দুর্বোধ্য প্রস্তাবে গণভোট জনগণের প্রতি অবিচার
Published: 8th, October 2025 GMT
ঐকমত্য একটি চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দরকার। সাধারণ মানুষের চাহিদাটি হলো একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং অর্থনীতি ভালো থাকা। এই দুটি বৃহত্তর জাতীয় চাহিদা মাথায় রেখেই আমাদের সমাধান খোঁজা দরকার।
আমরা দেখছি, একটু ঐকমত্য হলো, আবার ঐকমত্যের ঘাটতি হলো—এখানে পরীক্ষা সবাই দিচ্ছে। কমিশন তার দক্ষতা ও নিয়তের পরীক্ষা দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো সদিচ্ছার পরীক্ষা দিচ্ছে। জনগণ এখানে অনুপস্থিত নয়। জনগণ যমুনায় আমন্ত্রিত হচ্ছে না, কিন্তু পুরো প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রক্রিয়া তিনটি গন্তব্যের দিকে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি কাঙ্ক্ষিত। সেটি হলো, সম্মানজনক ও কার্যকর সমাপ্তি। দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত। একটি হলো, ব্যাপক আয়োজন সত্ত্বেও কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল না আসা। অন্যটি হলো, হযবরল অবস্থা তৈরি হওয়া। এটির মানে হলো, এগোনোর পথ অপরিষ্কার।
আরও পড়ুনসংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়ার সুপারিশ করতে পারে কমিশন ৫৭ মিনিট আগেএকটা বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। যাঁরা ঐকমত্যের প্রক্রিয়ায় আছেন, ঐকমত্যের কথা বলছেন, কখনো কখনো তাঁরা একে অপরকে অবিশ্বাস করছেন। অবিশ্বাসের মধ্যে আমরা ঐকমত্য তৈরি করতে চাইছি, এটা তো স্ববিরোধী ব্যাপার।
আমরা দেখছি, যেখানে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন ছিল, সেটার বদলে গণভোটের দিকে যাত্রা করা হচ্ছে। কারণ, নিজেরা সমঝোতায় আসতে পারছে না। গণভোট কখন হবে, সেটা নিয়েও একেক পক্ষের মতামত একেক রকম। এ ক্ষেত্রে অনুপস্থিত মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী জনগণ চরম বিরক্ত ও হতাশ হবে। কারণ, জনগণ চায় সম্মানজনক ও কার্যকর সমাপ্তি। অন্য কোনো গন্তব্য যেন তৈরি না হয়।
হযবরল অবস্থা তৈরি হলে দেশের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণ হবে না। কোনোরকম উত্তরণ হলেও সমস্যার সমাধান ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হবে না। সে জন্য আশা করব, সদিচ্ছার পরীক্ষায় রাজনৈতিক পক্ষগুলো যেন উত্তীর্ণ হয়। হযবরল অবস্থা তৈরির আশঙ্কা যেন তারা বুঝতে পারে।
এখন সামনে এসেছে গণভোটের প্রসঙ্গ। এটা একধরনের মতামত জরিপ। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারে (পিপিআরসি) আমাদের মতামত জরিপ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে। এটাকে পন্থা হিসেবে গ্রহণ করতে হলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনগণভোটে ঐকমত্য, তবে সেটা কখন তা নিয়ে বিএনপি–জামায়াতের ভিন্ন মত০৫ অক্টোবর ২০২৫কোনো জটিল ও দুর্বোধ্য প্রস্তাবের ওপর গণভোট জনগণের প্রতি অবিচার করার শামিল। এতে হযবরল অবস্থা তৈরির আশঙ্কাই বেশি। গণভোটের মাধ্যমে মানুষকে তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষা যদি এলিটদের (অভিজাত শ্রেণি) থাকে, সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। গণভোটের ক্ষেত্রে জটিল প্রস্তাব পরিহার করা প্রয়োজন। কারণ আমরা দেখেছি, জটিল বিষয়ে মতামত জরিপে প্রকৃত ফলাফল আসে না।
গণভোটের ক্ষেত্রে প্রশ্নটি যদি প্রাক্-ধারণানির্ভর হয়, তাহলে কিন্তু সেটা সৎ গণভোট হবে না। গণভোট সৎ হওয়া দরকার। কী চাওয়া হচ্ছে, সেটা কি মানুষের কাছে পরিষ্কার? মানুষ কি জুলাই সনদ সম্পর্কে জানে? মানুষ কি আইনি ভিত্তি দিলে কী হবে, সে সম্পর্কে ধারণা রাখে? শহরের মানুষ কিছু কিছু জানতে পারে। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের প্রান্তিক মানুষেরা সেটা সম্পর্কে কি ধারণা রাখে?
মতামত জরিপের একটি সাধারণ সমস্যা হলো ‘লিডিং কোশ্চেন’ সমস্যা। আমি যেভাবে উত্তর চাই, সেভাবেই প্রশ্নটি সাজালাম। কিন্তু সেটা হওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে একমত০৫ অক্টোবর ২০২৫জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমের কার্যকর ও সম্মানজনক পরিসমাপ্তি যদি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে হয়ে যায়, তারপর আরেকটি ঐকমত্য দরকার হবে। সেটিকে আমি বলছি ‘অন্য ঐকমত্য’। এর জন্য গণভোটের দরকার নেই। অন্য ঐকমত্য হলো, রাজনৈতিক দলগুলোকে গণ ঘোষণার মাধ্যমে বলতে হবে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলো কী কী করবে। এ বিষয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকা দরকার। নির্বাচনী ইশতেহারে সেটা থাকতে পারে। তাহলে আমরা বলতে পারব, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ঐকমত্য যেমন হয়েছে, তেমনটি ‘অন্য ঐকমত্যও’ হয়েছে।
মানুষ যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান করেছে, সেটার আকাঙ্ক্ষাকে কোনোভাবেই বিসর্জন দেওয়া যাবে না। এটা আমাদের অন্যতম একটি জাতীয় অর্জন। কাগজে-কলমে যা-ই হোক, আইন হোক, ধারা যুক্ত হোক, সেটা ছুড়ে ফেলে দেওয়া যায়। এর অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। কিন্তু যেটা ছুড়ে ফেলা যায় না, সেটা হলো মানুষের আকাঙ্ক্ষা, পরিবর্তনের প্রত্যাশা। জনপরিসরে সুস্পষ্ট অঙ্গীকারে শামিল হলে সেখান থেকে ফিরে যাওয়াটা কঠিন।
হোসেন জিল্লুর রহমান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান
[মতামত লেখকের নিজস্ব]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক গণভ ট র ঐকমত য আম দ র পর ক ষ দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিএমএম আদালতে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সম্মেলন কক্ষে শনিবার পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে সিএমএম আদালত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কনফারেন্সে সাক্ষীদের হাজির করা, পুলিশ রিমান্ড ও অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন, আদালত চত্বরের নিরাপত্তা বিধান, অনুসন্ধান বা তদন্তের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, জখমি সনদ (ইনজুরি সার্টিফিকেট), ময়নাতদন্ত, মরদেহের ফরেনসিক ও ভিসেরা প্রতিবেদন, মালখানা থেকে আদালতে আলামত উপস্থাপন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো.সাব্বির ফয়েজ। তিনি বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি হচ্ছে। কিন্তু সেই সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। অপরাধী যেই হোক না কেন, তাঁর যথোচিত বিচারও যেমন হতে হবে তেমনি বিচারের খবরটিও জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে সাব্বির ফয়েজ বলেন, মানুষ আপনাদের প্রশংসা করার জন্য মুখিয়ে আছে। তারা আপনাদের কাছ থেকে শুধু আন্তরিক ব্যবহার ও সহযোগিতা চায়। তারা চায়, আপনারা হাসি মুখে দায়িত্ব পালন করুন। মানুষ আপনার ক্ষমতা দেখতে চায় না। দায়িত্ব পালন দেখতে চায়।
ঢাকার সিএমএম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে যাওয়ার পথে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার করা হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। আদালতে আসা-যাওয়ার পথে বিচারপ্রার্থী জনগণ, বিচারক ও আইনজীবীবৃন্দ যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, তবে ন্যায়বিচার ব্যাহত হবে।
বৈষম্যবিরোধীর মামলার ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধনীর মাধ্যমে ১৭৩এ ধারাটি যুক্ত করার একটি ভালো উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, এই ধারাটির কিছু অপব্যবহার হচ্ছে। এই বিষয়ে প্রত্যেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
কনফারেন্সে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী, ঢাকা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. খোরশেদ মিয়া আলম, ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছানসহ পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) প্রতিনিধিবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।