শরীয়তপুর জেলাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে অন্তর্ভুক্ত না করা এবং জেলাটিকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবিতে সমাবেশ হয়েছে। রোববার বিকেলে জেলা শহরের শহীদ মিনার চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন করে ‘জাগো শরীয়তপুর’ নামের একটি সংগঠন।

সমাবেশে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তারা প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর জেলাকে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি জানান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দাবি না মানলে পদ্মা সেতু ও চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথ ‘ব্লকেডের’ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন মহলে কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে নতুন দুটি বিভাগ করা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলা নিয়ে ফরিদপুর বিভাগ করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে—এমন খবরে আন্দোলনে নামে শরীয়তপুরের কয়েকটি সংগঠন। এর আগে ২০১৫ সালে ফরিদপুর বিভাগ করার উদ্যোগ নিলে তখনো শরীয়তপুরকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবিতে মাঠে নেমেছিল জাগো শরীয়তপুর।

আজ শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাগো শরীয়তপুর সংগঠনের আহ্বায়ক আমিন মোহাম্মদ (জিতু)। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার নাসির উদ্দিন, জেলা জামায়াতের আমির আবদুর রব হাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সভাপতি এস এম আহসান হাবীব, গণ অধিকার পরিষদের জেলা সভাপতি শাহজালাল, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি সাব্বির আহমেদ উসমানী, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক এইচ এম জাকির হোসেন হাওলাদার, ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি সাখাওয়াত কাউসার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার সাবেক আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, শরীয়তপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব কম এবং ফরিদপুরের দূরত্ব বেশি। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, দাপ্তরিক কাজসহ সব কার্যক্রম ঢাকার সঙ্গে। শরীয়তপুরের সঙ্গে ঢাকার বন্ধন অটুট রাখতে চান জেলার বাসিন্দারা। তাঁরা ফরিদপুর বিভাগে যুক্ত হতে চান না। প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর জেলাকে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি তাঁদের। দাবি না মানলে এক সপ্তাহ পর পদ্মা সেতু ও চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথ ব্লক করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল অচল করে দেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাতীবান্ধার ছয়টি ইউনিয়নসহ পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে রেড অ্যালার্ট জারির পর মাইকিং করে তিস্তাপারের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে লালমনিরহাটসহ নীলফামারী ও রংপুর জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা আছে। ইতিমধ্যে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে দুই উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর, আমনের খেতসহ আগাম শীতকালীন সবজির খেত।

পাউবো সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার। অর্থাৎ স্বাভাবিক বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার থেকে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আজ দুপুর ১২টায় পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বেলা তিনটায় বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তিস্তায় পানি বাড়ায় হাতীবান্ধা উপজেলার ছয় ইউনিয়নের অন্তত ১০টি চর ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলসহ মুন্সিপাড়া, ক্লিনিকপাড়া, কাদেরের চর, মহিমপাড়া, চরপাড়া, কাতিপাড়া, সৈয়দপাড়া এলাকায় পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় পাউবোর কর্মীরা তিস্তাপারের বাসিন্দাদের মাইকিং করে সরে যেতে বলেন।

হাতীবান্ধার সিন্দুর্না ইউনিয়নের চরসিন্দুর্না এলাকার এনামুল হক বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তাঁদের এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠেছে। পরিবার নিয়ে তাঁরা কষ্টে আছেন।

পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের কাতিপাড়া গ্রামের আমির হোসেন বলেন, বন্যায় ঘরে পানি ওঠায় রান্না করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। পানি সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে। প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বন্যার ক্ষয়ক্ষতি রোধে কাজ করছে।’

পাউবোর লালমনিরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়েছে। বর্তমানে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ