পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের সরিয়ে যে ছবি নিজের কার্যালয়ে বসালেন ভারত
Published: 14th, January 2025 GMT
নয়াদিল্লির রাইসিনা হিলে নিজ কার্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরে ভারতের কাছে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের আইকনিক ছবিটি সরিয়ে ফেলেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদি। ওই জায়গায় ‘কর্ম ক্ষেত্র’ নামে নতুন একটি চিত্রকর্ম বসানো হয়েছে। এমন পদক্ষেপ সাবেক অনেক সেনাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সোমবার ছবি সরানোর বিষয়ে কথা বলেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদি।
এনডিটিভি অনলাইন জানিয়েছে, পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ছবিটি সেনাপ্রধানের অফিসের লাউঞ্জের দেয়ালেই থাকত। গত বছরের ডিসেম্বরে দপ্তরে সংস্কারের কাজের জন্য ছবিটি নামিয়ে নেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে ছবিটি আর সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনা হয়নি। ওই ছবিটি পাঠানো হয় মানেকশ কনভেনশন সেন্টারে। আর তার জায়গায় সেনাপ্রধানের কার্যালয়ের লাউঞ্জে একটি নতুন শিল্পকর্ম বসানো হয়।
এই পদক্ষেপের সমর্থনে সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেছেন, “আপনি যদি ভারতের সোনালি ইতিহাস দেখেন - এর তিনটি অধ্যায় রয়েছে- ব্রিটিশ যুগ, মুঘল যুগ এবং তার আগের যুগ। আমরা যদি এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর লক্ষ্য সংযুক্ত করতে চাই, তাহলে প্রতীকগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।”
প্রজন্মগত পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নতুন পেইন্টিংটি ২৮ মাদ্রাজ রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল টমাস জ্যাকব তৈরি করেছেন, যিনি বাহিনীর তরুণ প্রজন্মের সদস্য।”
ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, “কর্ম ক্ষেত্র নামে নতুন চিত্রকর্মের অর্থ ‘ফিল্ড অব ডিডস’ বা ‘কর্মের ক্ষেত্র’। এটি সেনাবাহিনীকে ধর্মের রক্ষক হিসেবে এমনভাবে চিত্রিত করে, যা জাতির মূল্যবোধ রক্ষা এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সমন্বিত শক্তিতে তার বিবর্তনের প্রতিফলন।”
ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেন, “বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করেই নতুন চিত্রকর্মটি তৈরি করা হয়েছিল।”
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তাজউদ্দীন আহমদ দলমতের ঊর্ধ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক: শারমিন আহমদ
স্বাধীনতাযুদ্ধকে যখন শুধু আওয়ামী লীগিকরণ করা হচ্ছিল, তখন তাজউদ্দীন আহমদ সেটার বিরোধিতা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর কন্যা শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ শুধু আওয়ামী লীগের নয়। উনি পুরো জাতির। তাজউদ্দীন আহমদ দলমতের ঊর্ধ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক।
আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা-২০২৫’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শারমিন আহমদ। সেখানেই তিনি এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে কথা বলেন শারমিন আহমদ। তিনটি শর্তের ওপর ভিত্তি করে এই চুক্তি হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সে সময় তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, স্বীকৃতি বাদে বন্ধুত্ব হয় না। সেই স্বীকৃতি হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। সে সময় তাজউদ্দীন আহমদ ভারতীয় সেনাবহিনীর একক কমান্ডে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘না, এটি যৌথ কমান্ডের ভিত্তিতে হবে। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।’
আরও পড়ুনজন্মদিনে ডায়েরিতে যা লিখেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ২৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনতাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ২৮ জুলাই ২০২৫শারমিন আহমদ বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ প্রতিরোধ না করলে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের চুক্তিপত্রে লেখা থাকত ভারতের কাছে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার যখনই মনে করবে, তখনই ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে, এটিই ছিল তৃতীয় শর্ত বলে জানান শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ওই শর্তের ভিত্তিতেই ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাবর্তনের জন্য বলেন।
আরও পড়ুনতাজউদ্দীন আহমদ: রোজনামচার মানুষটিকে বোঝা২৩ জুলাই ২০২৫অনুষ্ঠানে হতাশা প্রকাশ করে শারমিন আহমদ বলেন, এসব ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এসব ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়নি বলেই ভারতীয়রা এ দেশ স্বাধীন করেছে, এমন বয়ান তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এটা খুব লজ্জার ব্যাপার। এই তথ্যগুলো নিয়ে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে হবে। কেননা, গৌরবমণ্ডিত ইতিহাস সংরক্ষণ না করা হলে জাতি আরও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্মারক বক্তা ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। তাঁর বর্ক্তৃতার শিরোণাম ছিল ‘তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি : ঐতিহাসিকতা ও রাজনৈতিকতা।’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।