ঝিনাইদহে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (৫ অক্টোবর) সদর ও শৈলকুপা উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সদর উপজেলার আড়মুখী গ্রামের কৃষক শিমুল বিশ্বাস বাড়ির পাশের মাঠে কাজ করছিলেন। বৃষ্টি শুরু হলে অন্যদের সঙ্গে মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান শিমুল বিশ্বাস।

অপরদিকে, শৈলকুপা উপজেলার শেখরা গ্রামের কৃষক হুরমত শেখ মাঠে কাজ করছিলেন। বৃষ্টি শুরু হলে তিনিও বাড়ি ফিরছিলেন। বজ্রপাতে আহত হন তিনি। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা/শাহরিয়ার/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী’

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি অপারেটরের কাছে হস্তান্তর–সংক্রান্ত সাম্প্রতিক দুটি চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছেন চট্টগ্রামের ১০ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকার এমন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। দ্রুততার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন জাতির মনে গভীর সন্দেহ তৈরি করেছে। এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয় সম্পদ। তাই বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা জাতির সামনে খোলাসা করা উচিত। এর আগে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত জনরোষের মুখে প্রত্যাহার করতে হয়েছিল।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে ৩৩ বছরের চুক্তি সম্পন্ন হয়, যা আরও ১৫ বছর বাড়ানো যেতে পারে। একই দিনে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএর সঙ্গে ২২ বছরের আরেকটি চুক্তিও করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) সরকারের পরামর্শক হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনালের কনসেশন চুক্তি তৈরি করছে।

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, আইএফসির ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজরি প্রতিবেদনে প্রস্তাব জমা থেকে চুক্তি সম্পন্নের পুরো প্রক্রিয়ায় ৬২ দিনের সময়সীমা ধরা হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘অস্বাভাবিক দ্রুততায়’ মাত্র দুই সপ্তাহে চুক্তি চূড়ান্ত করে। এতে জনমনে সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে।

বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে অসতর্ক চুক্তির কারণে দেশকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষতির ভার বহন করতে হয়েছে। আফ্রিকার জিবুতির উদাহরণ টেনে তাঁরা বলেন, দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ায় ২০০৪ সালে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি জিবুতি সরকার বাতিল করেছিল। তবে ডিপি ওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়। তাতে উল্টো জিবুতি সরকারের বিরুদ্ধে সুদসহ ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ এবং স্বত্ব বাবদ আরও ১৪৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের নির্দেশ আদায়ে তারা সক্ষম হয়। এ ধরনের চুক্তির ফলে বিশ্বের বহু দেশের একই রকম খেসারত দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে।

চুক্তির টার্মিনেশন, ক্ষতিপূরণসহ আর্থিক শর্ত গোপন রাখা হলো কেন, এ প্রশ্ন তোলেন ১০ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা এসব তথ্য প্রকাশ্যে আনতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। নিউমুরিং টার্মিনালটি দেশীয় জনবল দিয়ে লাভজনকভাবেই পুরোদমে চালু আছে। বর্তমানে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান এটি পরিচালনা করছে। প্রশ্ন হলো লাভজনকভাবে চালু টার্মিনালটি কেন আমরা বিদেশিদের দেব, যেখানে কোনো নতুন বিনিয়োগের সুযোগ নেই।’

চালু টার্মিনালগুলো যেভাবে বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানই দাঁড়াতে পারবে না বলে মনে করেন ১০ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, ‘বন্দর খাতে আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তৈরির কোনো সুযোগ থাকবে না। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে অভিহিত করা ছাড়া উপায় থাকে না। একই সঙ্গে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, মাশুল বাড়ানো বা এ ধরনের কোনো সংকটের সময় দেশীয় প্রতিষ্ঠান বা নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থাকলে তা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যে সুযোগ থাকে তা-ও থাকবে না। পুরোটাই যদি বিদেশিদের হাতে চলে যায়, তখন সংকট থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় আমাদের হাতে থাকবে না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়ে বিবৃতিদাতারা বলেন, বন্দর পরিচালনার মতো জাতীয় স্বার্থ জড়িত চুক্তি শুধু নির্বাচিত সরকারই করতে পারে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকায় তার আগেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া অযৌক্তিক।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম, লেখক ফেরদৌস আরা আলীম, নাট্যজন শিশির দত্ত, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কবি ওমর কায়সার, কবি কামরুল হাসান বাদল, লেখক ও উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব কমল সেনগুপ্ত, ভাস্কর অলোক রায় ও আইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ