পরিবেশকদের পদচারণায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে উৎসবমুখর পরিবেশ
Published: 16th, January 2025 GMT
গাজীপুরের চন্দ্রায় দেশ সেরা ব্র্যান্ড ওয়ালটনের হেডকোয়ার্টার্সে চলছে ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের ‘পার্টনারর্স টুগেদার-২০২৫’ শীর্ষক সম্মেলন।
সম্মেলনে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওয়ালটনের এক হাজারেরও বেশি ডিস্ট্রিবিউটর, বিক্রয় প্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে এসেছেন। তাদের পদচারণায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্স প্রাঙ্গণে তৈরি হয়েছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি, ২০২৫) সকালে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে বেলুন উড়িয়ে ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের সম্মেলন উদ্বোধন করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম।
সম্মেলন উপলক্ষে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে তৈরি করা হয়েছে সুবিশাল সম্মেলন কক্ষ। নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য মঞ্চ। বর্ণিল ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে পুরো হেডকোয়ার্টার্স। সম্মেলনে আগত ডিস্ট্রিবিউটররা এতে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার সকালে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের এক হাজারেরও বেশি ডিস্ট্রিবিউটর, বিক্রয় প্রতিনিধি এবং কর্মকর্তারা হেডকোয়ার্টার্স প্রাঙ্গণে আসেন। অতিথিরা হেডকোয়ার্টার্সে অত্যন্ত উৎসাহ ও আনন্দ নিয়ে ওয়ালটনের বিভিন্ন পণ্যের ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টস পরিদর্শন করেন। তারা ওয়ালটনের বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আন্তর্জাতিকমানের ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টস দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত আছেন ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এএমডি) ও চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) মো.
সম্মেলন সঞ্চালনা করছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক এবং ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিন খান। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং র্যাফেল ড্র-এর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের দিনব্যাপী এই সম্মেলন।
ঢাকা/ইভা
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
মানুষের হৃদয়ে ঈমানের আগুন জ্বালানোর প্রয়াসে শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (১৮৮৫-১৯৪৪) গড়ে তুলেছিলেন জামায়াতে তাবলিগ, যা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের এক অপূর্ব নজির। তাঁর বাণী ও উপদেশের সংকলন ‘মালফুজাত’ নামে আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, যা তাঁর দাওয়াতি দর্শন ও তরবিয়তি পদ্ধতির এক জীবন্ত দলিল। দামেস্কের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থ, শায়খ আদিল হাররাজি আল-ইয়ামানি আন-নাদভির তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত, তাবলিগ জামায়াতে মূল দর্শনের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু মুহাম্মদ ইলিয়াসের বাণীর সংকলন নয় বরং একটি ঐতিহাসিক ও দাওয়াতি দলিল, যা আধুনিক ইসলামি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।
‘মালফুজাত’-এর শিক্ষা
শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াসের মজলিস মালফুজাত সংরক্ষণ করেছেন তাঁর শিষ্য মুহাম্মদ মানজুর। তাবলিগ জামায়াতে ছয়টি মূলনীতি—কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকর, ইকরামুল মুসলিমিন, ইখলাস ও নিয়ত এবং আল্লাহর পথে বের হওয়ার ভিত্তিতে গ্রন্থটি রচিত। তিনি তাওহিদকে (আল্লাহর একত্ব) নাজাতের মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাওহিদের দুর্বলতা মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ’। তিনি ফরজ ইবাদতের প্রাধান্য, জিকিরের প্রাচুর্য এবং তাকওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফরজগুলোর মর্যাদা নফলের চেয়ে অনেক উঁচুতে। নফলের উদ্দেশ্য ফরজগুলোর ঘাটতি পূরণ করা’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
তাঁর দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল সরল কিন্তু গভীর। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা তাবলিগের একটি বৈশিষ্ট্য। তিনি রিয়া (লোকদেখানো) ও বিতর্ক এড়ানোর পরামর্শ দেন, বলেন, ‘ইখলাস (খাঁটি আল্লাহর জন্য) ছাড়া কোনো কাজ কবুল হয় না।’ তাঁর দৃষ্টিতে, দাওয়াতের লক্ষ্য হলো আল্লাহর আদেশকে মানুষের স্বভাবে পরিণত করা, যাতে নিষিদ্ধ কাজ তার কাছে অপছন্দনীয় হয়। তিনি জিকিরকে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করতেন।
শায়খ ইলিয়াসের দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল তাওয়াজ্জুহ বা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের পরিবর্তে তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও ইখলাসের ওপর কেন্দ্রীভূত। তিনি জটিল তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে সরল নসিহতের ওপর জোর দিতেন। তাঁর মতে, দাওয়াত হবে এমন, যেন ‘আল্লাহর আদেশ মানুষের স্বভাব হয়ে যায়’। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে তুলনা করতেন সাহাবিদের ত্যাগের সঙ্গে, যা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি আনে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াতে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ফরজ, কিন্তু কতজন এই ফরজ পালন করে?’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫ঐতিহাসিক পটভূমি
মুহাম্মদ ইলিয়াস ভারতের কান্ধলায় একটি আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেওবন্দি সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে তাঁর শৈশব কাটে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, সাধারণ মুসলিমদের ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তাঁর দাওয়াতি চিন্তার পটভূমি। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মুসলিমদের সংস্কার করতে পারবে না। তাই তিনি একটি জনগণভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত আন্দোলন শুরু করেন, যেখানে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দাওয়াতে অংশ নেয়। তিনি নবীর (সা.) মক্কার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষকে দাওয়াত দিতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মক্কায় তাওয়াফ করে মানুষকে হকের দাওয়াত দিতেন’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
গ্রন্থের গঠন ও সম্পাদনা
মালফুজাত তাঁর মজলিসের সংকলন হলেও এটি একটি সুশৃঙ্খল দাওয়াতি দলিল। সম্পাদনা করেছেন আবুল হাসান আলী নাদভি (রহ.)-এর শিষ্য শেখ আদিল হাররাজি। মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী, ড. খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি ও নূরুল হাসান রাশিদ কান্ধলভী প্রমুখের মতো পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইসলামবেত্তাদের ভূমিকা গ্রন্থটিকে মহামূল্য করে তুলেছে। তাদের ভূমিকাগুলো গ্রন্থের দাওয়াতি ও ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝতে সাহায্য করবে। আলী নাদভির সঙ্গে মুহাম্মাদ ইলিয়াসের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক এবং তাবলিগের বিশ্বব্যাপী প্রভাবও এতে তুলে ধরা হয়েছে।
আজ যখন মুসলিম বিশ্ব নানা সংকটের মুখোমুখি, এই গ্রন্থ আমাদের তাওহিদ, ইখলাস ও তাজকিয়ার প্রতি ফিরে যেতে আহ্বান জানায়। এটি প্রতিটি দাঈ ও মুসলিমের জন্য একটি পাঠ্য, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।’
সূত্র: আল-জাজিরা ডটনেট
আরও পড়ুন সুরা ইউসুফের সারকথা১৫ জুলাই ২০২৪