ভারতের ওড়িশা রাজ্যের হাজার বছরের পুরোনো শহর কটক, যা দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য পরিচিত। শহরটিতে দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন শোভাযাত্রাকে করে দুই দিন আগে সংঘর্ষের পর গতকাল রবিবার নতুন করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে শহরটিতে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন। 

সোমবার (৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

আরো পড়ুন:

বক্স অফিসে বইছে ‘কানতারা টু’ ঝড়

ভারতে হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে আগুন, নিহত ৮

প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরের দরগাহ বাজার এলাকায় দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন শোভাযাত্রার সময় উচ্চ শব্দের সংগীত বাজানো নিয়ে বিরোধ থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। পরে রাজনৈতিক মহলগুলোর ‘বন্‌ধের ডাক ও শান্তির আহ্বান’-সব মিলিয়ে উত্তেজনা আরো বেড়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে দরগাহ বাজার এলাকায় প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা কাটাজোড়ি নদীর তীরে যাওয়ার পথে থামিয়ে দেয় একদল স্থানীয় বাসিন্দা, যারা গভীর রাতে উচ্চ শব্দে গান বাজানোয় আপত্তি তুলেছিল।

দ্রুতই বিতর্ক দ্রুত সংঘর্ষে রূপ নেয়। ছাদ থেকে পাথর ও বোতল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। আর শোভাযাত্রার অংশগ্রহণকারীরাও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়। এতে কটকের ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ খিলাড়ি ঋষিকেশ দ্যানদেওসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ হালকা লাঠিচার্জ চালায়। এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি, ড্রোন ও মোবাইল ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অন্য অভিযুক্তদের চিহ্নিত করছে।

পুলিশ কমিশনার এস দেব দত্ত সিং বলেন, “যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা পাথর ছোড়ার ঘটনায় জড়িত। সিসিটিভি ফুটেজে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। আরো গ্রেপ্তার করা হবে।”

শনিবার রাতের সহিংসতার পর রবিবার সন্ধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোটরসাইকেল র‌্যালি বের করে। র‌্যালিটি দরগা বাজার অতিক্রমের সময় একাধিক দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টাকারী দলগুলোকে ছত্রভঙ্গ করতে হালকা বল প্রয়োগ করেছে।

সহিংসতা ও উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ওড়িশা সরকার রবিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কটক পৌরসভা এলাকা, সিডিএ ও আশপাশের অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এ সময় হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও বন্ধ থাকবে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো ভুল তথ্যের প্রচার রোধ করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনাপূর্ণ কনটেন্ট ঠেকানো।

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাজি এক বিবৃতিতে বলেন, সহস্র বছরের ভ্রাতৃত্বের শহর কটকের শান্তি কিছু দুষ্কৃতীর কারণে বিঘ্নিত হয়েছে। দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্যদিকে, বিজেডি নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বলেন, ভ্রাতৃত্বের শহর কটকে এ ধরনের পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছে।

শান্তিপূর্ণ প্রতিমা বিসর্জন নিশ্চিতে প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে সোমবার কটকে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ ডাক দিয়েছে ভিএইচপি।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

জম্মুতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের দাবিতে উগ্রপন্থী বজরং দল ও ভিএইচপির বিক্ষোভ

ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা এবার জম্মুর মেডিকেল কলেজ থেকে মুসলিম শিক্ষার্থীদের থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছে। জম্মু অঞ্চলে সংঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন কাটরাভিত্তিক শ্রীমাতা বৈষ্ণদেবী ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল এক্সেলেন্সের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ভর্তির তালিকা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে। তাদের মূল দাবি, নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মুসলিম এবং তাঁরা কাশ্মীরের বাসিন্দা।

বিজেপির বিধায়ক আর এস পাঠানিয়া এই বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে রয়েছে ভিএইচপি এবং বজরং দল। তাঁর প্রধান যুক্তি হলো, বৈষ্ণদেবী মন্দিরের দান করা অর্থ দিয়ে যে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হয়েছে, সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের আধিপত্য থাকা উচিত নয় এবং হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে।

তবে কর্মকর্তারা বলছেন, বৈষ্ণদেবী মেডিকেল ইনস্টিটিউটকে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়নি। তাই বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী সেখানে হিন্দুদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়।

ভর্তির তালিকা ও বিক্ষোভের কারণ

জম্মু ও কাশ্মীর বোর্ড অব প্রফেশনাল এন্ট্রান্স এক্সামিনেশনস (জেকেবিওপিইই) বৈষ্ণদেবী মেডিকেল ইনস্টিটিউটের জন্য ৫০ জন প্রার্থীর একটি তালিকা প্রকাশের পরই এই বিক্ষোভ শুরু হয়।

নির্বাচিত ৫০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪২ জন কাশ্মীরের এবং ৮ জন জম্মুর। কাশ্মীর থেকে ইতিমধ্যে ৩৬ জন এবং জম্মু থেকে ৩ জন ভর্তি হয়েছেন।

উগ্র হিন্দু্ত্ববাদী ভিএইচপি ও বজরং দল কাটরা ইনস্টিটিউটের বাইরে আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছে এবং বৈষ্ণদেবী মন্দির বোর্ডের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে।

ভিএইচপির জম্মু ও কাশ্মীর শাখার সভাপতি রাজেশ গুপ্তা দাবি করেছেন, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি স্থগিত রাখতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে তাদের ‘ভুল সংশোধন’ করে পরবর্তী ব্যাচে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি এবারের ৫০ জনের তালিকাটিকে ‘মেডিকেল কলেজটিকে ইসলামীকরণের ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করেছেন।

বজরং দলের জম্মু ও কাশ্মীর শাখার সভাপতি রাকেশ বজরঙ্গি জেকেবিওপিইইর তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, মন্দির বোর্ড যেহেতু সারা দেশের ভক্তদের দানে চলছে, তাই কলেজটির উচিত ছিল কেন্দ্রীয় এনইইটি পুল থেকে সারা ভারতের প্রার্থীদের ভর্তি করা।

বিজেপির বিধায়ক পাঠানিয়া যুক্তি দেন, ‘যেহেতু এই প্রতিষ্ঠান সরকারের থেকে এক পয়সাও অনুদান নেয় না এবং সম্পূর্ণরূপে তীর্থযাত্রীদের দানে চলে, তাই এখানে হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা উচিত।’

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও বিধিমালা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ন্যাশনাল মেডিকেল কাউন্সিলের (এনএমসি) নির্দেশিকা অনুযায়ী ভর্তিপ্রক্রিয়া হয়েছে এবং এটি সম্পূর্ণ বৈধ। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী—

জম্মু ও কাশ্মীরের ১৩টি মেডিকেল কলেজের ১ হাজার ৬৮৫টি আসনে এনইইটির তালিকার ভিত্তিতে ভর্তি করতে হবে।

৮৫ শতাংশ আসন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং ১৫ শতাংশ আসন দেশের বাকি অংশের প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

জেকেবিওপিইইর কাজ হচ্ছে এনইইটি র‍্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে সরকারি কলেজগুলোতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দাদের কোটা এবং বেসরকারি কলেজগুলোর সব আসনের জন্য তালিকা তৈরি করা।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, এই প্রবণতা নতুন নয়। যদিও জম্মু অঞ্চলে কাশ্মীরের তুলনায় বেশি মেডিকেল আসন (জম্মুতে ৯০০, কাশ্মীরে ৬৭৫) রয়েছে, তবু কয়েক বছর ধরে কাশ্মীরের শিক্ষার্থীরাই বেশির ভাগ আসনে ভর্তি হচ্ছেন। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং আসনগুলোর ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র দেখা যায়। সেখানে জম্মুর শিক্ষার্থীরা বেশি ভর্তি হন।

ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রতিক্রিয়া

ন্যাশনাল কনফারেন্সের জম্মু প্রদেশের সভাপতি রতন লাল গুপ্ত এই পরিস্থিতির জন্য কলেজ পরিচালনাকারী শ্রীমাতা বৈষ্ণদেবী বোর্ডকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য এনএমসিতে আবেদন করার সময় তাঁদের সংখ্যালঘু মর্যাদার জন্যও আবেদন করা উচিত ছিল।

যেহেতু মন্দির বোর্ড সংখ্যালঘু মর্যাদার জন্য আবেদন করেনি, তাই জেকেবিওপিইইর কাছে এনইইটি-এ পাওয়া মেধার ভিত্তিতে ছাত্র নির্বাচন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। গুপ্ত বলেন, উচ্চ মেধার অধিকারী বেশির ভাগ শিক্ষার্থী কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ভুক্ত (মুসলিম) ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইস্তাবুল যখন ‘ক্যাটস্তাম্বুল’
  • জম্মুতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের দাবিতে উগ্রপন্থী বজরং দল ও ভিএইচপির বিক্ষোভ
  • নারী ক্রিকেটের প্রধান হলেন রুবাবা দৌলা