গুলশান থেকে নড়াইলের সাবেক সংসদ সদস্য কবিরুল হক গ্রেপ্তার
Published: 24th, September 2025 GMT
নড়াইল-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য কবিরুল হককে (মুক্তি) রাজধানীর নিকেতন থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ বুধবার রাত সোয়া নয়টার দিকে গুলশানের নিকেতন এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক খুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, নড়াইল–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কবিরুল হককে রাত নয়টার কিছু সময় পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। তবে কোন মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে, সেটি এখনো ঠিক হয়নি।
কবিরুল হক নড়াইল-১ আসন থেকে ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। গত বছর গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলটির অনেক নেতার মতো কবিরুল হক আত্মগোপনে চলে যান। এর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবিতে হালিমে ‘পচা মাংস’, দোকানে তালা দেওয়ায় ‘হুমকি’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাকিম চত্বরে পচা মুরগির মাংস দিয়ে হালিম তৈরি করার অভিযোগের পর একটি দোকানে প্রশাসন তালা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি অফিসারকে হুমকি দেওয়া নিয়ে কথা উঠেছে।
ঢাবির হিসাব পরিচালকের দপ্তরের উপ-পরিচালক নামজুন নাহার নয়ন ও দোকানের মালিক সাবেক ছাত্রদল নেত্রী লিলির বিরুদ্ধে সিকিউরিটি অফিসার মুনির হোসেনকে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তার কার্যালয়ে গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নয়ন ও লিলির সঙ্গে আরো কয়েকজন সেখানে গিয়েছিলেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা।
আরো পড়ুন:
জাবিতে ছাত্রী হলের ওরিয়েন্টেশনে রাত ১০টার আগে হলে ফেরার নির্দেশনা
খুবিতে নারীর সুরক্ষা-বিষয়ক চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতার সম্মাননা প্রদা
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হল ছাত্রসংসদের ভিপি মাহবুব তালুকদারসহ কয়েকজন হাকিম চত্বরের দোকানে হালিম খেতে যান। তারা হালিমে মুরগির পচা মাংসের টুকরা পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। এ নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে তারা দোকানের ম্যানেজারকে সেই হালিম খেতে বলেন। দোকানের ম্যানেজারও সেটি মুখে নিয়ে ফেলে দেন। তিনি স্বীকার করেন, হালিমে ব্যবহৃত মাংসে সমস্যা আছে।
ম্যানেজার শিক্ষার্থীদের বলেন, “আমরা বুঝতে পারিনি এ মাংসে সমস্যা আছে।” বিষয়টি তখন প্রক্টর অফিস পর্যন্ত গড়ায়।
দোকানের ম্যানেজারকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রক্টর অফিসে যান এবং পচা মাংসের বিষয়ে অভিযোগ দেন।”
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদের নির্দেশে সিকিউরিটি অফিসার প্রক্টর অফিসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘটনা অবহিত হন। দোকানের ম্যানেজারের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। দোকানের ম্যানেজার হালিমে ব্যবহৃত মাংস নষ্ট ছিল বলে স্বীকার করেন।
সিকিউরিটি অফিসার জানান, “যেহেতু আপনি অপরাধ স্বীকার করেছেন, সেহেতু প্রক্টর স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনার দোকানটিতে সাময়িক সময়ের জন্য তালা দেওয়া হবে এবং হালিমের নমুনা ল্যাবরেটরি টেস্টের জন্য পাঠানো হবে।”
এরপর প্রক্টরিয়াল টিমসহ সিকিউরিটি অফিসার গিয়ে দোকানটিতে তালা দেন। কিন্তু দোকানে প্রশাসনের উপস্থিতির আগেই দোকানের কর্মচারীরা হালিমের পাতিল ফাঁকা করে ফেলেন, যে কারণে কোনো নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি।
তবে প্রক্টরিয়াল টিম দোকানটি অস্বাস্থ্যকর দেখতে পায় এবং অন্যান্য মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে। তারা আরো দেখতে পান, দোকানে ডিপ ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।
মঙ্গলবারের এই পদক্ষেপের পর বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের এস্টেট অফিসে যান ঢাবির হিসাব পরিচালকের দপ্তরের উপ-হিসাব পরিচালক নাজমুন নাহার নয়ন ও দোকানের বরাদ্দপ্রাপ্ত মালিক সাবেক ছাত্রদল নেত্রী লিলি। তারা সিকিউরিটি অফিসারকে হেনস্থা করে হুমকি দেন বলে অভিযোগ এসেছে।
উপ-হিসাব পরিচালক ধমকের সুরে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন। তিনি জানতে চান, সিকিউরিটি অফিসার মনির কে, দোকানে তালা দেওয়া হয়েছে কেন, দোকানের কর্মচারীদের বকাঝকা করা হয়েছে কেন?
তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন লিলি। হুমকির সুরে তিনি বলেন, “কবে চাকরিতে জয়েন করেছো? আমাদের চেনো না।”
বাতচিতে জড়িয়ে পড়েন ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মোস্তফা। তিনি উপ-হিসাব পরিচালককে বলেন, “আপনি আমার সামনে আমার অফিসারের সঙ্গে এভাবে কথা বলতেছেন কেন? আপনার কোনো ইস্যু থাকলে সেটি আমার রুমে গিয়ে আমাকে বলেন। এভাবে আপনি হুমকি-ধমকি দিতে পারেন না।”
তখন নয়ন ও লিলি এস্টেট ম্যানেজারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তার উদ্দেশে তারা বলেন, তার অফিসার জানেন না, দোকানটা কার? কেন তিনি দোকানে তালা দিয়েছেন?
এস্টেট ম্যানেজারের কাছেও দোকানে তালা দেওয়ার বিষয়ে তারা জানতে চান ও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। এস্টেট ম্যানেজার তখনও তাদের বলেন, “আপনারা আমার রুমে যান, কোনো বিষয় থাকলে আমি শুনব। এখানে শাউট করবেন না।”
এদিকে দোকানে তালা দেওয়া হলেও বুধবার দুপুরে একটি শাটার খুলে গোপনে পার্সেলে খাবার বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মোস্তফা বলেন, “রাজনৈতিক পেশি শক্তি ব্যবহার করে এক দপ্তরের কমকর্তা অপর দপ্তরের কর্মকর্তাকে গালিগালাজ কীভাবে করলেন, সেটা আমার বুঝে আসে না। দোকান মালিক ছাত্রদের পঁচা মাংস খাওয়াচ্ছেন, সে জন্য আমার অফিসার ব্যবস্থা নিয়েছেন। এখন তদন্ত হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কার বান্ধবীর দোকান, সেটা দেখা হবে না। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
তবে সিকিউরিটি অফিসারকে তার দপ্তরের গিয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নয়ন ও লিলি।
উপ-হিসাব পরিচালক নয়ন বলেন, “কোনো সিনক্রিয়েট হয়নি।”
দোকান মালিক লিলি বলেন, “মব কী জিনিস, সেটা আমি চিনি না। তবে গিয়েছিলাম সেখানে। কোনো ঝামেলা হয়নি।”
জানতে চাইলে সিকিউরিটি অফিসার মুনির হোসেন বলেন, “দোকানটিতে নষ্ট মাংস দিয়ে হালিম রান্না করে বিক্রি করা হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। যেটি দোকানটির ম্যানেজার আমাদের কাছেও স্বীকার করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর স্যারের নির্দেশে দোকানটিতে তালা দেওয়া হয়।”
ঢাকা/সৌরভ/রাসেল