হঠাৎ শ্বাসকষ্টের ১০ কারণ, করণীয়
Published: 13th, January 2025 GMT
অ্যাজমা বা হাঁপানি তীব্র হলে দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি হয়। হাঁপানির লক্ষণগুলোর আকস্মিক তীব্রতার ক্ষেত্রে সংকুচিত শ্বাসনালি শক্ত ও সরু হয়ে যায়, শ্বাসনালির আস্তরণ ফুলে যায় এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শ্লেষ্মা তৈরি হয়। ফলে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, কাশি, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, বুকে চাপ, একটা পুরো বাক্য একনিশ্বাসে বলতে না পারা ও শ্বাসের সঙ্গে শোঁ শোঁ শব্দ হয়। এ সময় দ্রুত চিকিৎসা হিসেবে নেবুলাইজেশন, অক্সিজেন, স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। হঠাৎ শ্বাসকষ্টের আরও ৯টি কারণ তুলে ধরা হলো—
সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ: ফুসফুসের প্রদাহজনিত দীর্ঘমেয়াদি রোগ। ধূমপায়ীদের এটি বেশি হয়। এ ছাড়া বায়ুদূষণ, ধুলাবালু, অস্বাস্থ্যকর জীবন ও পরিবেশ এর জন্য দায়ী। কোনো সংক্রমণের কারণে এ রোগে হঠাৎ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে, অতিরিক্ত শ্লেষ্মা বা কফ তৈরি হয়, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় এবং ঠোঁট নীলাভ বা কালচে হতে পারে।
পালমোনারি এম্বোলিজম: এতে ফুসফুসের এক বা একাধিক ধমনিতে রক্ত জমাট বাঁধায় ব্লকের সৃষ্টি হয়। সাধারণত এর উৎপত্তি পায়ের গভীর শিরায় রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধা (ডিভিটি) থেকে। ডিভিটি হলে জমাট বাঁধা রক্ত ছুটে গিয়ে ফুসফুসের রক্তনালি ব্লক করে দিতে পারে। ডিভিটির কারণগুলোর অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি শয্যাশায়ী রোগী, ক্যানসারের রোগী, যেকোনো বড় অস্ত্রোপচারের পর যেমন হাঁটু প্রতিস্থাপন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন, দীর্ঘ ভ্রমণ। আক্রান্ত ব্যক্তির হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
নিউমোনিয়া: বিভিন্ন জীবাণু নিউমোনিয়ার কারণ। ফুসফুসের ছোট ছোট বায়ুথলিতে জীবাণুর সংক্রমণে এই প্রদাহের সৃষ্টি হয়। শীতকালে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। জ্বর, কাশি, হলুদ বা সবুজ রঙের শ্লেষ্মা (কফ), শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হয়। পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।
পালমোনারি ইডিমা: ফুসফুসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তরল জমলে বলা হয় পালমোনারি এডিমা। করোনারি আর্টারি ডিজিজ, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, হার্ট ভাল্ভের সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য কারণে তরল জমতে পারে। এতে রোগীর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়।
নিউমোথোরাক্স: এ ক্ষেত্রে দুই প্লুরা (ফুসফুসের পর্দা) আবরণীর মাঝের অংশে বায়ু প্রবেশ করে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, যার ফলে বুকে চাপ বাড়ে। পরিচিত উপসর্গ হলো হাঁপ লাগা ও বুকে ব্যথা। জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।
ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস: সাধারণত টাইপ ১ ডায়াবেটিক রোগীদের বিপাকজনিত সমস্যায় শরীরে সুগার ও কিটোঅ্যাসিড অনেক বেড়ে যায়। তখন পানিশূন্যতার সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন ঘন হয়, মুখ থেকে গন্ধ বের হয় ও ইলেকট্রোলাইট গোলমাল ঘটে। ঠিক সময় চিকিৎসা না করলে মৃত্যু হয়।
প্যানিক ডিজঅর্ডার: মনোজাগতিক এ রোগে মনে হবে মারা যাচ্ছেন, ঘাম হয়, মাথা ঘোরে। বমিভাব ও পেটের ভেতরে অস্বস্তি হতে পারে। বুকব্যথা ও নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়। হাত-পা কাঁপতে পারে।
এনাফাইলেক্সিস: পোকামাকড়ের কামড়, বাহ্যিক পদার্থ কিংবা ওষুধের কারণে মারাত্মক অ্যালার্জি হয়ে শ্বাসনালি ও স্বরযন্ত্র হঠাৎ সংকুচিত হয়ে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
শ্বাসনালিতে বাহ্যিক পদার্থ প্রবেশ: বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
অধ্যাপক ডা.
এ কে এম মূসা, মেডিসিনবিশেষজ্ঞ, আলোক, হেলথকেয়ার, মিরপুর ১০, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রেন ক্যানসারের যে ৭টি লক্ষণ আমরা সাধারণ ভেবে এড়িয়ে যাই
শুরুতে উদাহরণ হিসেবে যেসব লক্ষণের কথা জানলেন, ব্রেন ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের শুরুতে একই রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে সমস্যা হলো, এসব লক্ষণ আর সাধারণ মাথাব্যথা বা ক্লান্তির মধ্যে পার্থক্য বোঝা সত্যিই কঠিন।
দীর্ঘদিন ব্রেন ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাজ্যের লরা স্ট্যান্ডেন। এই রোগে আক্রান্ত অনেক রোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে—রোগীরা নিজেরা প্রথম দিকে এসব উপসর্গকে গুরুত্ব দেননি।
এমনকি চিকিৎসকেরাও অনেক সময় ব্যাপারটা হালকাভাবে নিয়েছেন। ফলে রোগ শনাক্ত হতে দেরি হয়ে গেছে।
আর এই দেরি কিন্তু মারাত্মক। কারণ, ক্যানসার যত দেরিতে ধরা পড়ে, চিকিৎসাও তত জটিল ও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।
আসল সমস্যা হলো মস্তিষ্কের ক্যানসারের উপসর্গ অনেকটা আমাদের দৈনন্দিন সমস্যার মতোই। ক্লান্তি, মানসিক চাপ, মাইগ্রেন, এমনকি মেনোপজের সময়ের সমস্যার সঙ্গেও এর মিল আছে।
আবার অনেক সাধারণ রোগের লক্ষণও প্রায় একই রকম। যেমন দুশ্চিন্তা, সাইনাসের সমস্যা বা দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা।
যখন লক্ষণগুলো অস্পষ্ট আর হালকা থাকে, তখন সেসব উপেক্ষা করা সহজ হয়ে যায়। নিজের মনেই নানা যুক্তি খুঁজে নিই আমরা। তাই অনেকে অপেক্ষা করেন আর ভাবেন, দেখা যাক, সমস্যাটা কত দূর গড়ায়।
অনেকে ব্রেন ক্যানসার হওয়ার দুই-তিন মাস আগে থেকেই লক্ষণ টের পান। কিন্তু সাধারণ সমস্যা ভেবে তা উড়িয়ে দেন। এতে সমস্যা আরও জটিল হয়ে যায়।
এবার জেনে নিই সেই ৭টি সমস্যা সম্পর্কে, যেসব আমরা সাধারণ সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করি। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, এসব লক্ষণের মধ্যে একটা বা দুটো থাকলেই যে কারও ব্রেন ক্যানসার হয়েছে, তা কিন্তু নয়। তবে কোনো সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকলে কিংবা একদম অস্বাভাবিক মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
আরও পড়ুনরাতের এই অভ্যাসের কারণে মস্তিষ্ক যেভাবে দ্রুত বুড়িয়ে যায়১১ নভেম্বর ২০২৪১. কথা খুঁজে না পাওয়াঅনেকে হঠাৎ করে নির্দিষ্ট শব্দ মনে করতে পারেন না। পুরো বাক্য বলতে গেলে আটকে যান। কথোপকথনে অংশ নিতে গেলে একটু দেরি হয়।
শব্দ খুঁজে না পাওয়ার সমস্যা অবশ্য ক্লান্তি, মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণেও হতে পারে। কিন্তু যদি এই সমস্যা দীর্ঘদিন থাকে, কিংবা হঠাৎ করে শুরু হয়, তাহলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার।
২. মানসিক ধোঁয়াশাঅনেকের মনে হয়, যেন মাথার ভেতর কুয়াশা জমে আছে। মনোযোগ দিতে পারছেন না, পরিষ্কার করে ভাবতে পারছেন না, কিছু মনে থাকছে না। ফলে রোগ ধরা পড়তে আরও দেরি হয়ে যায়।
এই মাথার ঘোলাটে ভাব অবশ্য অনেক কারণেই হতে পারে। মেনোপজ, ঠিকমতো ঘুম না হওয়া কিংবা মানসিক চাপ। কিন্তু যদি এই ঘোলাটে ভাবের সঙ্গে আরও কিছু স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন কথা বলতে বা দেখতে সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তনও ব্রেন ক্যানসারের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে