সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে উল্লেখ করে এসব ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। আজ মঙ্গলবার দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৪ অক্টোবর নরসিংদীতে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযানকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ওপর আক্রমণ হয়। এ ছাড়া বগুড়ার শিবগঞ্জে নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যকে গ্রেপ্তারের সময় অতর্কিত হামলা চালিয়ে হাতকড়াসহ আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। ৫ অক্টোবর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে নিয়মিত চেকপোস্টে ট্রাকশ্রমিকদের হামলায় আরও পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। আজ ফেনীর সোনাগাজী থানায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একটি কুচক্রী মহল সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ পুলিশের মনোবল দুর্বল করার নিমিত্তে ইউনিফর্মধারী পুলিশকে পেশাগত কাজে বাধা দেওয়া এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এসব আইনশৃঙ্খলাবিরোধী পরিকল্পিত বেআইনি কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে যে এসব বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ পুলিশ সদা তৎপর রয়েছে এবং তারা পেশাদারত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আদর্শ ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাবে।’

এদিকে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ওপর একাধিক দুঃখজনক হামলার ঘটনা বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নজরে এসেছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও বেআইনি ঘটনা শুধু পুলিশ বাহিনীর জন্য নয়, রাষ্ট্রের সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্যও হুমকিস্বরূপ। পুলিশের বৈধ দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া, হামলা বা লাঞ্ছনার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।

আরও পড়ুনসড়কে চাঁদাবাজি থামাতে গিয়ে মার খেলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার০৪ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য ব আইন র ঘটন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সহিংসতার পেছনে ইউপিডিএফের উসকানি দায়ী: জেএসএস

খাগড়াছড়ি জেলা সদর এবং গুইমারা উপজেলায় সংঘটিত সহিংসতার ঘটনার জন্য ইউপিডিএফের উসকানিকে দায়ী করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। পাহাড়ি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ইউপিডিএফ ছাত্রদের আন্দোলনে উসকানি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এ ঘটনায় জেএসএসের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে।

‘খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করা হয়। আজ রোববার প্রকাশিত এই প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে জেএসএসের তথ্য ও প্রচার বিভাগ। জেএসএসের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা প্রতিবেদন প্রকাশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অবরোধ ডাকা হয়। অবরোধের মধ্যেই গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে তিন পাহাড়ি তরুণ নিহত হন। আর আগুন দেওয়া হয় বাজারে। এতে ৪০টি দোকান ও ৫০টি বসতঘর পুড়ে যায়। এদিকে গত মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দেয় মেডিকেল বোর্ড।

রোববার প্রকাশিত জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া পাহাড়ি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদকারী জুম্ম ছাত্র-জনতার সঙ্গে ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বাঙালিদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন পাহাড়ি ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামেসু বাজারে পাহাড়ি বসতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বাঙালি ও বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা একসঙ্গে হামলা চালায়। এতে ৩ পাহাড়ি নিহত হন। আহত হয়েছেন ২০ জনের বেশি। রামেসু বাজারে আগুনে ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পাহাড়ি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং পাহাড়ে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি সদরে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই সমাবেশে ইউপিডিএফের কতিপয় লোক প্রবেশ করে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে এবং উসকানি দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। একইভাবে গুইমারা ঘটনাও ইউপিডিএফের উসকানিতে সহিংস রূপ লাভ করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।

জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের প্রতিবাদকারী বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উক্যেনু মারমাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক তুলে নেওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাঁর নেতৃত্বে ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছিল। তবে ২৭ ও ২৮ অক্টোবর অবরোধ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল সাংগঠনিকভাবে যুক্ত নয় বলে বিবৃতি দেয়। এ থেকে বোঝা যায় আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ইউপিডিএফ ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে নানাভাবে উসকানি দিয়েছিল। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে অবস্থানকারী ইউপিডিএফের সমর্থক, পরামর্শক ও সহযোগী হিসেবে পরিচিত দু-একজন ব্লগার ও ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভেদ, উসকানিমূলক এবং হঠকারী বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

পাহাড়ে নারী ও শিশুদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ২৯ জন পাহাড়ি নারী ও শিশু মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। দশকের পর দশক ধরে নারী ও শিশুরা সহিংসতার শিকার হলেও সুষ্ঠু বিচার পেয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত নেই। এমনকি সঠিক তদন্তও হয় না।

প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

তবে জেএসএসের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, এটি একটি ছাত্র-জনতার আন্দোলন। জেএসএসের বিবৃতি বা প্রতিবেদন দেখলে বোঝা যায়, জুম্ম ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে বিতর্কিত করে প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে এআইয়ের অপব্যবহারও এখন চ্যালেঞ্জ
  • বিহার রাজ্যে কবে ভোট হবে, জানিয়ে দিল ইসি
  • ভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থার বিষয়ে সিইসি: তথ্য পেতে তালিকা পত্রিকায় দিয়েছে ইসি
  • খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সহিংসতার পেছনে ইউপিডিএফের উসকানি দায়ী: জেএসএস
  • অসুরের মুখে দাড়ি লাগিয়ে ধর্মীয় বিভেদ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি
  • সেই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • অসুরের মুখে দাড়ি লাগানোর ঘটনায় কারা জড়িত, অনুসন্ধান চলছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা