বাংলাদেশে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে ‘অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের রায় নিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তাদের সঙ্গে কাজ করবে ভারত।

সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন বিক্রম মিশ্রি। এ সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল, যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) বি শ্যাম, ডিক্যাব প্রেসিডেন্ট এ কে এম মঈনুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো.

আরিফুজ্জামান মামুন উপস্থিত ছিলেন।

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ডিক্যাবের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল বর্তমানে দেশটি সফর করছে।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে যে সরকার আসবে, তাদের সঙ্গে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, পানিবণ্টন ইস্যু এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থান করা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে থাকা উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্কে কিছু ইস্যু রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শুধু এই অঞ্চল থেকে নয়, বৈশ্বিকভাবে দেখা হচ্ছে। তা হলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরবর্তী ধাপ কী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন নিয়ে ঘোষণা ও বিবৃতি আমরা সবাই দেখেছি। আমি যেটা বুঝেছি তা হলো, এ ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি নাগাদ একটি সময়সীমার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।’

বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার যে বার্তা দিয়েছে, আমরা তাতে উৎসাহিত এবং আমরা প্রতীক্ষায় আছি যে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

বিক্রম মিশ্রি আরও বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে একটি সরকার নির্বাচিত হবে এবং বাংলাদেশের জনগণের তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যাদের নির্বাচিত করবে, সেই সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করব।’

শান্তি ও স্থিতিশীলতা

এই অঞ্চলে ভারতের ভূমিকা নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব দাবি করেন, বাংলাদেশে উন্নয়ন, শান্তি, অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতায় ভারতের উল্লেখযোগ্য অংশীদারত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এর সবগুলো বিষয় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত এবং এর প্রতি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই—এটা শুধু আমাদের জন্য নয়, এটা আমাদের উভয়ের স্বার্থের জন্য করা হয়।’

একটি বড় দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে আমি যেতে চাই না। এই নির্বাচন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে কীভাবে দেখা হবে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ, জনগণ ও সুশীল সমাজ তাদেরকে নিজেদের মূল্যায়ন করতে হবে।’ এটা শুধু অভ্যন্তরীণ বৈধতার বিষয় নয়, বাইরের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘এসব সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমানের ওপর প্রভাব ফেলবে না। মধ্য থেকে দীর্ঘ মেয়াদেও এর প্রভাব থাকবে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সন্দেহাতীতভাবে একটি নির্দিষ্ট ‘ম্যান্ডেট’ আসবে উল্লেখ করে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘এই ম্যান্ডেটকে কীভাবে দেখা হবে সে প্রশ্ন যখন আসবে তখন ভারত হস্তক্ষেপ করবে না। বাংলাদেশের মানুষই এ বিষয় নির্ধারণ করবে।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এর প্রভাব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘এটা বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা ও মতবিনিময় প্রয়োজন। আমরা এসব বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এসব বিষয়ে কাজ করার প্রতীক্ষায় আছি। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আর কিছু বলা গঠনমূলক হবে বলে আমি মনে করছি না।’

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও ভারত ঢাকার সঙ্গে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে উল্লেখ করেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, ‘এগুলো আমাদের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যুক্ত হতে বা কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘আমি শুধু এটা বলতে পারি যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আমরা মূল্য দিই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট রসচ ব জনগণ র ক জ কর উল ল খ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম গণসংযোগ করলেন বিএনপি নেতা ইসরাফিল খসরু

নির্বাচনী প্রচারণায় জমে উঠছে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর পতেঙ্গা) আসন। এই আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। তবে দলের মনোনয়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু। তিনি প্রতিদিনই এলাকায় সভা, সমাবেশ ও উঠোন বৈঠক করছেন। গতকাল শনিবার নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে বারিক বিল্ডিং মোড়ে সমাবেশ করেন ইসরাফিল খসরু।

বিগত ১৭ বছর বিএনপির কেউ মাঠ ছেড়ে যায়নি মন্তব্য করে ইসরাফিল খসরু বলেন, বিএনপি জনগণের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে। তাই আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রশাসনে নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হবে, বিচার বিভাগ স্বাধীন করা হবে এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি জাতির পুনর্জাগরণের নীলনকশা। এই দফাগুলোর মাধ্যমে দেশে সুশাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ১০টিতে প্রার্থী ঘোষণা হয়। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। এ আসনে দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী ইসরাফিল খসরু ও নগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান। ইসরাফিল খসরু বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পরপর চারবার এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আমীর খসরু মাহমুদ।

এবারের নির্বাচনে এক পরিবার থেকে একজনকে প্রার্থী করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এর মধ্যেও দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরাফিল খসরু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আশাবাদী। বাকিটা দলের নীতিনির্ধারকদের বিষয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কয়েক দিনের মধ্যেই এনসিপি–এবি পার্টিসহ নতুন জোট: মজিবুর রহমান
  • বিদেশিদের দালালি করা দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না জনগণ 
  • সিএমএম আদালতে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
  • নির্বাচনে জয়ী হলে আমরা জনগণের খাদেম হব, শাসক নয়: জামায়াত নেতা বুলবুল
  • চট্টগ্রাম গণসংযোগ করলেন বিএনপি নেতা ইসরাফিল খসরু
  • জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আ. লীগ পুনর্বাসনের চক্রান্ত জনগণ মানবে না: নাহিদ
  • নির্বাচন হতেই হবে, না হলে দেশে সংকট হবে: ডা. শফিকুর
  • নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নতুন ইতিহাস রচিত হবে: ডা. শফিকুর
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় হয়েছে: খেলাফত মজলিস
  • কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দেব: সাতক্ষীরার ডিসি