শিক্ষার্থীদের উৎসবে আজ গাইবেন তাঁরা
Published: 17th, January 2025 GMT
ঢাকা কলেজ ও আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উৎসবের দিন আজ। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উদযাপন করতে যাচ্ছেন ঢাকা কলেজ রিইউনিয়ন ও আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২০ বছর পূর্তি। আজ মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখানের ঢালিস আম্বার নিবাস রিসোর্টে ঢাকা কলেজ রিইউনিয়নের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব সৈয়দ মাজহারুল হক সোহাগ জানান, সকাল ৮টা থেকে দিনভর চলবে এ আয়োজন। ২০০৮ সালের আগে যারা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন, তারা এতে অংশ নিচ্ছেন। স্বাগত বক্তব্য দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠান। এর পর আপ্যায়ন, গেম শো এবং সবশেষে থাকছে কালচারাল শো। সেখানে পারফর্ম করবেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি, কর্ণিয়া এবং তানযীর তুহীন ও তাঁর ব্যান্ড আভাস। এ আয়োজন অনেকের মনে ছাপ ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
অন্যদিকে গতকাল শুরু হয়েছে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২০ বছর পূর্তির আয়োজন। এ স্কুলের ৯৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসনাত জুয়েল বলেন, গতকাল প্রথম দিনের আয়োজন ছিল দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে। সেখানে পারফর্ম করেছেন হাসান ও তাঁর ব্যান্ড আর্ক। আজ হবে অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন। ১৯৫৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যারা এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন, তাদের অনেকে উপস্থিত থাকবেন। ১২০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান পর্ব শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। চলবে রাত পর্যন্ত। দিনভর থাকছে নানা আয়োজন। আর সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক পর্ব। এতে পারফর্ম করবে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড মাইলস, পাওয়ার ভয়েস তারকা সজল, তরুণ কণ্ঠশিল্পী লুইপাসহ আরও অনেকে।’
মাইলস ব্যান্ডের সদস্যরা জানান, যে কোনো মাইলফলক স্পর্শ করার মুহূর্ত নানাভাবে স্মরণীয় করে রাখা উচিত। ভালো লাগছে, আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের স্টুডেন্টরা তাদের বিশেষ মুহূর্তটিকে সুরেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছে এবং সেখানে আমরা তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারছি। সব মিলিয়ে এ আয়োজন উৎসবমুখর হয়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানের শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।