প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্বাধীনতাপন্থী আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের অন্যতম হিসেবে পরিচিত ইয়াসিন মালিক।

১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে কাশ্মীরে যখন ভারত থেকে স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয়, তখন মালিক হয়ে ওঠেন সেই সংগ্রামের প্রতীক। তবে পরবর্তী সময়ে সহিংস পন্থা ছেড়ে অহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নেন। বর্তমানে তিনি দিল্লির একটি কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ও ক্ষমতাসীনদের কাছে ইয়াসিন মালিক অপরাধী হলেও পাকিস্তানও তাঁকে পুরোপুরি বিশ্বাস করেনি। বরাবরই নয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে কাশ্মীরে সশস্ত্র আন্দোলন উসকে দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে।

কিন্তু গত আগস্টের শেষ দিকে দিল্লি হাইকোর্টে ৫৯ বছর বয়সী মালিকের দাখিল করা এক হলফনামা ভারতজুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে। সেখানে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে, যা ভারতের সাবেক কিছু কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকের মতে, অন্তত আংশিক সত্য হতে পারে।

এ শপথনামা শুধু মালিকের নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রচলিত বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করেননি; বরং ভারত সরকার কীভাবে বিতর্কিত কাশ্মীর ভূখণ্ডের আন্দোলনকে মোকাবিলা করেছে, সে প্রশ্নও সামনে এনেছে। একই দাবি পাকিস্তানেরও।

সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্নটি হলো মালিক কি আসলেই বরাবর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট ছিলেন?

ভারত সরকার প্রায় ২৫ বছর ধরে এই সমঝোতা (মালিকের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া) মেনে চলছিল। কিন্তু এখন এনআইএ আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিকৃত করে আমাকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। তাই হলফনামা দাখিল করার উদ্দেশ্য হলো, নিজের দিকটা তুলে ধরা—কোন পরিস্থিতিতে কাজ করেছিলাম, তা ব্যাখ্যা করা এবং বহু বছরের রাজনৈতিক আলোচনা ও গোপন বৈঠকের পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসঘাতকতাকে প্রকাশ করাইয়াসিন মালিক, কাশ্মীরের নেতা

মালিক আসলে কী দাবি করেছেন

৮৪ পৃষ্ঠার হলফনামায় মালিক বলেছেন, যখন কাশ্মীরে স্বাধীনতাপন্থী তরুণদের সশস্ত্র আন্দোলন তুঙ্গে ছিল, সেই ১৯৯০-এর দশক থেকেই তিনি ভারতের শীর্ষ সরকারি কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

ইয়াসিন মালিক দাবি করেন, একাধিক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের সদস্য এবং এমনকি কয়েকজন হিন্দু ধর্মীয় গুরু তাঁর শ্রীনগরের বাসায় বহুবার এসেছেন। কাশ্মীরে শান্তির উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়ার জন্য এসবই ছিল নয়াদিল্লির অনুমোদিত এক ধরনের গোপন কূটনীতি। আরএসএস হলো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মতাদর্শিক অভিভাবক।

এমনকি ২০০৬ সালে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাঈদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎও ভারতের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ‘ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)’ এর উদ্যোগে হয়েছিল বলে মালিক দাবি করেছেন। ওই বৈঠকের লক্ষ্য ছিল, সাঈদকে সশস্ত্র পথ থেকে সরিয়ে আনা। ২০০৮ সালের ভয়াবহ মুম্বাই হামলার জন্য সাঈদকে দায়ী করে থাকে ভারত।

ইয়াসিন মালিক কে

১৯৮৭ সালে কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচন জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারপন্থীদের পক্ষে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ইয়াসিন মালিকের বয়স তখন ২১ বছর। কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের মাইসুমা এলাকায় জন্ম তাঁর।

ওই সময় মালিক ছিলেন একটি ভোটকেন্দ্রে বিরোধী দলের এজেন্ট। নিজ চোখে কারচুপির ঘটনা দেখেন তিনি। সেই নির্বাচনকে ১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া কাশ্মীরের পরবর্তী সশস্ত্র আন্দোলনের সূচনা হিসেবে ধরা হয়।

ভোট ‘চুরির’ প্রতিক্রিয়ায় মালিক তাঁর কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে যান। সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণে তিনি অস্ত্র চালানো শেখেন বলে অভিযোগ ওঠে। ফিরে এসে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্রোহী সংগঠন জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (জেকেএলএফ) নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। সংগঠনটি ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর একাধিক প্রাণঘাতী হামলার জন্য পরিচিত।

তবে মালিক শিগগিরই পাকিস্তানের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন। কারণ, তিনি কাশ্মীরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান চেয়েছিল, কাশ্মীর তাদের সঙ্গে যুক্ত হোক। ফলে পাকিস্তান পরে জেকেএলএফের প্রতিদ্বন্দ্বী হিজবুল মুজাহিদিনকে সমর্থন দিতে শুরু করে।

নয়াদিল্লির একটি আদালতে পুলিশ পাহারায় ইয়াসিন মালিক। ২৫ মে ২০২২.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ধ নত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অফিস কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোট্‌জ এর সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আরো পড়ুন:

ভুয়া তথ্য প্রচার ঠেকাতে গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা 

সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বৈঠকে শেখ হাসিনার রায় পরবর্তী জনমত ও সার্বিক পরিস্থিতি, জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ও প্রস্তুতি, বন্দি প্রত্যর্পণ, সাইবার অপরাধ এবং দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

সাক্ষাৎকারে জার্মান রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ ও জার্মানি পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র। অদূর ভবিষ্যতে এ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে আশা করছি।”

নির্বাচনের তারিখ ও প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন যে তারিখই নির্ধারণ করুক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।”

শেখ হাসিনার রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। ছোটখাটো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত। কেউ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইলে কঠোর হাতে দমন করা হবে।”

অপরাধের মাত্রা সম্পর্কে তিনি বলেন, “অপরাধ বাড়ছে না; নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। মানুষ এখন স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারছে, যা বিগত ১৫ বছরের কথিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সম্ভব হয়নি।”

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান এবং জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন আন্যা কেরস্টেন উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এএএম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা: আবেদন শুরু, নির্দেশিকা প্রকাশ
  • নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি প্রক্রিয়া নিয়ে রুল শুনানি শুরু
  • জাবিতে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু ২৩ নভেম্বর
  • এনজিওর ৬০০ কোটি টাকা প্রতারণা, সিআইডির অভিযানে তনু গ্রেপ্তার 
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বাজেয়াপ্তের আদেশ, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সম্পদ কত
  • চলতি বছরে যেসব সিনেমার প্রস্তাব ফেরান আমির