ভারতের সর্বকনিষ্ঠ শতকোটিপতি অরবিন্দ শ্রীনিবাস, কীভাবে তাঁর উত্থান
Published: 4th, October 2025 GMT
বিশ্বের তরুণ শতকোটিপতিদের নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকে। দেখে নেওয়া যাক ভারতের সর্বকনিষ্ঠ শতকোটিপতি কে। এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের অরবিন্দ শ্রীনিবাস দেশটির সর্বকনিষ্ঠ শতকোটিপতি হয়েছেন।
পারপ্লেক্সিটি এআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী অরবিন্দ শ্রীনিবাস এম৩এম হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট ২০২৫-এ সবচেয়ে ধনী তরুণ ভারতীয় হিসেবে স্থান পেয়েছেন। তালিকা অনুসারে, অরবিন্দর মোট সম্পদের পরিমাণ ২১ হাজার ১৯০ কোটি রুপি বা ২ হাজার ৩৯০ কোটি ডলার। ডেনিস ইয়্যারাটস ও অ্যান্ডি কনউইনস্কির সঙ্গে মিলে শ্রীনিবাস পারপ্লেক্সিটি এআই প্রতিষ্ঠা করেন।
সারা বিশ্বে এখন এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার। অরবিন্দের উত্থানও সেই এআইয়ের হাত ধরে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি পারপ্লেক্সিটি এআই বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল গুগল, জেমিনি ও ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। সম্প্রতি অরবিন্দর কোম্পানি গুগলের ক্রোম ব্রাউজার কেনার প্রস্তাব দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। তিনি গুগল ক্রোম ব্রাউজারটি কেনার জন্য ৩৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার দাম প্রস্তাব করেছিলেন। ‘চেন্নাই বয়’ হিসেবে পরিচিত অরবিন্দ প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তি।
শ্রীনিবাসের জন্ম ১৯৯৪ সালের ৭ জুন, ভারতের তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ গড়ে ওঠে তাঁর। আইআইটি মাদ্রাজে পড়াশোনার সময়ই তিনি রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং ও অ্যাডভান্সড রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং কোর্স পড়াতেন। পরবর্তী সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলেতে কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি করেন তিনি। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল কনট্রাস্টিভ লার্নিং ফর কম্পিউটার ভিশন, রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং, ট্রান্সফরমারভিত্তিক মডেল ব্যবহার করে ছবি তৈরি, চিহ্নিতকরণ ও ভিডিও তৈরি।
লিঙ্কডইন প্রোফাইল অনুযায়ী, ২০২০ ও ২০২১ সালের বসন্ত সেমিস্টারে তিনি ডিপ আনসুপারভাইজড লার্নিং কোর্সও পড়িয়েছেন।
শ্রীনিবাস বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কিছু প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি প্রথমে ওপেনএআইতে রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং নিয়ে কাজ করেন। এরপর লন্ডনে ডিপমাইন্ডে যোগ দেন, যেখানে তাঁর গবেষণার কেন্দ্র ছিল কনট্রাস্টিভ লার্নিং। এরপর তিনি গুগলে কাজ করেন এবং হ্যালোনেট ও রেজনেট-আরএসসহ বিভিন্ন ভিশন মডেল তৈরি করেন। পরে আবার ওপেনএআইয়ে রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসেবে ফিরে আসেন এবং টেক্সট-টু-ইমেজ জেনারেশন মডেল ডাল-ই-২-এর উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।
কী করে পারপ্লেক্সিটি এআই
পারপ্লেক্সিটি এআই চ্যাটজিপিটির মতোই নতুন প্রজন্মের এআইভিত্তিক চ্যাটবট, যেটি গুগলের মতো কেবল লিঙ্কের তালিকা দেয় না, বরং ব্যবহারকারীর প্রশ্ন বুঝে উত্তর তৈরি করে। কোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে এটি ইন্টারনেটের নানা নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য খুঁজে আনে, সেগুলো মিলিয়ে সহজ ভাষায় সারসংক্ষেপ তৈরি করে দেয়। শুধু তা–ই নয়, সে কোথা থেকে উত্তরটি নিয়েছে, তা–ও উল্লেখ করে। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে সঙ্গে সঙ্গে উৎসে ফিরে গিয়ে তথ্য যাচাই করতে পারেন।
প্রযুক্তিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ট্রেক ক্রাঞ্চের তথ্যানুসারে, পারপ্লেক্সিটি এআইকে অনেকেই ‘এআই-চালিত সার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হিসেবেও পরিচিত। গবেষক, সাংবাদিক বা শিক্ষার্থীরা দ্রুত তথ্য জোগাড় করতে, জটিল প্রতিবেদন বা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের সারমর্ম বের করতে কিংবা তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে এটি ব্যবহার করেন।
গুগলের সার্চে যেখানে ব্যবহারকারীকে নিজে লিঙ্ক খুলে পড়তে হয়, পারপ্লেক্সিটি সেখানে উত্তর সাজিয়ে সামনে তুলে ধরে, তা–ও আবার কথোপকথনের ভঙ্গিতে। একদিকে সার্চ ইঞ্জিনের কার্যকারিতা, অন্যদিকে চ্যাটবটের স্বাভাবিক আলাপচারিতা—এই দুই অভিজ্ঞতা একসঙ্গে দিচ্ছে পারপ্লেক্সিটি এআই।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অপতথ্য ও এআইয়ের অপব্যবহার রোধে আশা ও সীমাদ্ধতা, দুটিই দেখছে ইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য এবং এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) অপব্যবহার ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এ ক্ষেত্রে আশা ও সীমাবদ্ধতা, দুটিই দেখছেন তিনি।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় সানাউল্লাহ এ কথা জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন, তিনজন নির্বাচন কমিশনার এবং পাঁচটি দলের প্রতিনিধিরা এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন।
সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থী—উভয়ই নির্বাচনী আচরণবিধির আলোকে একটা অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করছেন, যেখানে তাঁরা আচরণবিধি প্রতিপালনের কথা বলেছেন। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করলে অপতথ্যের প্রভাব কমানো যাবে বলে ইসি মনে করে।’
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় যতটুকু সক্ষমতা আমাদের আছে, এর পাশাপাশি সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে আমরা ইউএনডিপির (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) যে প্ল্যাটফর্মটা আছে, সেটাও ব্যবহার করছি। তবে এটা খুব একটা সহজ কাজ নয় বর্তমান বিশ্বে। আমি ইসির পক্ষ থেকে অনেকগুলো ইলেকটোরাল ম্যানেজমেন্ট বডির (নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা পর্ষদ) সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবারই উদ্বেগ এখন এটা যে কীভাবে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপপ্রয়োগ, অপব্যবহার, এআইয়েরর অপব্যবহার রোধ করা হবে। তবে আমরা যদি সবাই সচেতন থাকি, তাহলে কিছুটা অবশ্যই করা সম্ভব।’
‘প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে’
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, বর্তমান সময়ে তথ্যের প্রবাহ থামানো যাবে না। কারণ, ৫০ শতাংশের বেশির উৎস ট্রেসই (শনাক্ত) করা সম্ভব নয়; কোত্থেকে উৎপত্তি হচ্ছে, এটাই বের করা যাবে না। এটা একটা বৈশ্বিক বাস্তবতা। প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে। মেটাসহ (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) যতগুলো প্রোভাইডার আছে, এরা যে মানদণ্ডে একটা জিনিসকে সরিয়ে দেয়, সেই মানদণ্ডে বেশির ভাগই পড়ে না। তার মানে, চাইলেও সে সরাবে না কন্টেন্টটা।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।...আমরা ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়াব, যেগুলো খারাপ তথ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেটা সরানো সম্ভব, তা সরানো, যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তার পরিবর্তে একটা সঠিক তথ্য যথাযথ সময়ে তুলে ধরা; যাতে মানুষ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কাজগুলো করব।’
ভোটার তালিকা ১৮ নভেম্বর
পোস্টাল ভোটিংয়ের নিবন্ধনের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার ইসি ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের একটি অ্যাপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, একটা উল্লেখযোগ্য সাড়া পাব।...যে প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই–বোনেরা ইতিমধ্যে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন, তাঁরা চাইলে ভোট দিতে পারবেন। পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ভোট দেওয়া যাবে।’
তবে গত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রবাসীদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হতে আবেদন করেছেন, আপাতত তাঁরা ভোট দিতে পারবেন বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ৩১ অক্টোবরের পর যাঁরা হচ্ছেন, তাঁদের নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ১৮ নভেম্বর একটা ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়ে যাবে।
অবশ্য নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘দেশের ভেতরে যদি কেউ এখনো বাদ পড়ে থাকেন ভোটার তালিকায়, তাঁদের জন্য সুযোগ আছে। কারণ, আমাদের তফসিল ঘোষণার পরও আমরা ভোটার তালিকার একটা ফাইনাল ইভেন্ট (সংস্করণ) বের করব। তখন পর্যন্ত আমরা কাউকে পেলে নিয়ে নেব।’