যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনোচ। এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, টিউলিপের ব্যবহার করা সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।

বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প থেকে টিউলিপের পরিবার ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে-সংক্রান্ত তদন্তে তাঁর নামও এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে টিউলিপকে বরখাস্তের আহ্বান জানালেন যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির নেতা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) আজ রোববার দেওয়া এক পোস্টে ব্যাডেনোচ বলেন, মন্ত্রী টিউলিপকে বরখাস্ত করার সময় এসেছে কিয়ার স্টারমারের।

ব্যাডেনোচ আরও বলেন, কিয়ার স্টারমার তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধুকে (টিউলিপ) দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আর তিনি (টিউলিপ) নিজেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত।

ব্যাডেনোচের এই আহ্বানের আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্যের সানডে টাইমস পত্রিকাকে বলেছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লন্ডনের সম্পত্তিতে টিউলিপের বসবাস করার খবর আসার পর তাঁর (টিউলিপ) ক্ষমা চাওয়া উচিত।

মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেছেন, টিউলিপের ব্যবহার করা সম্পত্তিগুলো নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং ‘ডাহা ডাকাতির’ মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকলে তা সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া উচিত।

টিউলিপ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের (ট্রেজারি) অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। মন্ত্রী হিসেবে দেশটির আর্থিক খাতের অপরাধ-দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব তাঁর।

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ। শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন।

শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সম্পত্তি টিউলিপের ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি টিউলিপ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি (রেফারেল) লিখেছেন। মন্ত্রীদের আচার-আচরণ, নীতিনৈতিকতা বিষয়ে ম্যাগনাস যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দিয়ে থাকেন।

ম্যাগনাসকে দেওয়া রেফারেলে টিউলিপ বলেছেন, তাঁর অবস্থান স্পষ্ট যে তিনি অন্যায় কিছু করেননি।

আরও পড়ুনমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের ‘বিকল্প বিবেচনা’ করছে যুক্তরাজ্য সরকার১০ জানুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছে যে ম্যাগনাস এখন আরও তদন্তসহ আরও পদক্ষেপের প্রয়োজন কি না, তা নির্ধারণে একটি ‘তথ্য অনুসন্ধান’ পরিচালনা করবেন।

কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ব্যাডেনোচ তাঁর এক্স পোস্টে বলেছেন, যুক্তরাজ্য সরকার যে আর্থিক সমস্যা তৈরি করেছে, তা মোকাবিলায় যখন তার মনোযোগী হওয়া উচিত, তখন টিউলিপ মনোযোগ নষ্টের কারণ হয়ে উঠেছেন। এখন বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে টিউলিপের যোগসূত্র নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

কিয়ার স্টারমার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মন্ত্রী টিউলিপের ওপর তাঁর আস্থা আছে। টিউলিপ নিজে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে সঠিক কাজ করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে সাবেক কাউন্সিলরের মৃত্যু

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়েছে। পরিবার বলছে, পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। তবে পুলিশ বলছে, তারা অন্য কাজে এলাকায় গিয়েছিল, ওই কাউন্সিলরকে ধরতে যায়নি। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে নগরের দাসপুকুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া ওই কাউন্সিলরের নাম কামাল হোসেন (৫৫)। তিনি নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং দাসপুকুর এলাকার বাসিন্দা। একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তবে দলে তাঁর কোনো পদ–পদবি ছিল না।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কামাল হোসেনের নামে চারটি মামলা হয়। তিনি এলাকায় থাকলেও গা ঢাকা দিয়ে থাকতেন। পরিবারের ধারণা, মামলা থাকায় পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে কিংবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

কামালের ছেলে সোহান শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে আমাদের এলাকায় পুলিশ এসেছিল। পুলিশ দেখে আমার বাবা তবজুল হক নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠতে যান। তখন সিঁড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মারা যান।’

নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। তিনি আত্মগোপনে থাকতেন। শুনেছি রাতে তিনি মারা গেছেন।’

ওসি বলেন, রাতে দাসপুকুর এলাকায় পুলিশ গিয়েছিল। তবে কামালকে ধরতে যায়নি। পুলিশ গিয়েছিল অন্য কাজে। কিন্তু পুলিশ দেখে পালাচ্ছিলেন কামাল হোসেন। তখন হৃদ্‌রোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। লাশ পরিবারের কাছেই আছে। তারা দাফনের ব্যবস্থা করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ