এখনও খিস্টান ধর্মের যেকোনো কুমারী নারী চাইলেই যীশুখ্রিস্টকে বিয়ে করতে পারেন। বিয়ের পরে গির্জায় শুয়ে কুমারী থাকার শপথ নিতে হয় সেসব নারীদের। তবে তাদের চার্চের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকতে হয় না বা সিস্টারদের মতো পোশাকও পরতে হয় না। ওই সব নারী সমাজের আর দশজনের মতই জীবন যাপন করতে পারেন। চাকুরী-ব্যাবসা সব করতে পারেন।

নির্ধারিত কাজের পর এই সব নারীদের বেশিরভাগ সময় প্রার্থনায় ও স্রষ্টার সেবায় কাটাতে হয়। এরা নিয়মিত একজন বিশপের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। মাত্র ৫০ বছরের কিছু সময় আগে ক্যাথলিক চার্চ- এরকম বিয়ের একটি প্রথা প্রকাশ্যে অনুমোদন দিয়েছে। যদিও শত শত বছর আগে ক্যাথলিক চার্চে কুমারী থাকার চর্চা ছিল। মধ্যযুগে এই প্রথা কমে গিয়েছিল।১৯৭১ সালে ভ্যাটিকান এরকম কুমারী থাকার প্রথাকে ধর্মীয় অনুমোদন দেয়।

আরো পড়ুন:

মাসে একবার সাক্ষাতের সুযোগ, আদালত প্রাঙ্গণে অশ্রুসিক্ত বাবার কোলে শিশু

ফেসবুকে প্রেম, বিয়ে করতে কুষ্টিয়ায় চীনা যুবক

যারা যীশু খ্রিষ্টকে বিয়ে করে কুমারী থাকার শপথ নেন, তারা পবিত্র কুমারী হিসেবে ঘোষিত হন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কনেকে গির্জার বেদির সামনে শুয়ে পড়তে হয়। যার অর্থ হলো- আমি নিজেকে উপহার হিসেবে স্রষ্টার কাছে সমর্পণ করছি, আজীবনের জন্য তাকে গ্রহণ করছি।

এমন পবিত্র কুমারীর সংখ্যা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ২৫৪ জন রয়েছেন। তাদের কেউ হয়তো পেশায় নার্স, কেউ একাউন্ট্যান্ট, কেউ ব্যবসা করেন, কেউ কাজ করেন দমকল কর্মী হিসেবে।

যারা নান বা সন্ন্যাসিনী, তাদের বেলায় নিয়ম হচ্ছে, যেদিন থেকে তারা চার্চে যোগ দিচ্ছেন, সেদিন থেকে তারা কৌমার্য রক্ষা করে চলবেন। কিন্তু ‘পবিত্র কুমারী’দের বেলায় নিয়ম হচ্ছে, তাদের জন্ম থেকেই কুমারী থাকতে হবে।

ভ্যাটিকান এই নিয়মে সংশোধন এনেছে। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, ‘‘এরকম থাকতে পারলে ভালো, কিন্তু পবিত্র কুমারীদের দলে যোগ দিতে গেলে এটা একেবারে অপরিহার্য তা নয়।’’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘বোরিং পারসন’ মুশফিকুর স্ত্রীর প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ

‘‘এরকম করে তার সামনে কখনো বলা হয় না। ওইটা নিয়ে অভিযোগও আছে।’’ - ঠোঁটের কোণে মুশফিকুরের লাজুক হাসিটা বাকি গল্পটা বলে দিচ্ছিল। দুষ্ট-মিষ্টি ভালোবাসায় জড়ানো সংসার জীবনে ক্রিকেটটাও বড় অংশ জুড়ে ছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় মুশফিকুরের ওই কথায়। যেখানে স্ত্রী জান্নাতুল কিয়াফাত, ক্রিকেটার মুশফিকুরের গড়ে উঠার পেছনের বড় ভূমিকা রেখেছেন। সামনাসামনি স্ত্রীকে কখনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে না পারা মুশফিকুর শততম টেস্টের মঞ্চে কথার ঝাঁপি খুলে দিলেন। 

২০১৩ সালে মাহমুদউল্লাহর মাধ্যমেই মুশফিকুরের সঙ্গে পরিচয় হয় জান্নাতুলের। এরপর মনের দেয়া–নেয়া। ২০১৪ সালে সেই ভালোবাসার চিরস্থায়ী রূপ দেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। ঘরে নিয়ে আসেন জান্নাতুল কিফায়াতকে। তাদের দাম্পত্য জীবন রাঙিয়ে তুলেছেন মায়ান ও সেহার।

পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিবেদনে মুশফিকুর অনন‌্য, অসাধারণ। সবার আগে অনুশীলনে আসা, সবার পর মাঠ ত‌্যাগ করার ঘটনা রয়েছে অহরহ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করে মুশফিকুর নিজেকে তৈরি করেছেন। সেই তৈরি করার পেছনে ছায়া হয়ে ছিলেন স্ত্রী। পারিবারিক সব সব সামলে মুশফিকুরকে ফ্রি করে দিয়েছিলেন তিনি। অনুশীলন, ম‌্যাচ পরিকল্পনা, ঘুম, রুটিন ওয়ার্ক সবকিছুতে যেন পর্যাপ্ত সময় পান এজন‌্য সব চাপ নিয়েছিলেন জান্নাতুল। তার নিসঙ্গ লড়াইটাকেই মুশফিকুর বলছেন, ‘‘সবচেয়ে বড় ত‌্যাগ।’’

সেই গল্পগুলোই আজ শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে করলেন মুশফিকুর, ‘‘আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় স্যাক্রিফাইস….আমার যে সাপোর্টটা আমার স্ত্রী দিয়েছে। সত‌্যি বলতে আমার স্ত্রী। আপনারাও জানেন, হয়তো বা দেখেন যে, আমি হয়তো বা অন্যদের তুলনায় বেশি অনুশীলন করি। এটা সম্ভব কখনোই হতো না যদি আমার ঘরে এরকম একটা পরিবেশ না থাকতো।’’

‘‘আপনারা ক'জন জানেন জানি না, আমরা জয়েন্ট ফ্যামিলি থেকে বিলং করি। দেখা যায় যে, আমার স্ত্রীর উপর যে প্রত‌্যাশাটা আছে এবং সবাইকে ওইভাবে ম্যানেজ করা… কিছু হলেই ওকে ফোন দিয়ে এটা সমস‌্যা বা ওটা। যতটুক ইমার্জেন্সি আমার দিক থেকে না আসা পর্যন্ত ও যদি সবকিছু করতে পারে সেগুলো ম্যানেজ করা। এটা বিরাট কিছু। এটা আমি বলবো যে, আমার এটা অনেক বড় স্যাক্রিফাইস।’’

মুশফিকুর আরো বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, যদিও ওই সময়গুলো হয়তোবা আমি পাবো না, কারণ আমার দুটো বাচ্চা আছে…সেই সময়গুলো। তারপরে ধরেণ, রাতে স্বাভাবিক ছোট বাচ্চারা সারা রাত ঘুমায় না। কিন্তু আমাকে কখনো নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়নি। কারণ, ম্যাক্সিমাম সময় না, পুরোটা সময় সে রাত জেগে বাচ্চাদেরকে মানুষ করেছে এবং আমাকে ওই টেনশন থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছে। সেজন‌্য আমি তার কাছে সারাজীবনের জন‌্য কৃতজ্ঞ। কখনোই এরকম করে তার সামনেও বলা হয় না। ওইটা নিয়েও অভিযোগ আছে। কিন্তু সত‌্যি বলতে আমি অনেক ভাগ‌্যবান। কারণ এটা (স্ত্রী) একটা হিউজ পার্ট। অলমোস্ট আমার ১১ বছর মতো হয়েছে সংসার লাইফ। ক্রিকেটে ইমপ্যাক্ট যদি, আপনারা ২০১৪ সালের পর থেকে দেখেন, ইটস এ হিউজ পার্ট ইন মাই লাইফ। এজন‌্য তাকে অনেক ধন‌্যবাদ।’’

পারফরম‌্যান্সও সেই কথাই যেন বলছে। বিয়ের আগে ৪০ ম‌্যাচে ৭৫ ইনিংসে মুশফিকুরের রান ছিল ২১৫২। সেঞ্চুরি ৩টি, ফিফটি ১৩টি। গড় ৩০.৬। বিয়ের পরে ৬০ ম‌্যাচে ১০৮ ইনিংসে রান ৪১০৫। গড় ৪১.৮৮। সেঞ্চুরি ১০টি, ফিফটি ১৪টি। স্ত্রী তার জীবনে আর্শীবাদ হয়ে এসেছেন বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে পারফরম‌্যান্সের এই ধারাবাহিকতার জন‌্য অনুশীলনের বিকল্প কিছু দেখেন না তিনি,

‘‘খোলাখুলিভাবে একটা কথা বলি, আমি আসলে একজন বোরিং পারসন। আমি প্রত্যেকদিনের অনুশীলন নিয়ে যদি বলেন, আমি ঠিক একই কাজটা ওভার অ‌্যান্ড ওভার করতে পারব। এটা এমন না যে, ২০ বছর ধরে করেছি বলেই সবশেষ। আমি ৪০ বছর ধরে একই কাজ করবো। যদি এটা দলের এবং আমার নিজের প্রয়োজন হয়।’’- যোগ করেন তিনি। 

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলছেন মুশফিকুর। বিশ্বের এগারতম ক্রিকেটার মুশফিকুর যিনি শততম টেস্টে পেয়েছেন সেঞ্চুরির স্বাদ। এই অর্জনকে মুশফিকুর উৎসর্গ করেছেন তার দাদা-দাদী ও নানা-নানিকে, ‘‘আমার দাদা-দাদি আর নানা-নানিকে (উৎসর্গ করতে চাই)। কারণ তারা আসলে আমার সবচেয়ে বড় ফ্যান ছিল, যখন তারা বেঁচে ছিলেন। আমার এখনো মনে আছে, আমার দাদা-দাদি বলেন বা নানা-নানি, সবাই বলেছিলেন যে, ভাই তোমার খেলা দেখার জন্য হলেও আমি আরও কয়েকটা দিন বেঁচে থাকতে চাই। এটা বিরাট কিছু। খুব কম নাতি বা নাতনিদের কপালে, ভাগ‌্যে চোটে এরকম। তাদের আর্শীবাদেই আমি আজকে এতদূর। আরও অনেক মানুষ আছে। কিন্তু স্পেশাল ম‌্যাচটা আমি তাদের চারজনকে উৎসর্গ করতে চাই।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বোরিং পারসন’ মুশফিকুর স্ত্রীর প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ