কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু মেহেরপুর সদর উপজেলায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রণোদনা প্রকল্পে যা ঘটেছে, তা সরকারের ভালো উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কৃষকদের বিনা মূল্যে সার ও পেঁয়াজবীজ দেওয়ার কর্মসূচিতে বীজ ক্রয় ও বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, নিম্নমানের বীজ ক্রয় এবং সময়মতো সরবরাহ করতে না পারার ঘটনা প্রমাণ করে, তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতা কতটা প্রকট।

কৃষি মন্ত্রণালয় ‘ডিপিএম’ (সরাসরি বীজ ক্রয়) পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত কৃষকের হাতে বীজ তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সেই সুযোগকে অসদুপায় অবলম্বনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রথম দফায় নিম্নমানের পেঁয়াজবীজ ক্রয় করেন, যার অঙ্কুরোদ্‌গমের হার ছিল মাত্র ৫৫ শতাংশ। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এই হার কমপক্ষে ৮০ শতাংশ হওয়া উচিত। যখন এই অনিয়ম জেলা প্রশাসনের নজরে আসে এবং তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, তখন রাতের আঁধারে গুদাম থেকে সরকারি বীজ সরিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় দফায় একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে যে বীজ কেনা হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, কৃষকদের প্রণোদনাকে কিন্তু কিছু কর্মকর্তা সরকারি অর্থ নয়ছয় করার সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন।

এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক দুর্বলতা ও জবাবদিহির চরম অভাব স্পষ্ট। বীজ মূল্যায়ন ও রিসিভ কমিটির সদস্যরা—যাঁদের বীজ ক্রয়প্রক্রিয়া তদারকির কথা—তাঁরা নিজেরাই জানেন না কোন পদ্ধতিতে বা কার কাছ থেকে বীজ কেনা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের বৈঠক না হওয়ার তথ্য প্রমাণ করে যে এই কমিটি কেবল কাগজে-কলমেই ছিল, বাস্তবে এর কোনো কার্যকারিতা ছিল না। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন, যে কারণে সেখানে তঁার একচ্ছত্র আধিপত্য ও অস্বচ্ছতা তৈরি হয়েছে বলে কমিটির অন্যদের বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়।

সরকারি নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা ছিল, প্রকল্পের অর্থ ব্যয় এবং কার্যক্রমে ভবিষ্যতে অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা কেউই এই অনিয়মের দায় স্বীকার করছেন না। অভিযোগ আছে, এ অনিয়মের সঙ্গে নিচ থেকে ওপরে বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় আছে। যার কারণে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গায় সবচেয়ে বেশি কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হলেও তা সম্পূর্ণ কৃষকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। 

সরকারের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচি কৃষকের জন্য আশীর্বাদ। সেখানে এমন অনিয়ম দেশের খাদ্য উৎপাদন এবং কৃষি অর্থনীতি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমরা আশা করব, শুধু মেহেরপুর নয়; সব জেলার ক্ষেত্রে প্রণোদনার বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত চালানো হোক। কৃষি খাতে অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত অন য ম সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রায় প্রত্যাখ্যান আওয়ামী লীগের

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে দুই নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভিডিও বার্তায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, “আজ যে রায় ঘোষণা করেছে এ রায় বাংলার জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। বাংলার জনগণ এ রায় মানে না, মানবে না।”

আরো পড়ুন:

রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বললেন শেখ হাসিনা

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ‘অতীতের প্রতিশোধ নয়’: প্রধান কৌঁসুলি

তিনি বলেন, “অবৈধ আদালত যে মামলার রায় দিয়েছে সেটি ১৪ অগাস্ট শুরু করে ১৭ নভেম্বর মামলা শেষ করেছে। ৮৪ জন সাক্ষীকে সামনে রেখে ৫৪ জনকে হাজির করে ২০ দিনে মামলা শেষ করেছে। এই দুই মাসের মধ্যে মাত্র ২০ দিন আদালত চলেছে।”

“এর প্রধান বিচারক গত এক মাস অনুপস্থিত ছিলেন। তারপরেও প্রতিশোধের লক্ষ্য নিয়ে মানুষের প্রিয় নেত্রীর বিরুদ্ধে যে রায় দিয়েছে।”

জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, “অচিরেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব”।

এর আগে সোমবার (১৭ নভেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ২ নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মামলার অন্য আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু হয়। দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় ঘোষণা হলো আজ।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ