রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার দুপুরে ভুক্তভোগী এক নারী রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন।

অভিযুক্ত নেতার নাম আশরাফ মল্লিক। তিনি গোদাগাড়ীর মাটিকাটা মল্লিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব। তবে তিনি জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ভুক্তভোগী নারীর নাম ফাতেমা জোহুরা। বাড়ি গোদাগাড়ীর বিদিরপুর গ্রামে। তিনি গোদাগাড়ীর পশুণ্ডা মৌজায় প্রায় দেড় একর ধানি জমির মালিক। এর মধ্যে ৬২ শতক ক্রয়সূত্রে ও বাকি জমি তিনি স্বামী আবুল হোসেনের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। ১৯৮৮ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তিনি এত দিন ভোগদখল করে আসছিলেন। জমির খাজনা-খারিজও আছে তাঁর নামে। সম্প্রতি জমিগুলো দখল করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ফাতেমা জোহুরা বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরই রওশন আরা বেগম, বাদেনুর বিবি, মাফিয়া খাতুন, টগরি খাতুন ও সাজেনুর বিবি একটি দলিল নিয়ে এসে দাবি করেন, আবুল হোসেন মৃত্যুর আগে ওই জমি তাঁদের কাছে বিক্রি করে গিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি আদালতে মামলা করলে দলিল জাল বলে প্রমাণিত হয়। এরপর চক্রটি এত দিন চুপচাপ ছিল। গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর তাঁরা আবার জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। তাঁরা এবার দাবি করেন, আবুল হোসেনের বোন মেহেরজান ও তাঁর ভাতিজা খলিলুর রহমান নাকি বাদেনুর বিবি, সফেদা খাতুন, সাজেনুর বিবি ও টগরি বিবির কাছে জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছেন। অথচ মেহেরজান ও খলিলুর রহমান ১৯৭২ সালে ভারতে চলে যান। তাঁরা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে দেননি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বৈধতা জানতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিনিয়র সহকারী কমিশনার মানজুরা মুশাররফ স্বাক্ষরিত কপিতে জানানো হয়, এ ধরনের কোনো কেসের নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারপরও ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সামনে এনে গত এপ্রিলে উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব আশরাফ মল্লিক, মেডিকেল মোড় কোকড়াপাড়ার কারিম মাঝি, লালবাগ গ্রামের আনারুল ইসলাম, সাদিকুল ইসলাম ও মাজারগেট এলাকার সুমির তৃতীয় পক্ষ হিসেবে জমিটি দখলে নেন। তখন তাঁর জমিতে ধান লাগানো ছিল। তাঁরা দেশি অস্ত্রশস্ত্র ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ধানি জমিতে মাটি ভরাট করে দখলে নেন।

ফাতেমা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে জমি দখলে বাধা দিতে গেলে আমাদের মারতে আসে। প্রাণ বাঁচাতে আমরা আর জমির দিকে যেতে পারিনি। পরে আমি ওই জমিতে স্থিতাবস্থা জারির আদেশ পেতে আদালতে মামলা করি। আদালত ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু দখলদারেরা পেশিশক্তি ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলে রেখেছেন। তাঁরা জমি বিক্রির নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকাও নিচ্ছেন। এ ছাড়া জমি বিক্রির জন্য সাইনবোর্ডও টাঙিয়েছেন। আমরা থানায় জানিয়েছি। পুলিশ গেলেও তাঁরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছেন না। এ অবস্থায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’ সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব আশরাফ মল্লিক বলেন, ফাতেমা ও তাঁর স্বামী আবুল হোসেন নিঃসন্তান ছিলেন। আইনানুযায়ী এই জমির পুরোটা ফাতেমা পান না, আবুল হোসেনের বোন ও ভাতিজা জমি পান। এ নিয়ে উভয় পক্ষের সালিস হয়েছিল। সেখানে পাঁচজন আইনজীবী ছিলেন। সেই পাঁচজনের একজন তিনি। জমি আবুল হোসেনের বোন ও ভাতিজা পাবেন বলে তিনি মতামত দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যে জমি দখলের অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা। তিনি জমিতেই যাননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাতীবান্ধার ছয়টি ইউনিয়নসহ পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে রেড অ্যালার্ট জারির পর মাইকিং করে তিস্তাপারের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে লালমনিরহাটসহ নীলফামারী ও রংপুর জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা আছে। ইতিমধ্যে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে দুই উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর, আমনের খেতসহ আগাম শীতকালীন সবজির খেত।

পাউবো সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার। অর্থাৎ স্বাভাবিক বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আজ দুপুর ১২টায় পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বেলা তিনটায় বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তিস্তায় পানি বাড়ায় হাতীবান্ধা উপজেলার ছয় ইউনিয়নের অন্তত ১০টি চর ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলসহ মুন্সিপাড়া, ক্লিনিকপাড়া, কাদেরের চর, মহিমপাড়া, চরপাড়া, কাতিপাড়া, সৈয়দপাড়া এলাকায় পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় পাউবোর কর্মীরা তিস্তাপারের বাসিন্দাদের মাইকিং করে সরে যেতে বলেন।

হাতীবান্ধার সিন্দুর্না ইউনিয়নের চরসিন্দুর্না এলাকার এনামুল হক বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তাঁদের এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠেছে। পরিবার নিয়ে তাঁরা কষ্টে আছেন।

পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের কাতিপাড়া গ্রামের আমির হোসেন বলেন, বন্যায় ঘরে পানি ওঠায় রান্না করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। পানি সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে। প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বন্যার ক্ষয়ক্ষতি রোধে কাজ করছে।’

পাউবোর লালমনিরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়েছে। বর্তমানে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ