পিআর পদ্ধতি চালু হলে স্বৈরাচার তৈরির পথ বন্ধ হবে: মাওলানা হলিম
Published: 9th, October 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেছেন, “পিআর পদ্ধতি চালু হলে ফ্যাসিস্ট তৈরি হওয়া বন্ধ হবে। পিআর হলে কর্তৃত্ববাদীর রাজনীতি বন্ধ হবে। পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণের অধিকার নিশ্চিত হবে। আগে যে তকমা বা ব্র্যান্ডিংয়ের রাজনীতি ছিল সেটা বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে।”
বুধবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই জাতীয় সনদ ও পিআর পদ্ধতির ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ৫ দাবিতে কুমিল্লা মহানগর জামায়াতে ইসলামী এই বৈঠকের আয়োজন করে।
আরো পড়ুন:
নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট চায় জামায়াত
‘জামায়াত সকল বাংলাদেশিকে নিয়ে সুন্দর দেশ গড়তে চায়’
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, “আমরা জনগণের স্বার্থে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব। জামায়াতে ইসলামী মনে করে, অবশ্যই গণভোট হতে হবে এবং সেটা নভেম্বরের মধ্যে হতে হবে। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একইসঙ্গে হলে বিড়ম্বনা হতে পারে। জুলাই জাতীয় সনদের আইনী ভিত্তি ছাড়া এ দেশের জনগণ নির্বাচন মানবে না বলে আমরা মনে করি।”
তিনি বলেন, “গণভোট হলে ভবিষ্যতের রাজনীতি একটি নিশ্চিত পথ পাবে। গণতন্ত্র ও দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে।”
জামায়াতের এই নেতা বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তি এক হয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাব। ৩১টি দলের মধ্যে ২৬টি দল পিআর এর পক্ষে ঐক্যমত হয়েছে। এই ২৬ টি দলের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চকক্ষ, কেউ নিম্নকক্ষ চেয়েছেন। তবে সবাই পিআর এর পক্ষে।”
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, “জামায়াতে ইসলামীকে এককেন্দ্রিক দল যারা মনে করে, সেটা এখন অতীত। জামায়াত এখন দল, মত, নির্বিশেষে সবার দল। এক্ষেত্রে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন সবার জন্য অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। আমরা বাংলাদেশে ৫৪ বছরের রাজনীতির পট পরিবর্তন করতে চাই।”
কুমিল্লা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবদুল মতিন।
কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারী মু.
ঢাকা/রুবেল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র র জন ত ইসল ম আবদ ল গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
১৭ বছর পর সাক্ষাৎকার: দেশে কবে ফিরবেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, কী বললেন তারেক রহমান
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বিবিসি বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর এই প্রথম কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন তারেক রহমান। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি কেন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি, দেশে কবে ফিরছেন, বিবিসি বাংলার এমন নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান।
তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কাদির কল্লোল। সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব আজ সোমবার সকালে প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এর দৈর্ঘ্য ৪৪ মিনিটের বেশি। সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ করা হবে আগামীকাল মঙ্গলবার।
দীর্ঘ সময় কেন কথা বলেননি
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানের কাছে বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি এই দীর্ঘ সময় কথা বলেননি কেন?
এর উত্তরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্যাপারটা বোধ হয় এ রকম না, ব্যাপারটা বোধয় একটু ভিন্ন। আসলে আমি কথা ঠিকই বলেছি। আমি দীর্ঘ ১৭ বছর এখানে আছি এই দেশে, প্রবাস জীবনে, তবে আমার ওপরে যখন দলের দায়িত্ব এসে পড়েছে তারপর থেকে আমি গ্রামে-গঞ্জে আমার নেতা-কর্মীসহ তাদের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষ যখন যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে আমি সকলের সাথে কথা বলেছি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় আদালত থেকে রীতিমতো একটা আদেশ দিয়ে আমার কথা বলার অধিকারকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি যদি গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাইতাম, হয়তো গণমাধ্যমের ইচ্ছা ছিল ছাপানোর, গণমাধ্যম সেটি ছাপাতে পারত না।’
এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, তিনি একবার প্রেসক্লাবে কথা বলেছিলেন। পরের দিন প্রেসক্লাবের তখনকার কমিটি একটি বৈঠক ডেকে একটি সিদ্ধান্ত নেয়। তারা তখন তাঁকে আইনের দৃষ্টিতে ফেরারি উল্লেখ করে বলেছিল, এ রকম কোনো ব্যক্তিকে তারা প্রেসক্লাবে কথা বলতে দেবে না। এভাবে তাঁর কথা বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল।
তবে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি কথা বলেছি, সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন পন্থায় আমি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি, আমি ইনশা আল্লাহ পৌঁছেছি মানুষের কাছে। কাজেই গণমাধ্যমে যে কথা বলিনি, তা না। আমি কথা বলেছি। হয়তো আপনারা তখন কথা নিতে পারেননি অথবা শুনতে পারেননি। ইচ্ছা থাকলেও ছাপাতে পারেননি, হয়তো প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু আমি বলেছি, আমি থেমে থাকিনি।’
দেশে কবে ফিরবেন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। তাঁর কাছে বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, কেন তিনি এখনো দেশে ফেরেননি?
এর জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘কিছু সংগত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে ওঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশা আল্লাহ, দ্রুতই ফিরে আসব।’
কবে ফিরতে পারেন, জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, ‘দ্রুতই মনে হয়। দ্রুতই, ইনশা আল্লাহ।’
আগামী নির্বাচনের আগে দেশে ফিরবেন, এমন সম্ভাবনার কথা বলা যায় কি না—বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্ন করে।
তারেক রহমান উত্তরে বলেন, ‘রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নির্বাচনের সঙ্গে রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রোত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে জনগণের প্রত্যাশিত একটি নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব? আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে, জনগণের সঙ্গে জনগণের মধ্যেই থাকব, ইনশা আল্লাহ।’
বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময়ে তারেক রহমানের দেশে না ফেরার পেছনে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা বলেছেন। তিনি কোনো ধরনের শঙ্কাবোধ করেন কি না, সেটি তাঁর কাছে জানতে চায় বিবিসি বাংলা।
উত্তরে তারেক রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন রকম শঙ্কার কথা আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তো শুনেছি। সরকারেরও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও তো অনেক সময় অনেক শঙ্কার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রত্যাশী হবেন কি
বিবিসি বাংলা তারেক রহমানের কাছে জানতে চেয়েছিল, আগামী নির্বাচনে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীপদের প্রত্যাশী হিসেবে দেখা যাবে কি না। উত্তরে তিনি বলেন, যেখানে জনগণের সম্পৃক্ত একটি নির্বাচন হবে, সেখানে তো অবশ্যই তিনি নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন না। তাঁকে আসতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠেই থাকবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রত্যাশী হবেন কি না—এ বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘দেখুন আমি মনে করি, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না। এটি সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশের জনগণ।’
বিবিসি বাংলার সাংবাদিকেরা বলেন, আপনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত তো আপনাকে নিতে হবে।
তখন তারেক রহমান বলেন, সেটা তো অবশ্যই নেব। কেন নেব না?
তাহলে আপনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন—বিবিসি বাংলার এই প্রশ্নে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘জ্বি, ইনশা আল্লাহ।’
এরপরের প্রশ্ন ছিল, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে বা নির্বাচনে অংশ নেয়, সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীপদের প্রত্যাশী হিসেবে তারেক রহমানকে দেখতে যাবে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়?
এই প্রশ্নে তারেক রহমানের জবাব, ‘এটির সিদ্ধান্ত তো বাংলাদেশের জনগণের।’
তখন বিবিসির খণ্ড প্রশ্ন ছিল, বিএনপির পক্ষ থেকে?’
তারেক রহমান উত্তর দেন, সে ক্ষেত্রে তো এটি দল সিদ্ধান্ত নেবে। দল কীভাবে করবে, এটি তো দলের সিদ্ধান্ত।