চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ দিন ধরে বন্ধ টিকাসেবা
Published: 5th, October 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাজুড়ে গত পাঁচ দিন ধরে টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে।
ছয় দাবি আদায়ে জেলার ২১৮ স্বাস্থ্যকর্মী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করায় বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিশুদের অভিভাবকরা সন্তানদের সময়মতো টিকা দিতে না পেরে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
দেশে ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কর্মবিরতিতে রয়েছেন ১৩ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৪২ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ১৬৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় চারজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১২ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ৫১ জন স্বাস্থ্য সহকারী কর্মবিরতি পালন করছেন। শিবগঞ্জে আন্দোলনে আছেন চারজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১৬ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ৫৪ জন স্বাস্থ্য সহকারী।
গোমস্তাপুরে তিনজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, আটজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও ৩৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী তাদের কাজ বন্ধ রেখেছেন। নাচোল উপজেলায় একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, তিনজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ১৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী কর্মবিরতিতে রয়েছেন। সবশেষ ভোলাহাট উপজেলায় একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, তিনজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ১২জন স্বাস্থ্য সহকারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাইমুনা খাতুন জানান, রবিবার (৫ অক্টোবর) তার ৩ মাস বয়নী ছেলে আহনাফ আবিদের ইপিআই টিকা দেওয়ার দিন ছিল। টিকা না পেয়ে তিনি কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন।
স্বাস্থ্য কর্মীদের এমন কর্মবিরতির কথা জানা ছিল না আরও অনেকেরই। তারাও কেন্দ্রে এসে সন্তানদের টিকা দিতে না পেরে ফেরত গেছেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের প্রাণঘাতী ১০টি রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে কাজ করলেও তারা এখনো টেকনিক্যাল পদমর্যাদা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে তারা সরকারি অন্যান্য কর্মচারীর তুলনায় বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সচিব ও মহাপরিচালক এবং ২০২০ তাদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো.
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, “গত ৫ দিন ধরে আমরা আমাদের নায্য দাবি আদায়ের জন্য অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছি। আমাদের কর্মবিরতির ফলে ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আসন্ন টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইনের রেজিস্টেশনও বন্ধ করে দিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো কাজ করব না।”
তিনি বলেন, “বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, নিয়োগবিধি সংশোধন, টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান, শিক্ষাগত যোগ্যতায় স্নাতক ও বিজ্ঞান সংযোজন, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমার মাধ্যমে ১১তম গ্রেডে পদোন্নতি ও পদোন্নতিতে ধারাবাহিক উচ্চ গ্রেড নিশ্চিত করতে হবে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন একেএম শাহাব উদ্দিন বলেন, “জেলার স্বাস্থ্য সহকারীরা কর্মবিরতি পালন করায় ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি একেবারেই বন্ধ। টিকা না পেয়ে কেন্দ্র থেকে ফিরে যাচ্ছে মানুষ। টাইফয়েড টিকা (টিসিভি) ক্যাম্পেইনের আগে তারা যদি কর্মস্থলে না ফেরেন তাহলে সরকারি এই উদ্যোগটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন স ব স থ য সহক র প ইনব বগঞ জ জন সহক র আম দ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী’
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি অপারেটরের কাছে হস্তান্তর–সংক্রান্ত সাম্প্রতিক দুটি চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছেন চট্টগ্রামের ১০ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকার এমন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। দ্রুততার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন জাতির মনে গভীর সন্দেহ তৈরি করেছে। এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয় সম্পদ। তাই বন্দর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা জাতির সামনে খোলাসা করা উচিত। এর আগে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত জনরোষের মুখে প্রত্যাহার করতে হয়েছিল।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে ৩৩ বছরের চুক্তি সম্পন্ন হয়, যা আরও ১৫ বছর বাড়ানো যেতে পারে। একই দিনে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএর সঙ্গে ২২ বছরের আরেকটি চুক্তিও করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) সরকারের পরামর্শক হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনালের কনসেশন চুক্তি তৈরি করছে।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, আইএফসির ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজরি প্রতিবেদনে প্রস্তাব জমা থেকে চুক্তি সম্পন্নের পুরো প্রক্রিয়ায় ৬২ দিনের সময়সীমা ধরা হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘অস্বাভাবিক দ্রুততায়’ মাত্র দুই সপ্তাহে চুক্তি চূড়ান্ত করে। এতে জনমনে সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে।
বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে অসতর্ক চুক্তির কারণে দেশকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষতির ভার বহন করতে হয়েছে। আফ্রিকার জিবুতির উদাহরণ টেনে তাঁরা বলেন, দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ায় ২০০৪ সালে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি জিবুতি সরকার বাতিল করেছিল। তবে ডিপি ওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়। তাতে উল্টো জিবুতি সরকারের বিরুদ্ধে সুদসহ ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ এবং স্বত্ব বাবদ আরও ১৪৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের নির্দেশ আদায়ে তারা সক্ষম হয়। এ ধরনের চুক্তির ফলে বিশ্বের বহু দেশের একই রকম খেসারত দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে।
চুক্তির টার্মিনেশন, ক্ষতিপূরণসহ আর্থিক শর্ত গোপন রাখা হলো কেন, এ প্রশ্ন তোলেন ১০ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা এসব তথ্য প্রকাশ্যে আনতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। নিউমুরিং টার্মিনালটি দেশীয় জনবল দিয়ে লাভজনকভাবেই পুরোদমে চালু আছে। বর্তমানে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান এটি পরিচালনা করছে। প্রশ্ন হলো লাভজনকভাবে চালু টার্মিনালটি কেন আমরা বিদেশিদের দেব, যেখানে কোনো নতুন বিনিয়োগের সুযোগ নেই।’
চালু টার্মিনালগুলো যেভাবে বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানই দাঁড়াতে পারবে না বলে মনে করেন ১০ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, ‘বন্দর খাতে আমাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তৈরির কোনো সুযোগ থাকবে না। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে অভিহিত করা ছাড়া উপায় থাকে না। একই সঙ্গে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, মাশুল বাড়ানো বা এ ধরনের কোনো সংকটের সময় দেশীয় প্রতিষ্ঠান বা নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থাকলে তা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যে সুযোগ থাকে তা-ও থাকবে না। পুরোটাই যদি বিদেশিদের হাতে চলে যায়, তখন সংকট থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় আমাদের হাতে থাকবে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়ে বিবৃতিদাতারা বলেন, বন্দর পরিচালনার মতো জাতীয় স্বার্থ জড়িত চুক্তি শুধু নির্বাচিত সরকারই করতে পারে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকায় তার আগেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া অযৌক্তিক।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম, লেখক ফেরদৌস আরা আলীম, নাট্যজন শিশির দত্ত, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কবি ওমর কায়সার, কবি কামরুল হাসান বাদল, লেখক ও উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব কমল সেনগুপ্ত, ভাস্কর অলোক রায় ও আইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার।