ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার হতে যাচ্ছে। দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যে ভারসাম্য আনার উদ্যোগ নিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বাণিজ্যঘাটতি কমাতে নতুন কৌশল তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। এর অংশ হিসেবে রাশিয়া ভারত থেকে আরও বেশি কৃষিপণ্য ও ওষুধ আমদানির পরিকল্পনা করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল কিনছে ভারত। এতে দুই দেশের বাণিজ্যবৈষম্য বেড়েছে। তা দূর করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার

আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ভারত সফর করবেন ভ্লাদিমির পুতিন। তার কয়েক মাস আগেই এ রকম ঘোষণা এল। সেই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বার্ষিক শীর্ষ বৈঠক হওয়ার কথা পুতিনের। ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যে আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘটনায় ভূরাজনীতি নতুন মোড় নিচ্ছে। এই ৫০ শতাংশ শুল্কের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, বাকি ২৫ শতাংশ শুল্ক রুশ তেল আমদানির শাস্তি।

পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কের কারণে ভারতের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে এতে ভারতের সার্বভৌম মর্যাদা আরও উজ্জ্বল হবে। তিনি সম্প্রতি দক্ষিণ রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর তীরের শহর সোচিতে অনুষ্ঠিত ভালদাই আন্তর্জাতিক ফোরামে এ মন্তব্য করেন। নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিবিষয়ক এই ফোরামে ভারতসহ ১৪০টি দেশের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

পুতিন আরও বলেন, রুশ-ভারত বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে রাশিয়া ভারত থেকে আরও বেশি কৃষিপণ্য ও ওষুধ আমদানি করতে পারে। তাঁর ভাষায়, ভারত থেকে আরও কৃষিপণ্য কেনা সম্ভব। ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতেও কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা টাসকে উদ্ধৃত করে ভারতের পিটিআই জানিয়েছে, পুতিন বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন ভারতসহ ‘বন্ধু ও অংশীদারদের’ সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনাময় খাতগুলো চিহ্নিত করতে এবং কীভাবে রাশিয়া বাণিজ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনতে পারে, সেই বিষয়ে প্রস্তাব তৈরি।

রাশিয়া-ভারত অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের বিশাল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করলেও পুতিন স্বীকার করেন, কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলো সমাধান না হলে সেই সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাবে না। তুলনামূলক পরিসংখ্যান দেখিয়ে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যের পরিমাণ ৬৮ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, বেলারুশের সঙ্গে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু ভারতের জনসংখ্যা ১৫০ কোটি আর বেলারুশের মাত্র এক কোটি। এই পার্থক্য প্রকৃত সম্ভাবনার প্রতিফলন নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাশিয়া–ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে ৬৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৮৭০ কোটি ডলারের। এ সময় ভারত রাশিয়ায় রপ্তানি করেছে প্রায় ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন বা ৪৮৮ কোটি ডলারের পণ্য; দেশটি থেকে আমদানি করেছে ৬৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৩৮৪ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি আছে ৫৮ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৮৯৬ কোটি ডলারের।

পুতিন আরও বলেন, প্রকৃত সুযোগ কাজে লাগাতে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। অর্থায়ন, লজিস্টিক ও পেমেন্ট ব্যবস্থার সমস্যাগুলো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন ভ্লাদিমির পুতিন।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের কখনো রাষ্ট্রীয় বিরোধ বা উত্তেজনা ছিল না। কখনোই না। দুই দেশ সব সময়ই একে অপরের সংবেদনশীল বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে।

ভারত ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা স্মরণ করে পুতিন বলেন, ‘ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই এই সম্পর্কের সূচনা। ভারতের মানুষ এখনো সেটা মনে রেখেছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তাঁরা অবগত এবং ভারতীয়দের কাছে তার মূল্যও আছে। ভারত এই বন্ধুত্ব ভুলে যায়নি, সে কারণে রাশিয়া ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ।’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে পুতিন বলেন, তাঁদের মধ্যকার সম্পর্ক ‘পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার’। মোদিকে তিনি নিজের ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি ভারসাম্যপূর্ণ, প্রজ্ঞাবান ও দেশপ্রেমিক নেতা। ভারতেও সবাই এটা জানে।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও রুশ তেল আমদানি চালিয়ে যাওয়ার ভারতের সিদ্ধান্তকে তিনি ‘স্বাধীন ও সাহসী অবস্থান’ হিসেবে আখ্যা দেন।

ভারত-মার্কিন বাণিজ্যচুক্তি

৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা চলছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আবারও বলেছে, বাণিজ্যচুক্তি করতে হলে ভারতকে রাশিয়ার তেল কেনা কমাতে হবে। দুই দেশের বাণিজ্যচুক্তির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। খবর রয়টার্সের

তারা মনে করছে, ভারত তেল কিনে রাশিয়ার যুদ্ধে অর্থায়ন করছে। যদিও ভারত একা নয়, চীনসহ অনেক দেশই রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে; শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেবল ভারতের বিরুদ্ধেই নেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, গত আগস্ট মাসে ভারত রাশিয়া থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। জুলাই মাসে এর পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ব্যারেল। ওই মাসে ভারতের মোট তেল আমদানির প্রায় ৩৮ শতাংশই এসেছে রাশিয়া থেকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ত ল আমদ ন ভ রস ম য দশম ক আরও ব

এছাড়াও পড়ুন:

বাগেরহাটে জমি নিয়ে বিরোধে চাচাতো ভাইকে ‘চোর’ তকমা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

প্রতীকী ছবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ