খোঁড়া যুক্তিতে একুশের বইমেলা বন্ধ করা যাবে না
Published: 5th, October 2025 GMT
কোনো খোঁড়া যুক্তি দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলা বন্ধ করা যাবে না। এই মেলা কেবল বই বেচাকেনার হাট নয়, এটি দেশের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক অর্জন। বইমেলা নিয়ে চক্রান্ত চলছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের নিয়ে সেই চক্রান্ত প্রতিহত করবে।
আজ রোববার সকালে বাংলা একাডেমির সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে সাংস্কৃতিক কর্মী ও লেখকেরা ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা আয়োজনের দাবি জানিয়ে এ কথা বলেন। রাজধানীর ৩১টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট ‘গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য’ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সমন্বয়কারী মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় অমর একুশে বইমেলা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মেলা বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। কখনো বলা হচ্ছে, মেলা চলতি বছরের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ থেকে শুরু হবে। আবার পরে বলা হচ্ছে, সেই ঘোষিত সময়ে মেলা হবে না। নির্বাচনের পরে মেলা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে একটি মহল বইমেলা বন্ধ করতে সচেষ্ট। এই মহল জাতির সব গৌরবময় সাংস্কৃতিক অর্জনকে বিনষ্ট করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারই অংশ হিসেবে বইমেলা নিয়ে চক্রান্ত করা হচ্ছে।’
উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম বলেন, অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে বাঙালির আবেগ ও চেতনা জড়িত। লেখক সৃষ্টি, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে এই মেলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দেশে নয়, বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও অনেকে বইমেলা কেন্দ্র করে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করে থাকেন। বইমেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সংস্কৃতিকর্মীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
আগেও নির্বাচনের সময় বা রমজান মাসেও বইমেলা আয়োজনের দৃষ্টান্ত রয়েছে উল্লেখ করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহসভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, কাজেই এসব কারণ দেখিয়ে বইমেলা বন্ধ করা যাবে না।
কবি হাসান ফখরি বলেন, নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বইমেলা বন্ধের কথা বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের দায়িত্ব। সেই কাজ সরকারকে করতে হবে। কোনো একটি আয়োজনের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনকে বন্ধ করা চলতে পারে না।
বক্তারা বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পরে যখন একটি বহুমত ও বৈচিত্র্যের বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল, তখন দেখা যাচ্ছে, একটি চক্র দেশের প্রগতিশীল চেতনার প্রতি আঘাত হানতে সচেষ্ট হয়েছে। তারা মাজার–খানকায় হামলা করছে। বাউলগানের আসর, নাটক, যাত্রাপালায় হামলা করে বন্ধ করে দিচ্ছে। এই চক্রই বিভিন্ন অজুহাত তুলে বইমেলা বন্ধ করে দিতে সচেষ্ট হয়েছে। সরকার এই চক্রকে দমন না করে তাদের কথায় সায় দিচ্ছে। ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যাঁরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁরাই এখন পতিত ফ্যাসিবাদীদের মতো আচরণ করছেন, যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
অমর একুশে বইমেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ফেব্রুয়ারি মাসেই বইমেলা করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার দাবি জানান বক্তারা। এ ঘোষণা না দেওয়া হলে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন তাঁরা।
সমাবেশ শেষে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজমের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। ঢাকা, ৫ অক্টোবর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বইম ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাতীবান্ধার ছয়টি ইউনিয়নসহ পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে রেড অ্যালার্ট জারির পর মাইকিং করে তিস্তাপারের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে লালমনিরহাটসহ নীলফামারী ও রংপুর জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা আছে। ইতিমধ্যে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে দুই উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর, আমনের খেতসহ আগাম শীতকালীন সবজির খেত।
পাউবো সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার। অর্থাৎ স্বাভাবিক বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আজ দুপুর ১২টায় পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বেলা তিনটায় বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তায় পানি বাড়ায় হাতীবান্ধা উপজেলার ছয় ইউনিয়নের অন্তত ১০টি চর ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলসহ মুন্সিপাড়া, ক্লিনিকপাড়া, কাদেরের চর, মহিমপাড়া, চরপাড়া, কাতিপাড়া, সৈয়দপাড়া এলাকায় পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় পাউবোর কর্মীরা তিস্তাপারের বাসিন্দাদের মাইকিং করে সরে যেতে বলেন।
হাতীবান্ধার সিন্দুর্না ইউনিয়নের চরসিন্দুর্না এলাকার এনামুল হক বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তাঁদের এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠেছে। পরিবার নিয়ে তাঁরা কষ্টে আছেন।
পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের কাতিপাড়া গ্রামের আমির হোসেন বলেন, বন্যায় ঘরে পানি ওঠায় রান্না করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। পানি সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে। প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বন্যার ক্ষয়ক্ষতি রোধে কাজ করছে।’
পাউবোর লালমনিরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়েছে। বর্তমানে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।