজিএম মো. আবদুল আজিজ ও উৎপল পাল। ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থ পাচারের মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে দুদক মনে করছে, নতুন করে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলনের সঙ্গেও আত্মসাৎ বা পাচারের যোগসূত্র রয়েছে।
গত ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামান, তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে এই মামলা করেন। মামলায় জাবেদ, তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামান, ভাই-বোন এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার আবদুল আজিজ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তদন্তে অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পর কর্মকর্তা উৎপল পালের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া সাইফুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ এবং উৎপল পাল দুদকের কাছে অর্থ পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁরা জানান, সাইফুজ্জামানের নির্দেশে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে ২৫ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।
আরও পড়ুনসাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের চেক দিয়ে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আটক৪ ঘণ্টা আগেতদন্তে জানা গেছে, সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর সেই টাকা একই ব্যাংকের চারটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করা হয়। পরে এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়। দুদক বলছে, জালিয়াতি ও আত্মসাতের এই ঘটনা ঘটে ২০১৯-২০ সালে। তখন জাবেদ ভূমিমন্ত্রী ছিলেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালত জাবেদ ও তাঁর স্ত্রীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপরও তাঁরা বিদেশে পালিয়ে যান। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, জাবেদের নয়টি দেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, দুবাইতে ২২৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে ১০টি বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় একাধিক সম্পদ রয়েছে।
দুদকের কর্মকর্তাদের মতে, দেশের ভেতর থেকে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন জাবেদ ও তাঁর পরিবার। এভাবে বহু দেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাঁরা।