চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাজুড়ে গত পাঁচ দিন ধরে টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে।

ছয় দাবি আদায়ে জেলার ২১৮ স্বাস্থ্যকর্মী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করায় বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিশুদের অভিভাবকরা সন্তানদের সময়মতো টিকা দিতে না পেরে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। 

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

দেশে ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কর্মবিরতিতে রয়েছেন ১৩ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৪২ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ১৬৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় চারজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১২ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ৫১ জন স্বাস্থ্য সহকারী কর্মবিরতি পালন করছেন। শিবগঞ্জে আন্দোলনে আছেন চারজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ১৬ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ৫৪ জন স্বাস্থ্য সহকারী। 

গোমস্তাপুরে তিনজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, আটজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও ৩৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী তাদের কাজ বন্ধ রেখেছেন। নাচোল উপজেলায় একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, তিনজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ১৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী কর্মবিরতিতে রয়েছেন। সবশেষ ভোলাহাট উপজেলায় একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, তিনজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ১২জন স্বাস্থ্য সহকারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।

শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাইমুনা খাতুন জানান, রবিবার (৫ অক্টোবর) তার ৩ মাস বয়নী ছেলে আহনাফ আবিদের ইপিআই টিকা দেওয়ার দিন ছিল। টিকা না পেয়ে তিনি কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন। 

স্বাস্থ্য কর্মীদের এমন কর্মবিরতির কথা জানা ছিল না আরও অনেকেরই। তারাও কেন্দ্রে এসে সন্তানদের টিকা দিতে না পেরে ফেরত গেছেন। 

আন্দোলনকারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের প্রাণঘাতী ১০টি রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে কাজ করলেও তারা এখনো টেকনিক্যাল পদমর্যাদা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে তারা সরকারি অন্যান্য কর্মচারীর তুলনায় বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সচিব ও মহাপরিচালক এবং ২০২০  তাদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো.

কামাল উদ্দীন বলেন, “আমাদের দাবি টেকনিক্যাল পদমর্যাদা। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেলেও তা এখন বাস্তবায়ন হয়নি। বাধ্য হয়েই আমরা মাঠে নেমেছি।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, “গত ৫ দিন ধরে আমরা আমাদের নায্য দাবি আদায়ের জন্য অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছি। আমাদের কর্মবিরতির ফলে ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আসন্ন টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইনের রেজিস্টেশনও বন্ধ করে দিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো কাজ করব না।” 

তিনি বলেন, “বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, নিয়োগবিধি সংশোধন, টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান, শিক্ষাগত যোগ্যতায় স্নাতক ও বিজ্ঞান সংযোজন, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমার মাধ্যমে ১১তম গ্রেডে পদোন্নতি ও পদোন্নতিতে ধারাবাহিক উচ্চ গ্রেড নিশ্চিত করতে হবে।” 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন একেএম শাহাব উদ্দিন বলেন, “জেলার স্বাস্থ্য সহকারীরা কর্মবিরতি পালন করায় ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি একেবারেই বন্ধ। টিকা না পেয়ে কেন্দ্র থেকে ফিরে যাচ্ছে মানুষ। টাইফয়েড টিকা (টিসিভি) ক্যাম্পেইনের আগে তারা যদি কর্মস্থলে না ফেরেন তাহলে সরকারি এই উদ্যোগটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন স ব স থ য সহক র প ইনব বগঞ জ জন সহক র আম দ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে বিভিন্ন দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারিদের ৬ ঘন্টা  কর্ম বিরতি  

বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারীরা বিভিন্ন দাবিতে ৬ ঘন্টা কর্ম বিরতি পালন করেছে। রোববার (৫ অক্টোবর) ৬ দফা দাবিতে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত তারা এ কর্ম বিরতি পালন করেন।

কর্ম বিরতী পালন কালে বক্তারা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে বলেন, মানব শিশু জন্মের পর থেকে ১০টি মারাত্মত রোগ থেকে সুরক্ষার জন্য প্রতিষেধক হিসেবে তৃণমূল পর্যায় আমরা স্বাস্থ্য সহকারীরাই টিকা দিয়ে থাকি।

কিন্তু আমরা দীর্ঘ দিন ধরে টেকনিক্যাল পদমর্যাদার দাবি করে আসলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না করায় আমরা সরকারের অন্যান্য সকল দপ্তরের কর্মচারীদের থেকে পদমর্যাদাসহ চরম ভাবে বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।

তাই আমরা আমাদের ৬ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্ম বিরতি পালন করছি। দাবিগুলি হলো নির্বাহী আদেশে নিয়োগ বিধি সংশোধন শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক/সমমান করে ১৪তম গ্রেড প্রদান। ইন সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষনের মাধ্যমে টেনিক্যাল পদমর্যাদাসহ বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরন। পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে পরবর্তি উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিতকরণ।

পূর্বের নিয়োগবিধি অনুযায়ী নিয়োগ পেলেও কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী সকল স্বাস্থ্য পরিদর্শক স্বাস্থ্য পরিদর্শদের অভিজ্ঞতার আলোকে স্নাতক পাস স্কেলে আত্মীকরণ করতে হবে।

বেতন স্কেলে উন্নীতকরণের পূর্বে স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক,স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ যত সংখ্যক টাইম স্কেল অথবা উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্ত বা প্রাপ্য হয়েছেন তা পরবর্তী পুন:নির্ধারিত বেতন স্কেলের সাথে যোগ করতে হবে।

পূর্বে ইন সার্ভিস ডিপ্লোমা এসআইটি কোর্স সম্পূর্নকারী স্বাস্থ্য মহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকদেরকে ডিপ্লোমাধারী সম্পন্ন হিসাবে গণ্য করে সরাসরি ১১তম গ্রেড দিতে হবে।

কর্মবিরতী  পালনকালে  বক্তব্য রাখেন সভাপতি মুহাম্মদ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান, যুগ্ম সম্পাদক রাজিবুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে রুম্মান রিক্তা প্রমুখ।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দরে বিভিন্ন দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারিদের ৬ ঘন্টা  কর্ম বিরতি  
  • গোপালগঞ্জে ৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি