বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) বলেছেন, ‘জনগণ পিআর পদ্ধতি বোঝে না। পিআর পদ্ধতিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকে না। সেখানে জনগণের সার্বভৌমত্বের পরিবর্তে দলীয় কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা হবে। তাই জনগণ পিআর নয়, সনাতন পদ্ধতিতে প্রার্থী, মার্কা, দল দেখে কাগজের ব্যালটে সিল দিয়ে ভোট দিতে চায়।’

আজ রোববার দুপুরে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে ধারা ইউনিয়নের আলেম ও ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমরান সালেহ এসব কথা বলেন।

সৈয়দ এমরান সালেহ বলেন, ‘কয়েকটি দল ইসলামের নামে কোটা রাজনীতি করতে চায়। বিএনপি ও বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ এটা হতে দেবে না। আমরা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করি। অবশ্যই অন্য ধর্মের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি ও করব। রাজনীতি দিয়ে যারা ইসলামকে বিভক্ত করতে চায়, তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। যারা বলে তাদের দলের সদস্য হলে বা তাদের প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকিট পাওয়া যাবে, তারা ইসলামের বন্ধু হতে পারে না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। ক্ষমতার জন্য তারা ভারসাম্যহীন অপপ্রচার করছে। এরা এত দিন পরগাছার মতো রাজনীতি করেছে। আগাগোড়া বিএনপির ছত্রচ্ছায়ায় রাজনীতি করে এখন এরা বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করছে। জামায়াত ৫ আগস্টের পর রহস্যজনক কারণে একের পর এক জাতীয় স্বার্থবিরোধী অবস্থান নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী স্টাইলে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।’

বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা পেলে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন হবে না উল্লেখ করে এমরান সালেহ বলেন, ‘বিএনপি ইসলামি মূল্যবোধ ও ইসলামি রীতিনীতি, সংস্কৃতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। অন্য ধর্মকর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও মূল্যবোধকেও বিএনপি সম্মান করে। তাদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করে। বিএনপি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে দলের প্রধান সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার জোরে তা বাতিল করে দিলেও বিএনপি আবার তা পুনঃস্থাপন করতে প্রস্তাব দিয়েছে। সেই দল কখনো ইসলাম থেকে দূরে সরে যেতে পারে না।’

হালুয়াঘাট উপজেলার মাঝিয়াইল মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নূর হোসাইনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরফান আলী, যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, জেলা ওলামা দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আকবর আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এমর ন স ল হ আহ ব য ক ব এনপ র জনগণ র র জন ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভোটের আমেজ থেকে দূর হোক শোডাউনের সংস্কৃতি

দেশে এখন দুটি বাস্তবতা বিরাজ করছে। একদিকে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি কেন্দ্র করে জ্বালাও-পোড়াও আতঙ্ক, অন্যদিকে আছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে মানুষের উৎসাহ ও উদ্দীপনা।

তবে এ দুই বাস্তবতার ভেতর নির্বাচন নিয়ে জনমনে উৎসবের পাল্লাটা ভারী। বেশ বড় ব্যবধানে ভারী। কারণ, গত বছর জুলাই–আগস্টে ক্ষমতাসীনদের রেখে যাওয়া ক্ষত এ দেশের বুকে এখনো দগদগে তাজা। নতুন করে কোনো নাশকতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগ্রহ জনগণের নেই। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার কেন্দ্র করে তো নয়ই।

এ ছাড়া বহু বছরের ডামি নির্বাচন আর ‘রাতের ভোটের’ অধ্যায় পেরিয়ে বাংলাদেশ এবার সত্যিই একটা বহুদলীয় নির্বাচনের সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। বিচার, সংস্কার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঘিরে নির্বাচন নিয়ে অনেক ‘যদি কিন্তু’ ছিল। তবে সে ধোঁয়াশা কেটেছে। ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবসান হয়েছে সব ‘যদি’ আর ‘কিন্তু’র।

ইতিমধ্যে নির্বাচনী আসনগুলোয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে দেশের বড় দলগুলো। নতুন দলগুলোও বিতরণ শুরু করেছে মনোনয়নপত্র। সবাই উঠে পড়েছে নির্বাচনের ট্রেনে। আশা করি, এই ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়বে না।

নির্বাচন কেন্দ্র করে জনমনে উচ্ছ্বাস যেমন আছে, তেমনি প্রার্থীদের শোডাউনের সংস্কৃতি নিয়ে আছে কিছু অস্বস্তিও। এ দেশে নির্বাচনী প্রার্থীদের ভেতর শোডাউনের সংস্কৃতি কেন টিকে আছে, তা অনুমান করা যায়। নির্বাচনের আগে ভোটার ও প্রতিপক্ষকে শক্তি ও সক্ষমতা জানান দেওয়ার এ এক সহজ কৌশল। এ ছাড়া গত ১৬ বছরে ওই অর্থে প্রকাশ্যে কার্যক্রমই চালাতে পারেনি বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তাই হয়তো শোডাউনের জৌলুশটাও এবার বেশি।

কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় তখনই, যখন এই জৌলুশের জোশে প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা নির্বাচনী আচরণবিধি থেকে শুরু করে কাণ্ডজ্ঞানও ভুলতে বসেন। নির্বাচনী আমেজে সারা দেশে চলছে নানা দলের হাজারো সভা-সেমিনার। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে জনগণের চলাচলের পথ অবরুদ্ধ করে চালানো হচ্ছে এসব সভা।

ট্র্যাফিক আইন অমান্য করে হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলের ধীরগতির বহর নিয়ে সড়কগুলোকে করা হচ্ছে একপ্রকার অবরুদ্ধ। জিম্মি করা হচ্ছে এ দেশের প্রকৃত মালিক, এ দেশের আপামর জনগণকে, যা কেবল কাণ্ডজ্ঞানই নয়, নির্বাচনী আচরণবিধিরও বিরোধী।

আরও পড়ুনশোডাউন আর গাড়িবহরের রাজনীতিই কি চলবে২৫ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবরে সংশোধিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ৬ অনুচ্ছেদের (ঘ) ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, প্রার্থীরা ‘জনগণের চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্টি করিতে পারে, এমন কোনো সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা করিতে পারিবে না এবং তাহাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তিও অনুরূপভাবে জনসভা বা পথসভা ইত্যাদি করিতে পারিবে না’।

বিধিমালার ১০ অনুচ্ছেদের (ক) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, প্রার্থীরা ‘নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো গেইট বা তোরণ নির্মাণ করিতে পারিবেন না কিংবা চলাচলের পথে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিতে পারিবেন না’।

গণ-অভ্যুত্থানের পর জনমনে এক আশার সঞ্চার হয়েছিল। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও তরুণ প্রজন্ম আশা করেছিল, রাজনৈতিক শক্তিগুলো ‘গায়ের জোর’ দেখানোর সংস্কৃতি থেকে অন্তত বের হয়ে আসবে। এর আগের ১৫ বছরে ক্ষমতাসীনদের নানা আয়োজনে যথেষ্ট ‘গায়ের জোর’ সহ্য করেছে তারা। সারা রাত বাধ্য হয়ে ভাষণ শোনা থেকে শুরু করে অপ্রাসঙ্গিক একেকটা ‘দলীয় দিবসে’ জনতা জিম্মি ছিল ক্ষমতাসীনদের শোডাউনের কাছে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলটা জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হওয়ার পেছনে ওই সব কর্মসূচির ভূমিকা কম ছিল না। দলটির পতন হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানে। জনগণ আশা করেছিল, দলোগুলোর ক্ষমতা প্রদর্শনের খেলায় বাধ্য দর্শকের ভূমিকায় তাদের আর থাকতে হবে না।

আমরা কি এমন জনপ্রতিনিধি চাই, যাঁরা কেবল নিয়ম রক্ষার্থে মৌসুমি আইনের অনুগত? নাকি আমরা চাইব এমন জনপ্রতিনিধি, যাঁরা যেকোনো বাস্তবতাতেই জনমানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল? নয়তো আমরা এই নিশ্চয়তা কীভাবে পাব যে এই প্রার্থীরা আইনপ্রণেতা হয়ে খোদ আইনের তোয়াক্কা করাই বন্ধ করে দেবেন না? এ নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারে না।

কিন্তু বাস্তবতা কি তা বলে? বলে না। রোজই দেশের কোথাও না কোথাও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে জরুরি সেবায় নিয়োজিত বহু মানুষ প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে স্কুলফেরত শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক নাগরিকেরা। যানজটের জন্য এমনিতেই দেশের প্রধান শহরগুলো দুনিয়াতে কুখ্যাত; এর ওপর যখন যুক্ত হয় শোডাউনের বাড়তি জট, তখন সীমিত পরিমাণে হলেও এর সরাসরি প্রভাব পড়ে জাতীয় অর্থনীতিতে। জনগণের জন্য যা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার চেয়ে কম কিছু নয়।

অনেকে বলতে পারেন, বিধিমালা তো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে কার্যকর হয়। এর আগে বিধিমালা মানার তো কোনো দায় নেই। হ্যাঁ, সেটাই সত্যি।

আরও পড়ুনরাজনীতিবিদদের আচরণ কি পাল্টেছে১০ জানুয়ারি ২০২৫

কিন্তু আমরা কি এমন জনপ্রতিনিধি চাই, যাঁরা কেবল নিয়ম রক্ষার্থে মৌসুমি আইনের অনুগত? নাকি আমরা চাইব এমন জনপ্রতিনিধি, যাঁরা যেকোনো বাস্তবতাতেই জনমানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল? নয়তো আমরা এই নিশ্চয়তা কীভাবে পাব যে এই প্রার্থীরা আইনপ্রণেতা হয়ে খোদ আইনের তোয়াক্কা করাই বন্ধ করে দেবেন না? এ নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারে না।

তবে প্রার্থীরা অন্তত আমাদের আশ্বস্ত করতে পারেন, জনগণকে ভোগানোর যেকোনো আয়োজন থেকে তাঁরা বিরত থাকবেন। আশ্বস্ত করার সবচেয়ে সহজ উপায় হতে পারে জনগণের প্রতি এখন থেকেই সহানুভূতিশীল থাকা, নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা মেনে চলা, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগেই। জনগণ একটু শান্তিতে থাকলে কারও যেহেতু ক্ষতি নেই।

সৈকত আমীন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

* মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনগণের টাকায় শিক্ষিত হয়, জনগণের জীবন বদলানোর বেলায় নেই
  • সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীর পূর্ণ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োজন
  • বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে: দীপেন দেওয়ান
  • গণভোটে ‘হ্যাঁ’ পাস করলে কী হবে, ‘না’ পাস করলে কী হবে
  • মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী বিপ্লব যেভাবে নষ্ট করল চীন
  • জাপা নির্বাচনের সুযোগ পেলে গণঅধিকার পরিষদ তা বর্জন করবে: রাশেদ
  • যশোরে জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু সম্মেলন অনুষ্ঠিত
  • দিনের ভোট রাতে করতে রাষ্ট্রের ৮ হাজার কোটি টাকা লুট করেছিলেন শেখ হাসিনা: রিজভী
  • ভোটের আমেজ থেকে দূর হোক শোডাউনের সংস্কৃতি
  • শেখ হাসিনার রায় দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে: গণসংহতি আন্দোলন