দক্ষিণ কোরিয়ার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রেসিডেন্টের বেতন বাড়ল, জনগণের প্রশ্ন কীভাবে
Published: 13th, January 2025 GMT
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের বার্ষিক বেতন বাড়ানো হয়েছে। দেশটির সরকার গতকাল রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০২৫ সালের জন্য ইউনের বেতন আগের বছরের (২০২৪ সাল) চেয়ে ৩ শতাংশ বাড়িয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রায় ২৬২ দশমিক ৬ মিলিয়ন (২৬ কোটি ২৬ লাখ) করা হয়েছে। মার্কিন ডলারের হিসাবে তা ১ লাখ ৭৯ হাজার।
সবাইকে হতবাক করে দিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেছিলেন ইউন। কিন্তু তীব্র প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে মাত্র ছয় ঘণ্টার মাথায় তিনি তা প্রত্যাহারে বাধ্য হন।
স্বল্পস্থায়ী এই সামরিক আইন জারির জেরে গত ১৪ ডিসেম্বর ইউনকে দেশটির পার্লামেন্টে অভিশংসন করা হয়। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
রাষ্ট্রদ্রোহ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শুরু হয় ফৌজদারি তদন্ত। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারীদের তলবে হাজির হতে ইউন অস্বীকৃতি জানান। এর জেরে গত ৩১ ডিসেম্বর ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন দেশটির একটি আদালত।
ইউনকে গ্রেপ্তারে ৩ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের বাসভবন কমপ্লেক্সে যান দেশটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি তদন্ত কার্যালয়ের (সিআইও) কর্মকর্তারা। তাঁদের সঙ্গে ছিল পুলিশ। কিন্তু প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বাহিনীর (প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস-পিএসএস) বাধার কারণে ইউনকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হন তদন্তকারীরা।
ইউনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মেয়াদ ৬ জানুয়ারি শেষ হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মেয়াদ আদালত বাড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত ইউনের অভিশংসন বহাল রাখলে তাঁকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা যাবে। ফলে তাঁর ভাগ্য ঝুলে আছে সাংবিধানিক আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর। সাংবিধানিক আদালতের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তিনি পদে বহাল থাকছেন। তবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় আছেন তিনি।
ইউন সামরিক আইন জারির যৌক্তিকতা তুলে ধরতে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি ও প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার হুমকির কথা বলেছিলেন। কিন্তু দ্রুতই স্পষ্ট হয়, বাহ্যিক কোনো হুমকির কারণে তিনি সামরিক আইন জারি করেননি। বরং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা সামাল দিতে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
ইউনের বেতন বাড়ানোর খবর দক্ষিণ কোরিয়ায় সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশটির নাগরিকদের কেউ কেউ বলেছেন, তাঁরা বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় ইউন এখনো বেতন পাচ্ছেন। আর ইনক্রিমেন্ট তো দূরের কথা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ বলছেন, ইউনের বার্ষিক ৩ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি দেশটির ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির প্রায় দ্বিগুণ।
এক্সে (সাবেক টুইটার) এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যেখানে মানুষের বার্ষিক ন্যূনতম মজুরি বেড়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে ইউনের বেড়েছে ৩ শতাংশ। তাঁর এই বেতন বৃদ্ধি কিসের জন্য?’
এক্সে দেওয়া এই পোস্টে হাজার হাজার ‘লাইক’ পড়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।”
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে।
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
ঢাকা/এএএম/রফিক