এবার দুর্গাপূজায় বড় অঘটন হয়নি, তবে সরকারের পদক্ষেপে আয়োজকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়
Published: 13th, October 2025 GMT
এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসাহ–উদ্দীপনায় উদ্যাপিত হলেও কোনো কোনো প্রতিমার অবয়বে অশুভশক্তির প্রকাশে শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অসচেতনতাকে কেন্দ্র করে সরকারের আইনি পদক্ষেপ পূজার আয়োজক ও প্রতিমাশিল্পীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক তৈরি করেছিল বলে জানিয়েছে পূজা উদ্যাপন পরিষদ।
আজ সোমবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। উপস্থিত ছিলেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহসভাপতি অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সহসভাপতি গোপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ।
সারা দেশে এবার অত্যন্ত সুন্দরভাবে পূজা উদ্যাপিত হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনের বাসুদেব ধর বলেন, এই উৎসব আয়োজনে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত আন্তরিকতা নিয়ে তাঁদের পাশে ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোরও সক্রিয় সহযোগিতা তাঁরা পেয়েছেন। এই মাটির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে যে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পথ দেখিয়েছে, এবারের উৎসব তারই ধারা বহন করতে পেরেছে।
দুর্গোৎসব শুরু হওয়ার আগে অন্তত ১৪টি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে জানিয়ে বাসুদেব ধর বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কারণে কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তরা ধরাও পড়ে। পূজার পাঁচ দিন দেশের কোথাও বড় মাত্রায় অঘটনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পূজার পরও সে রকম কোনো খবর আসেনি। সরকারের কঠোর অবস্থান, বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সক্রিয় ও সতর্ক ভূমিকা এই ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
পূজা ‘সুন্দরভাবে’ হলেও কোনো কোনো প্রতিমার অবয়বে অশুভশক্তির প্রকাশে শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অসচেতনতাকে কেন্দ্র করে সরকারের পদক্ষেপে পূজার আয়োজক ও প্রতিমাশিল্পীদের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি হয়েছিল বলে জানান বাসুদেব।
‘প্রতিমায় যে অবয়ব প্রকাশের কথা বলা হচ্ছে, তা নতুন বা হঠাৎ এ বছরই হয়েছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অতীতে অনেক প্রতিমায় তা শিল্পী বা অয়োজকেরা নানাভাবে প্রকাশ করেছেন। এবার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।বাসুদেব ধর, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতিবাসুদেব ধর বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ৫ অক্টোবর “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” হানার অজুহাতে শিল্পী, পূজারি ও আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ঘোষণার পর কিছু পদক্ষেপের কথা জানা যাচ্ছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের ও সরকারি তদন্তের কথা বলা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের পর পূজার আয়োজক ও প্রতিমাশিল্পীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে যেকোনো পূজা-পার্বণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
সরকার বিষয়টি নজরে আনার পর সম্ভাব্য অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি এড়াতে পূজা উদ্যাপন পরিষদ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল জানিয়ে বাসুদেব বলেন, ‘সরকার, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি একযোগে সমস্যাটির সমাধান করে। এতে পূজার উৎসবে ভাটা পড়েনি। অথচ পূজা শেষ হওয়ার পর বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্নধারায় প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নানাভাবে হয়রানি ও নিপীড়নের মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে একসঙ্গে কাজ করার যে নজিরবিহীন ধারাটি তৈরি হয়েছে, তা–ও গতি হারাতে পারে।’এ প্রসঙ্গে পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি আরও বলেন, প্রতিমায় যে অবয়ব প্রকাশের কথা বলা হচ্ছে, তা নতুন বা হঠাৎ এ বছরই হয়েছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অতীতে অনেক প্রতিমায় তা শিল্পী বা অয়োজকেরা নানাভাবে প্রকাশ করেছেন। এবার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন না।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ‘অস্বীকারের রাজনীতি’ দেখে আসার কথা জানিয়ে বাসুদেব ধর বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাস্তবতা এড়িয়ে সমস্যা-সংকটের অবসান হবে না। পরিসংখ্যান অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই ৫৪ বছরে হিন্দু সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ১৮ থেকে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।’
আরও পড়ুনএবার সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫ মণ্ডপ-মন্দিরে দুর্গাপূজা হবে২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পদক ষ প সরক র র প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
গুম-খুনে জড়িত সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিতের দাবি
গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানই আইনের শাসনের ঊর্ধ্বে নয় উল্লেখ করে তারা বলেছে, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কোনো প্রতিষ্ঠানের মর্যাদার অবমাননা নয়; বরং এটি দায়িত্বশীলতা, পেশাদারত্ব ও গণতান্ত্রিক চরিত্রের প্রকাশ। তাই আমরা সেনা নেতৃত্ব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, অপরাধীদের তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ায় পূর্ণ সহযোগিতা করুন।’
আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশের সভাপতি তামজিদ হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ছাত্র ইউনিয়ন গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সেনা, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও এখন পর্যন্ত তাঁদের গ্রেপ্তার কার্যকর করা হয়নি। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও তাঁর শাসনামলের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধেও গুম-খুন, নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অভিযোগে তদন্ত শুরু হলেও বিচারপ্রক্রিয়া দৃশ্যমান নয়। এই বিলম্ব ও দীর্ঘসূত্রতা জনগণের ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা নষ্ট করছে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে আরও প্রলম্বিত করছে।’
ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেছেন, ‘আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল না; এটি ছিল অন্যায়, স্বৈরশাসন ও রাষ্ট্রীয় দমননীতির বিরুদ্ধে জনগণের ঐতিহাসিক প্রতিরোধ। সেই অভ্যুত্থানের পর জনগণ একটি ন্যায়ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্নে একত্র হয়েছে। কিন্তু বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে সংঘটিত গুম, খুন ও নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারে রাষ্ট্রীয় গাফিলতি সেই স্বপ্নকে বিপন্ন করছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘গুম কমিশনের প্রতিবেদনে ইতিমধ্যে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি গুমের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমজীবী মানুষ, নারী ও শিশুরা। সেনাবাহিনী, র্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রচ্ছায়ায় “আয়নাঘর”সহ গোপন বন্দিশালায় সংঘটিত এসব অপরাধ মানবতার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই নৃশংসতায় শেখ হাসিনা সরকার ও সংশ্লিষ্ট সামরিক-পুলিশ কর্মকর্তারা সরাসরি দায়ী। গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করেনি, বরং জনগণের ন্যায্য আন্দোলন দমনে ইচ্ছাকৃতভাবে গণবিরোধী অবস্থান নিয়ে জুলুম করেছে।’