জাহানারার যৌন হয়রানির অভিযোগ, তদন্তে বিশেষজ্ঞ সদস্য চায় টিআইবি
Published: 9th, November 2025 GMT
জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটার জাহানারা আলমের যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে বিসিবির তিন সদস্যের কমিটি গঠনকে স্বাগত জানিয়ে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অন্তত দুজন স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞকে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রবিবার (৯ নভেম্বর) টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.
এখানে আরো উদ্বেগের বিষয় হলো, এর আগেও উত্থাপিত যৌন নীপিড়নের অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিসিবি বরং অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে নীপিড়কের বিচারহীনতাকে প্রশ্রয় দিয়েছে। যা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট তথা সার্বিক ক্রীড়াঙ্গনে একদিকে যেমন পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করছে, অন্যদিকে নারীর অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকে পদদলিত করার ষড়যন্ত্রের অংশ কি-না—এ প্রশ্ন উত্থাপন করা মোটেও অযৌক্তিক নয়।”
উত্থাপিত অভিযোগকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, “উক্ত ক্রিকেটার এ অভিযোগ সামনে আনার পর আরো অনেক অভিযোগের কথাই জানা যাচ্ছে। এসব অভিযোগের কোনো রকম প্রতিকার না হওয়া প্রমাণ করে, বিসিবিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ ও আইসিসির নির্দেশিকা অমান্য করে যৌন হয়রানি রোধে নীতিমালা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অনুপস্থিত থাকাই শুধু সমস্যা নয়, বরং নারী ক্রিকেটারদের জন্য সমঅধিকারমূলক ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির পথে প্রতিকূলতাকে রীতিমতো স্বাভাবিকতায় পরিণত করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাধীন যৌন হয়রানির অভিযোগ গ্রহণ ও প্রতিকার কমিটি গঠন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিসিবিকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধসহ নিজস্ব সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কাঠামো গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “২০০৯ সালের ১৫ মে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়, যা বিসিবির মতো প্রতিষ্ঠান কোনো ক্রমেই অমান্য করতে পারে না। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নীতিমালারও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে চলেছে বিসিবি। আইসিসির Safeguarding Guidance for Members (মে ২০১৯) অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্য বোর্ডের দায়িত্ব নিজ নিজ পর্যায়ে সব অংশগ্রহণকারীর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
“নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, প্রত্যেক বোর্ডকে এমন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে যৌন হয়রানি, বৈষম্য বা ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধ ও প্রতিকারের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকে। নির্দেশিকায় আরো বলা হয়েছে, প্রতিটি বোর্ডে প্রশিক্ষিত একজন Safeguarding Officer বা Focal Point থাকতে হবে, যিনি অভিযোগ ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা কাঠামো বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবেন। আইসিসির নীতিমালা অনুযায়ী, যৌন হয়রানি, মানসিক নির্যাতন বা ক্ষমতার অপব্যবহার কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না, এবং সদস্য বোর্ডগুলোকে Zero tolerance নীতি অনুসরণ করে নেতৃত্ব পর্যায়ে দৃশ্যমান দায়বদ্ধতা দেখাতে হবে। দ্রুততম সময়ে বিসিবিকে আইসিসি-এর নির্দেশনা অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র, জেন্ডার সংবেদনশীল ও কার্যকর Safeguarding Policy প্রণয়ন, প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা নিয়োগ এবং ভবিষ্যতের সব তদন্তে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ন হয়র ন র অন য য় ট আইব তদন ত সদস য আইস স
এছাড়াও পড়ুন:
ন্যায়বিচার নেই, কারণ কাঠামোটাই বৈষম্যমূলক
নয়া উদারনৈতিক দুনিয়ায় আদর্শ রাষ্ট্র বা ন্যায্য শাসনব্যবস্থার প্রধান কয়েকটি বুলি হচ্ছে ‘আইনের শাসন’, ‘মানবাধিকার’ ও ‘গণতন্ত্র’। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ত্রাণসহায়তা ও বিনিয়োগের অন্যতম শর্ত আইনের শাসন। এমনকি রাশিয়া, চীন প্রভৃতি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার দেশগুলোও আইনের শাসনের পক্ষে কথা বলে। বস্তুত যেকোনো সরকারের বৈধতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি আইনের শাসন।
কিন্তু আইনের শাসন আসলে কী? সহজভাবে বললে ব্যাপারটা এই যে শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হবে সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন বা আইনের অধীন। শাসনকার্য পরিচালিত হবে শুধু আইনমাফিক, আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য, আইনের অনুমোদন ছাড়া কারও অধিকার লঙ্ঘন করা যাবে না, সবাই আইনের সমান সুরক্ষা পাবে ইত্যাদি।
এখানে আইনের শাসন প্রধানত কিছু পদ্ধতি নির্দেশ করে। আইন কীভাবে তৈরি হবে (গণতান্ত্রিক না স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে), তার উপাদানগুলো কী হবে (মৌলিক অধিকার, ন্যায্যতা, সমতা, ন্যায়বিচার থাকবে কি না)—এসব বিষয়ে কিছু বলে না। এই ধারণায় চরম কর্তৃত্ববাদী সরকারও দাবি করতে পারে যে সে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে; কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে সে স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তকেও আইনসিদ্ধ করে নিতে পারে।
আইনের শাসনের সবচেয়ে সমাদৃত ধারণায় বলা হয়, আনুষ্ঠানিক আইনি কাঠামোর পাশাপাশি আইন প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় জনগণের সম্মতি বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকতে হবে। এখানে আইনসিদ্ধতার পাশাপাশি বৈধতার ধারণা গুরুত্ব পায়। আনুষ্ঠানিক আইনি কাঠামো ছাড়া গণতন্ত্র বর্মহীন; কারণ, নির্বাহী বিভাগ আইনের পরিধি নিজের ইচ্ছেমতো কমাতে-বাড়াতে পারে। একইভাবে গণতন্ত্র ছাড়াও আনুষ্ঠানিক আইনি কাঠামো বৈধতার সংকটে পড়ে। এখানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার কেবল প্রত্যক্ষ আইনের উপাদান নয়, বরং পুরো ব্যবস্থার বৃহত্তর পটভূমি হিসেবে বিবেচিত হবে। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও তার জুডিশিয়াল রিভিউর ক্ষমতা হবে ভারসাম্যের কেন্দ্র। প্রকৃতপক্ষে বিচার বিভাগকে এখানে সালিসকার হিসেবে কাজ করার কর্তৃত্ব দেওয়া থাকে।
আইনের শাসনের এই ধারণার সারমর্ম দাঁড়ায়—আইনের শাসনে রাষ্ট্রের যাবতীয় ক্ষমতা আইন-নির্ধারিত আওতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মৌলিক অধিকার অনুযায়ী এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতের অধীন কাজ করবে। আইন প্রণীত হবে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী প্রক্রিয়ায়; মৌলিক অধিকার পরিপন্থী কোনো আইন প্রণীত হবে না। আইন প্রয়োগকারীদের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল রিভিউর সুরক্ষা থাকবে; ক্ষমতার পৃথক্করণ, মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, নিরপেক্ষ আদালতে সহজ, দ্রুততর ও হয়রানিমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকবে। সর্বোপরি নাগরিকদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র নিজেও আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকবে। বাংলাদেশেও আইনের শাসনের এসব নীতিমালা গৃহীত হয়েছে, পাঁচ দশকের সব শাসকই মুখে মুখে তা প্রতিষ্ঠার কথা বলে এসেছেন। কিন্তু এই আইনের শাসন আসলে আমাদের জন্য কী বয়ে এনেছে আর কী আনতে যাচ্ছে?
২
বাংলাদেশে আইন প্রণয়ন করা হয় জাতীয় সংসদে, জনগণের নির্বাচিত ‘জনপ্রতিনিধি’দের মাধ্যমে। এটা আইন প্রণয়নের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া মাত্র। আসলে আমাদের আইন প্রণীত হয় সচিবালয়ে, আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, পুরোপুরি নির্বাহী বিভাগের প্রযোজনায়। আইনের খসড়া তৈরি করেন আমলারা। ফলে দণ্ডবিধিতে সুস্পষ্ট বিধান থাকার পরও প্রতিটি আইনে আমলাদের জন্য ‘সরল বিশ্বাসে কৃতকর্মের’ জন্য দায়মুক্তির বিধান রাখা হয়। খসড়া তৈরিতে সাহায্য করেন ক্ষমতাসীন দলের অনুগত শিক্ষক-পরামর্শক-বুদ্ধিজীবীরা।
বিলের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ার পর আইন মন্ত্রণালয়ে যায়। মন্ত্রিসভার অনুমোদন মানেই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন। তারপর প্রধানত কারিগরি ত্রুটিবিচ্যুতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সংসদে যেতে পারে আইন হিসেবে পাস হওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা সংসদে পাস না হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। সংসদের মোট সময়ের মধ্যে আইন প্রণয়নে ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ১০-১২ শতাংশ। ২০-৩০ মিনিটেই একটা বিল পাস হয়ে যায়। সেখানে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় কেবলই ‘হ্যাঁ জয়যুক্ত’ হয়।
জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকলে বা সংসদ ভেঙে দেওয়া হলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি যেহেতু ক্ষমতাহীন, তাঁর নামে এই ক্ষমতাও চর্চা করেন প্রধানমন্ত্রী কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। সংসদের পরবর্তী অধিবেশনের সংসদে তা অনুমোদিত হয়। সংসদে গৃহীত আইনের প্রায়োগিক নীতিমালার জন্য প্রণীত হয় বিধি বা প্রবিধিমালা। এগুলো পুরোপুরি আমলাতান্ত্রিক প্রযোজনা। অংশীজনদের মতামত চাওয়া হয়, জনপরিসরে বিভিন্ন তর্কবিতর্ক ওঠে, কিন্তু চূড়ান্ত খসড়ায় সেসবের কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না।
মামলার দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে রায়প্রত্যাশী অনেকে হয়রানির শিকার হন