বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত চাইতে মরিয়া ট্রাম্প, তালেবান কী করবে
Published: 4th, October 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানের শাসক তালেবানের কাছে দাবি জানিয়েছেন যে তারা যেন বাগরাম বিমানঘাঁটি ওয়াশিংটনের হাতে ফিরিয়ে দেয়। পাঁচ বছর আগে তিনিই তালেবানের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করেছিলেন, যা কাবুল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পথ সুগম করেছিল।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার (বাগরাম) ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এটা (তালেবানের হাতে) কিছু না নিয়েই দিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা সেই ঘাঁটি ফেরত চাই।’ এর দুই দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি আরও সরাসরি হুমকি দেন, ‘যদি আফগানিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে, যারা বাগরাম বিমানঘাঁটি নির্মাণ করেছে, ফেরত না দেয়, তাহলে ভয়ানক কিছু ঘটতে যাচ্ছে!’
তালেবান ট্রাম্পের এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে এটাই প্রথম নয় যে ট্রাম্প বাগরাম ঘাঁটি ফেরত নেওয়ার আগ্রহ দেখালেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট থেকে পরবর্তী সময়ে মুছে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে তাঁকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল, ‘আমরা বাগরাম রাখতে চেয়েছিলাম। সেখানে একটি ছোট সেনাদল রাখতে চেয়েছিলাম।’
বাগরাম ঘাঁটি আসলে কী? কেন ট্রাম্প এটিকে এতটাই গুরুত্ব দিচ্ছেন? এর কৌশলগত তাৎপর্য কী? আর যুক্তরাষ্ট্র কি এটি ফেরত পেতে সক্ষম?
আরও পড়ুনট্রাম্পের পক্ষে তালেবানের বাগরাম ঘাঁটি ফের দখল করা সম্ভব? ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫বাগরাম বিমানঘাঁটি কীমার্কিন সেনারা আফগানিস্তানের ঘাঁটি ছেড়ে আসার চার বছর পরও বাগরাম রয়ে গেছেন বিতর্কিত একটি জায়গা হিসেবে, যেটি আবার তালেবানের কাছ থেকে নিতে চাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এই ঘাঁটিতে দুটি কংক্রিট রানওয়ে রয়েছে—একটি ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার (২ দশমিক ২ মাইল) দীর্ঘ; অন্যটি ৩ কিলোমিটার (১ দশমিক ৯ মাইল)। কাবুল শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরে অবস্থিত ঘাঁটিটি গত অর্ধশতকে আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ করা বিভিন্ন শক্তির জন্য ছিল এক কৌশলগত দুর্গ।
১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ঠান্ডা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রথম এটি নির্মাণ করে। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর এক দশক তাদের দখলে থাকে ঘাঁটিটি। ১৯৯১ সালে নাজিবুল্লাহ সরকারের পতনের পর নর্দান অ্যালায়েন্স এটা দখল করে, পরে আবার তালেবানের হাতে যায়। ২০০১ সালে ন্যাটো আগ্রাসনের পর ঘাঁটিটি মার্কিন সেনাদের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ধীরে ধীরে একটি কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ২০০৯ সালে ১০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা ছিল প্রায় এর। মার্কিন সেনাদের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল মেরিনসহ ন্যাটোর অন্য বাহিনীরাও এটি ব্যবহার করত।
এখানে একটি কুখ্যাত কারাগারও ছিল, যেখানে আফগান বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল। ঘাঁটিতে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল, সেনাদের থাকার ব্যারাক এবং এমনকি মার্কিন চেইন রেস্টুরেন্ট—পিৎজা হাট ও সাবওয়ের মতো প্রতিষ্ঠানও ছিল। ২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান থেকে সরে আসার সময় অস্ত্র-সরঞ্জামের বড় অংশ ধ্বংস করে ঘাঁটি খালি করে দেন। পরে স্থানীয় লোকজন অবশিষ্ট জিনিসপত্র লুট করেন এবং অবশেষে তালেবান সেটার দখল নেয়।
২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করে তালেবান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন য ক তর
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরসহ কৌশলগত জাতীয় সম্পদ তড়িঘড়ি হস্তান্তরের ‘অপচেষ্টা’ রুখে দিতে সিপিবির আহ্বান
বন্দরসহ কৌশলগত জাতীয় সম্পদ বহুজাতিক কোম্পানির হাতে তড়িঘড়ি হস্তান্তরের সব ‘অপচেষ্টা’ রুখে দিতে সর্বাত্মক গণ–আন্দোলনে নামতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। তারা বলেছে, এ ধরনের চুক্তি ক্ষমতাসীন সরকারের এখতিয়ারবহির্ভূত। জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে পরিচালিত হয়ে ভিন্ন কারও স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা করার কোনো সাংবিধানিক অধিকার এই সরকারের নেই।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন। ‘বহুজাতিক কোম্পানির কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক টার্মিনাল তড়িঘড়ি হস্তান্তরের সব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে’ বাম গণতান্ত্রিক জোটের ব্যানারে ২৩ নভেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ, ৪ ডিসেম্বর ‘যমুনাযাত্রা’ কর্মসূচি এবং চট্টগ্রামে ২২ নভেম্বর শ্রমিক-কর্মচারীদের কনভেনশন থেকে ঘোষিত হতে যাওয়া বৃহত্তর কর্মসূচি সফল করার আহ্বানও জানিয়েছে সিপিবি।
বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে হস্তান্তরের চলমান প্রক্রিয়া এবং লালদিয়া চরে টার্মিনালের নকশা প্রণয়ন, নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডাচ কোম্পানির সঙ্গে ইতিমধ্যে সম্পন্ন ৩৩ বছরের কনসেশন চুক্তি এবং সুইচ কোম্পানির সঙ্গে সম্পন্ন ঢাকার অদূরে পানগাঁও নৌ টার্মিনাল ২২ বছর পরিচালনার চুক্তি এই সরকারের এখতিয়ারবহির্ভূত। জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে পরিচালিত হয়ে ভিন্ন কারও স্বার্থে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা করার কোনো সাংবিধানিক অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।
সিপিবি বলেছে, দেশের মানুষ যাঁরা উৎপাদন, বাণিজ্য ও অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁরা সবাই বন্দরে দ্রুত, দক্ষ ও সাশ্রয়ী পরিষেবা প্রত্যাশা করেন। এ জন্য দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা, আধুনিক অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ, দ্রুত পণ্য খালাস ও সরবরাহ, স্বল্প মাশুল ও ব্যয়, নির্ভরযোগ্যতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নিজস্ব দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং আত্মনির্ভরতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতাই প্রকৃত উন্নয়ন। জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে সরকার ও তার প্রচারক মহল প্রতারণামূলকভাবে বন্দরে দ্রুত ও দক্ষ পরিষেবা চাহিদার সুযোগ হিসেবে ব্যয় করতে চাইছে।
সিপিবির বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সাল থেকে অন্তত ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বন্দরের বৃহত্তম নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল গড়ে তুলেছে। সব আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে এই লাভজনক টার্মিনালটি বহুজাতিক ডিপি ওয়ার্ল্ডকে হস্তান্তর করতে অন্তর্বর্তী সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে।
সিপিবি বলেছে, লালদিয়া টার্মিনাল নিয়ে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপ এবং ১৫৬ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পানগাঁও নৌ টার্মিনাল নিয়ে সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএ–এর সঙ্গে সম্পন্ন করা চুক্তির বৈধতা নিয়ে প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। যেখানে ভূরাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্ন জড়িত, সেখান ডাচ কোম্পানি প্রস্তাব দাখিলের দুই সপ্তাহের মধ্যে তড়িঘড়ি চুক্তি করে ফেলার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান অত্যন্ত জরুরি।