কোনো খোঁড়া যুক্তি দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলা বন্ধ করা যাবে না। এই মেলা কেবল বই বেচাকেনার হাট নয়, এটি দেশের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক অর্জন। বইমেলা নিয়ে চক্রান্ত চলছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের নিয়ে সেই চক্রান্ত প্রতিহত করবে।

আজ রোববার সকালে বাংলা একাডেমির সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে সাংস্কৃতিক কর্মী ও লেখকেরা ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা আয়োজনের দাবি জানিয়ে এ কথা বলেন। রাজধানীর ৩১টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট ‘গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য’ এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সমন্বয়কারী মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় অমর একুশে বইমেলা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মেলা বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। কখনো বলা হচ্ছে, মেলা চলতি বছরের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ থেকে শুরু হবে। আবার পরে বলা হচ্ছে, সেই ঘোষিত সময়ে মেলা হবে না। নির্বাচনের পরে মেলা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে একটি মহল বইমেলা বন্ধ করতে সচেষ্ট। এই মহল জাতির সব গৌরবময় সাংস্কৃতিক অর্জনকে বিনষ্ট করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারই অংশ হিসেবে বইমেলা নিয়ে চক্রান্ত করা হচ্ছে।’

উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম বলেন, অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে বাঙালির আবেগ ও চেতনা জড়িত। লেখক সৃষ্টি, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে এই মেলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দেশে নয়, বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও অনেকে বইমেলা কেন্দ্র করে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করে থাকেন। বইমেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সংস্কৃতিকর্মীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও হতাশ।

আগেও নির্বাচনের সময় বা রমজান মাসেও বইমেলা আয়োজনের দৃষ্টান্ত রয়েছে উল্লেখ করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহসভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, কাজেই এসব কারণ দেখিয়ে বইমেলা বন্ধ করা যাবে না।

কবি হাসান ফখরি বলেন, নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বইমেলা বন্ধের কথা বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের দায়িত্ব। সেই কাজ সরকারকে করতে হবে। কোনো একটি আয়োজনের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনকে বন্ধ করা চলতে পারে না।

বক্তারা বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পরে যখন একটি বহুমত ও বৈচিত্র্যের বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল, তখন দেখা যাচ্ছে, একটি চক্র দেশের প্রগতিশীল চেতনার প্রতি আঘাত হানতে সচেষ্ট হয়েছে। তারা মাজার–খানকায় হামলা করছে। বাউলগানের আসর, নাটক, যাত্রাপালায় হামলা করে বন্ধ করে দিচ্ছে। এই চক্রই বিভিন্ন অজুহাত তুলে বইমেলা বন্ধ করে দিতে সচেষ্ট হয়েছে। সরকার এই চক্রকে দমন না করে তাদের কথায় সায় দিচ্ছে। ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যাঁরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁরাই এখন পতিত ফ্যাসিবাদীদের মতো আচরণ করছেন, যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অমর একুশে বইমেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ফেব্রুয়ারি মাসেই বইমেলা করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার দাবি জানান বক্তারা। এ ঘোষণা না দেওয়া হলে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন তাঁরা।

সমাবেশ শেষে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজমের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। ঢাকা, ৫ অক্টোবর.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনকে পুতিনের কাছে আত্মসমর্পণ করতেই কি যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব

আন্তর্জাতিক নানা সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একটি নতুন কাঠামো তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ২৮ দফার পরিকল্পনা অনুযায়ী, কিয়েভকে (ইউক্রেনের রাজধানী) অস্ত্র এবং কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আজ বৃহস্পতিবার কিয়েভে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার ঠিক এক দিন আগে এ খবর প্রকাশিত হলো।

পরিকল্পনা সম্পর্কে এ পর্যন্ত যা জানা গেছে এবং এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কিয়েভকে কী কী ছাড় দিতে হতে পারে, তার কিছু বিবরণ তুলে ধরা হলো।

এই পরিকল্পনা কি সরকারি প্রস্তাব

না, এটি এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি প্রস্তাব নয়। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি। এমনকি রাশিয়াও এমন কোনো শান্তি পরিকল্পনার অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে।

তবে একাধিক সংবাদমাধ্যম অজ্ঞাতনামা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। মার্কিন ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস এবং যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকা গত বুধবার প্রথম এই পরিকল্পনার বিবরণ প্রকাশ করে।

রয়টার্স অজ্ঞাতনামা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র জেলেনস্কিকে ‘ইঙ্গিত’ দিয়েছে, ইউক্রেনকে অবশ্যই এই মার্কিন পরিকল্পনা মেনে নিতে হবে, যার মধ্যে ভূখণ্ড এবং অস্ত্র সমর্পণ অন্তর্ভুক্ত থাকছে। আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিনিময়ে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টি পাবে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস অজ্ঞাতপরিচয় এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, প্রস্তাবটি ‘গুরুত্বপূর্ণভাবে রাশিয়ার পক্ষে যাচ্ছে’ এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য ‘খুবই সুবিধাজনক’। পত্রিকাটি আরও দাবি করেছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারাই এর খসড়া তৈরির কাজ করেছেন।

তবে লন্ডনভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের রাশিয়ান সামরিকবিশেষজ্ঞ কিয়ের জাইলস আল–জাজিরাকে বলেন, এই প্রস্তাব হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসেনি। তিনি এ প্রস্তাবের উত্থাপনকে ‘বাস্তবতার ভিত্তি না হয়ে একটি রুশ তথ্যযুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেন, যা পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম আবারও সানন্দে গ্রহণ করেছে।

ইউক্রেনে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। ২০ নভেম্বর ২০২৫, টারনোপিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ